ভারতে আই এসের থাবা - এই অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে সকল ভারতীয়কে সরতাজের মত দৃঢ়চেতা হতে হবে

লেখক
মুশাফির

গত ৮ই মার্চ ভারতের প্রায় সব সংবাদপত্রের শিরোনামে একটা সংবাদ আসে৷ তা হল লক্ষ্নৌয়ের সন্নিকটে ভূপাল-উজ্জয়িনী প্যাসেঞ্জারে ৭ই মার্চ যে বিস্ফোরণ ঘটে সেটা আই এসের জঙ্গীরা ঘটায়৷ এখানে পুলিশের সঙ্গে যে লড়াই হয় তাতে মারা পডে সইফুল্লাহ নামে ২০ বছরের এক যুবক৷ টানা ১২ ঘণ্টার লড়াইয়ের পর জঙ্গীটি মারা যায়৷

গত ২২শে নবেম্বর ইন্দোর-পটনা এক্সপ্রেসের ১৪টি বগি লাইচ্যুত হয়েছিল৷ সেটিও জঙ্গীদের কাজ৷ নেপালের জনৈক নাগরিক শামসুল হুদা নামে এক আই এস জঙ্গী এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিল৷ তাকে গ্রেপ্তার করা হয় কাঠমুণ্ডুতে শেষে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন, ভূপাল-উজ্জয়িনী ট্রেনের দুর্ঘটনার সঙ্গেও সে জড়িত৷ মধ্যপ্রদেশের ট্রেন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও তার নাম উঠে আসে৷ তাকে জীবিত অবস্থায় ধরার চেষ্টা হয়, কিন্তু তা নিস্ফল হয়৷ হামলার সঙ্গে জড়িত একজন বায়ুসেনা কর্মীও৷ তার বাড়ী কানপুরে৷ তার সঙ্গে আরও তিনজনের যোগসূত্র ছিল৷ তারা পলাতক সইফুল্লাহর মোবাইল ফোনে বায়ুসেনাকে সংবাদ দিয়েছিল দুর্ঘটনায় ১০ জন যাত্রী হত হন৷ তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক৷

সইফুল্লাহর বাবা সরতাজ ছেলের এই ঘটনার কথা জানতেন না৷ যখন তিনি সংবাদ পান তখন দেশদ্রোহী পুত্রের দেহ নিতে অস্বীকার করেন৷ তার বাবার স্পষ্ট ঘোষণা একজন বিশ্বাসঘাতক আমার ছেলে হতে পারে না৷ আমরা ভারতীয় আমরা, এই দেশের মাটিতে জন্মেছি৷ দেশ বিরোধী কাজে যে জড়িত সে কখনোই আমার ছেলে হতে পারে না৷ সইফুল্লাহ আই এসের ৯ সদস্যের একটি সেলের একজন সদস্য৷ বাইরের কিছু দাপুটে জঙ্গী এদেশে ঢুকেছে৷ সবাই হতবাক এই জঙ্গীদের কাজে ৷

ইতিহাস কিছুই ভুলে যায় না৷ কিন্তু সাধারণ দেশবাসীর নানা কাজের দরুণ অনেক সময় অনেকের কিছুই স্মরণে থাকে না৷ অনেক ঘটনা তাদের কিন্তু স্মরণ করিয়ে দিতে হয়৷ ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যখন ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য স্বদেশী আন্দোলনে ব্রতী তখন সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ শক্তি এদেশে কিছু বিচ্ছিন্নতাবী সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতবর্ষকে দুটুকরো করে দেশকে দুর্বল করে দেয়৷

১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দে মুসলিম লীগ ইংরেজের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েই ভারতবর্ষ ভাগ করে ভারতবর্ষের পূর্ব ও পশ্চিমের দুটুকরো পাকিস্তান হয়৷ আর মাঝে থাকে ভারত যুক্তরাষ্ট্র৷ পাকিস্তান নির্মমভাবে অমুসলমানদের, বিশেষ করে হিন্দুদের পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত করে৷ মাধ্যম ছিল সাম্প্রাদয়িক সংঘর্ষ এতে কয়েক লক্ষ অমুসলমান নিহত হয় ৷

পরবর্তীকালে সন্ত্রাসবাদী ইসলামিক ষ্টেটস্ নামে এক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংঘটন ভারতে চরম হিংসার কাজে লিপ্ত হয়েছে৷ নিজেদের স্বার্থে সাম্রাজ্যবাদীরা অনেক আগেই এদেশের ক্ষতি করে গেছে৷ হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান নামে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়েছে৷ তাই ভারতে ইসলামিক ষ্টেটস্ কেন? এই ভয়ঙ্কর কাজে যারা লিপ্ত তারা মূলতঃ দেশের বাইরের মুসলিম অধূ্যষিত দেশের নাগরিক৷ সিরিয়া, ইরাক হল আই এসের দাপুটে ঘাঁটি৷ তারা এদেশে ঢুকে এদেশের মুসলিম তরুণ-তরুণীদের মাথা খাচ্ছে সইফুল্লাহের মত ছেলেদের৷ ভারত বিরাট দেশ৷ এই দেশের শতকরা ৩৯ শতাংশের বেশী জনসাধারণ অহিন্দু৷ তারা প্রধানতঃ মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত৷ তাদের অধিকাংশই নিজেদের ভারতীয় বলে মনে করেন৷ কারণ তারা ভারতের মাটির সন্তান৷ সইফুল্লাহের বাবা সরতাজের মতই ভারতীয়৷ তারা কখনোই ভারতের ক্ষতি চান না৷ সরতাজের এই যুক্তিবাদী ন্যায়নিষ্ঠ দৃঢ় মানসিকতা পৃথিবীতে এক নজির সৃষ্টি করেছে৷ সবার ওপরে মানব সমাজের স্বার্থ ও মানবিকতা৷ এটাই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন সংকীর্ণতাবাদীদের৷

মনে পড়ে সেই মহান কবির চণ্ডীদাসের কবিতা---

শুনরে মানুষ ভাই,

সবার ওপরে মানুষ সত্য

তাহার ওপরে নাই৷

আজকের হিংসা, দ্বেষ পরিপূর্ণ পৃথিবীতে প্রত্যেক যুক্তিবাদী মানুষকে অন্তরের সঙ্গে বুঝতে হবে মানুষ মানুষ ভাই ভাই৷ তাদের মধ্যে কোনও ভেদ নাই৷ এই ভেদাভেদ যারা সৃষ্টি করছে তারা এই জগৎ যে ঈশ্বরের সৃষ্টি তাকেই অস্বীকার করছে৷ এই কঠিন সময়ে দেশে প্রয়োজন সবাইকে ঐক্য ও সংহতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে৷