তপোময় বিশ্বাস সুপ্রাচীনকাল থেকে রাঢ় বাঙলার অংশ বিশেষ, আজ যা ঝাড়খণ্ড নামে পরিচিত৷ সেই ঝাড়খণ্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী তথা ভূমিপুত্র বাঙালী জনগোষ্ঠীর ভাগ্যাকাশে যে কালো ছায়া ঘণীভূত হয়েছে, হিন্দী সাম্রাজ্যবাদী শোষণের স্ট্রীমরোলারে নিষ্পেষিত হতে হচ্ছে,তা থেকে পরিত্রাণ স্বরুপ ‘প্রাউট’ দর্শনের আলোকে শোষণবিরোধী আন্দোলন সংঘটিত করতে ‘আমরা বাঙালী’ রাজনৈতিক সংঘটনের উদাত্ত আহবান আসন্ন (ঝাড়খণ্ড) বিধানসভা নির্বাচনে ‘আমরা বাঙালী’ প্রার্থীদের ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করুন৷
‘ঝাড়খণ্ডের’ অন্তর্গত ধানবাদ,সিংভূম (পূর্ব ও পশ্চিম), খরসোয়া, সরাইকেলা, বোকারো,জামতারা, দুমকা, গোড্ডা, দেওঘর, সাহেবগঞ্জ, পাকুড়, গিরিডি, বেরমো, গোমিও, রাজমহল, সিল্লি, বুন্দু, সোনাহাতু, তামার, গোলা, পেটারবার, জেরিডি, ডুমরি, রামগড়, গোলা, কাসমারা উক্ত বাঙালী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলি বর্তমানে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের অধীনে থাকলেও খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ এই অঞ্চলগুলি সুপ্রাচীনকাল থেকে (পশ্চিম) রাঢ় বাঙলার অংশ বিশেষ৷ ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শোষণ দীর্ঘস্থায়ী করা,রাঢ়ের বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠনের উদ্দেশ্যে বিপ্লবী বাঙালী জাতিকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ও ছিন্নমূল করতে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার রাঢ়ের এই বাঙালী অঞ্চলগুলি বিহার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে, পরবর্তীতে আজ যা ঝাড়খণ্ড রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে৷
স্বাধীনতার পরে সাম্রাজ্যবাদের তল্পিবাহকেরা ব্রিটিশের ‘‘ভাগ করো,শোষণ করো’’ নীতিকেই অনুসরণ করে চলেছে৷ আজ ঝাড়খণ্ডের ভূমিপুত্র বাঙালীদের মুখে ভাষা বাংলা ভাষা কেঁড়ে নিয়ে জোর করে হিন্দী শিখতে বাধ্য করে তাদের ওপর চরম মানসিক শোষণ চালানো হচ্ছে! স্থানীয় বাঙালীদের ভাষা-সংস্কৃতিকে অবদমন করার জন্যে বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়গুলিকে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে৷অফিস-আদালত সরকারী-বেসরকারী ঝাড়খণ্ডের সর্বত্র চরম হিন্দী আগ্রাসন৷ পুরোনো সরকারী দলিল-দস্তাবেজ বাংলাতে থাকার ঐতিহাসিক সাক্ষ্য থাকলেও বর্তমানে বাংলা ভাষায় কথা টুকু বলা যায়না৷ যে বাঙালী জাতি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে, দেশের স্বার্থে সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরিয়েছে, ঘরে ঘরে বিপ্লবীদের জন্মদিয়েছেন বাঙালী মায়েরা৷ সেই জাতির কপালে একি দূর্দশা ! হিন্দী আধিপত্য, অশ্লীল নাচ, পর্র্ণেগ্রাফি, সর্বত্র চরস-মদ-গাজার ঠেক রমরমিয়ে গজিয়ে উঠছে, বেআব্রু পোষাক এসবকিছুই অশ্লীল হিন্দী গান ও নাচের মাধ্যমে প্রচার করে বাঙালী যুব গোষ্ঠীর মননে প্রবেশ করিয়ে রাঢ়ের নিজস্ব উন্নত সংস্কৃতিতে ধবংস করে জাতিটাকে মেরুদন্ডহীন ক্লীবে পর্যবসিত করার হীন চেষ্টা চলছে৷
মাহাতো, মুণ্ডা, কোল, সদগোপ, লোধা, মালপাহাড়িয়া, ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈদ্য, বাগ্দী, ডোম, কৈবর্ত, দুলে, বাউরী, শবর, লোহার, কুর্মী, করমালি, কিসান, গোন্দ, চের ডাকরা, মাঝি প্রভৃতি এরা সবাই, এছাড়াও ২২৫ বছর আগে খাদ্যের অন্বেষণে ছত্রিশগড় বা অন্যান্য অঞ্চল থেকে পশ্চিম ও পূর্ব রাঢ়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বসতি স্থাপন করা ‘সাঁওতাল’রা আজ রাঢ় বাঙলার মূল অধিবাসী৷ এরা আজ শোষণে জর্জরিত হয়ে অশিক্ষায়, অনাহারে ধুঁকে মরছেন৷ এই মূল অধিবাসী বাঙালীদের শোষণ করছে কারা ? গুজরাট, রাজস্থান, হরিয়ানার মতন অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা বহিরাগত অবাঙালী ব্যবসায়ীরা৷ এই ভাসমান জনগোষ্ঠীরা উক্ত অঞ্চলে মূলত সিংভূম/ধানবাদ/বোকারোর মতন প্রাকৃতিক সম্পদে পূর্ণ ও শিল্পসমৃদ্ধ অঞ্চলে নিজেদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে ব্যাপক অর্থ লুট করে মুনাফা লুটে নিজের দেশে ফিরে যাচ্ছে৷ অর্থনীতির ভাষায় একে বলে ‘‘অর্থের বহিঃস্রোত’’, যা যেকোনো অঞ্চলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর অন্তরায় সৃষ্টি করে থাকে৷
প্রকৃতির অফুরন্ত ভাণ্ডার রয়েছে রাঢ়ে তথা ঝাড়খণ্ডে৷ তবু এই অঞ্চলের মানুষ দুবেলা পেট ভরে পুষ্টিকর খাদ্য খেতে পায় না! হিন্দী সাম্রাজ্যবাদ মদতপুষ্ট অবাঙালী বেনিয়াদের শোষণে রাঢ় আজ অনাহারে জীর্ণ, অজস্র প্রকার শোষণে জর্জরিত৷ এ এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য ! এই অবস্থা থেকে মুক্তির সোপান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ‘আমরা বাঙালী’ রাজনৈতিক সংঘটন৷ শোষণের অবসান হিসেবে রাঢ় তথা ঝাড়খণ্ডের ভূমিপুত্র সকল বাঙালীদের ঐক্যবদ্ধ শোষণবিরোধী আন্দোলনে সামিল করতে ‘আমরা বাঙালী’ সংঘটনের উদাত্ত আহবান রইলো৷
‘আমরা বাঙালী’র দাবী সমূহ:
ঝাড়খণ্ডের ৬৫ শতাংশের বেশী অধিবাসী বাঙালী, তাই এখানে বাংলা ভাষাকে প্রথম রাজ্যভাষা হিসেবে স্বীকৃতী দিতে হবে৷
ঝাড়খণ্ডের সমস্ত স্কুল-কলেজে মাতৃভাষা বাংলার মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে৷
কৃষিকে ‘শিল্পের মর্যাদা’ দিয়ে চাষীরা যাতে তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় তা নিশ্চিত করতে হবে৷
ঝাড়খণ্ডের ১০০ শতাংশ ভূমিপুত্র বাঙালীদের কর্মসংস্থানের নিশ্চিততা প্রদান করতে হবে৷
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ‘বাঙালী রেজিমেন্ট’ পুনর্গঠন করতে হবে৷
- Log in to post comments