মহাকুম্ভের মর্মান্তিক পরিণতি৷ অমৃত লাভের আশায় তথাকথিত ধর্মীয় উন্মাদনার পরিণতিতে কতকগুলো জীবন অসময়ে ঝরে গেল৷ অন্ধবিশ্বাস ও ভাবজড়তায় আচ্ছন্ন জীবনের শেষ পরিণতি কি এভাবেই হয়! আমরা উচ্চকন্ঠে ডিজিটাল ভারতের কথা বলি৷ আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষকে একাত্ম করে তুলতে কত আবেদন নিবেদন, কত বিজ্ঞাপনের বহর৷
পাশাপাশি গোবর গোমুত্র পান থেকে শুরু করে নানা বাস্তব বর্জিত শাস্ত্রীয় বিধান শুনিয়ে মানুষকে তথাকথিত ধর্মমতের হুজুগে মাতিয়ে রাখাও কি ডিজিটাল ভারতের প্রগতি? কোন অমৃতের সন্ধানে মানুষকে মাতিয়ে দিশাহীনভাবে দৌড় করিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়!
ধর্মের আড়ালে মনুষ্যত্বকে তুচ্ছ করে এই জ্ঞানহারা ভাবাবেশ ও বিহ্বলতার শেষ কোথায়? মানুষকে ভাবজড়তা ও কুসংস্কার মুক্ত করে প্রকৃত ধর্মের পথে চালিত করতে হবে৷ তবেই শেষ হবে এই যুক্তিহীন, অর্থহীন, ধর্মমতের উন্মাদনা৷ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিপরীতটাই করা হচ্ছে৷ মানুষকে সংকীর্ণ স্বার্থে ভাবজড়তা ও কুসংস্কারকে আঁকড়ে ধরতে ধর্মের দোহাই দিয়ে উৎসাহিত করা হয়৷
মানুষের জীবনে মেলা উৎসবের প্রয়োজন অবশ্যই আছে৷ মানুষ তো শুধু দেহ সর্বস্ব জীব নয়৷ মানুষের যেমন ভৌতিক দিক আছে, আবার ভৌতিক মানসিক দিক আছে, মানসিক দিক আছে, মানস-আধ্যাত্মিক দিক আছে৷ এই সবের সমন্বয়েই একজন সম্পূর্ণ মানুষ৷ কিন্তু মানুষ যতটা ভৌতিক জীবন নিয়ে সচেতন, জীবনের বাকী দিকগুলো নিয়ে ততটা সচেতন নয়৷ বরং বলা যায় রাষ্ট্রযন্ত্র ও ধর্মব্যবসায়ীরা ইচ্ছাকৃতভাবেই মানুষকে অচেতন রেখে মানসিকতায় ঢুকিয়ে দিয়েছে, ভাবজড়তা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিষাক্ত বীজ৷ সেই বিষে জর্জরিত শাস্ত্রকারাগারে বন্দী মানুষ পুণ্য সঞ্চয়ের লোভে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে ত্রিবেণী সঙ্গমে মরণ ঝাঁপ দিতে উদ্যত৷ এরই মর্মান্তিক পরিণতির সাক্ষী থাকলো এবারের কুম্ভমেলা৷ এই পরিণতির বলি না হয়ে যারা নিরাপদে ঘরে ফিরে এলো তাদের ধর্মের ভাণ্ডারে কি পুন্য সঞ্চয় হলো!
আয়োজকদের গাফিলতিও ক্ষমার যোগ্য নয়৷ যারা এত মানুষকে তথাকথিত ধর্মীয় উন্মাদনায় উন্মত্ত করতে পারে তাদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাও অবশ্য থাকা চাই৷ থাকলেও তার সদ্ব্যবহার হয়নি৷ আসলে ধর্মের আড়ালে পুন্য সঞ্চয়ের ধুয়ো তুলে যাদের লক্ষ্য ব্যবসা ও অর্থ উপার্জন, মানুষের জীবনের মূল্য তাদের কাছে খুবই নগণ্য৷ কিন্তু মানুষ কবে বুঝবে এই ভাবোন্মাদমত্ত ভক্তি মদধারা ধর্মের পথ নয়, পুন্য সঞ্চয়ের পথ নয়৷ এ হলো মেকি ধর্মের পথ৷ মানুষের ধর্মের পথ অপূর্ণতা থেকে পূর্ণতার দিকে৷ মানুষ আর কতদিন এই বৌদ্ধিক দৈন্যতার ভার বহে বেড়াবে?
কে জানে কোন অমৃতের সন্ধানে সেদিন মরন দৌড়ে শুরু করেছিল হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে লক্ষ লক্ষ ধর্র্মেন্মাদ মানুষ৷ হায় রে মানুষ! এ কেমন ধর্মের শিক্ষা৷ যারা সামনে ধূলার উপর লুটিয়ে পড়লো পিছনের জনস্রোত তাদের দলে পিষে চলে গেল! শুধু কি কতকগুলো মানুষ পিষ্ট হলো৷ যাঁরে পাওয়ার তরে দৌড় তিনিও পিষ্ট হলেন হতভাগ্য ধর্র্মেন্মাদদের সঙ্গে কোন অমৃত পেল তারা যারা মানবিকতা বিসর্জন দিয়ে শত শত মানুষকে দুপায়ে দলে ত্রিবেণী সঙ্গমে ঝাঁপিয়ে সফল হয়ে ফিরে এলো৷ তারাই বা কি অমৃত পেল যারা পদপিষ্ট হয়ে মহাকুম্ভে মহা সমাধি লাভ করলো! না এর উত্তর কারো জানা নেই৷ কিন্তু একটা কথা সবার বোধ হয় জানা হয়ে গেছে প্রিয়জন হারানো মানুষগুলো যে যন্ত্রনা বুকে বয়ে বেড়াবে বাকী জীবন, তাকে শান্ত করার কোন অমৃত মলম তথাকথিত ধর্মের ধবজাধারীদের নেই৷
ভাবজড়তা, অন্ধবিশ্বাসের বেড়া ঘেরা আবদ্ধ জীবনের পরিণতি থেকে মানুষ মুক্তি পাবে কবে?
- Log in to post comments