ভক্তেরা ভূমাকেন্দ্রের চারিপাশে ঘুরে চলেছে

Baba's Name
শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী

তোমরা জান যে প্রাচীনকাল থেকেই ‘কার্য ও কারণ’ তত্ত্ব প্রচলিত আছেঙ্গ এটা একটা নিশ্চিত সত্য যে যেখানেই কার্য আছে সেখানে তার কারণ অবশ্যই থাকবেঙ্গ মহর্ষি কণাদ্ এই তত্ত্বের প্রবক্তাঙ্গ তিনিই প্রথম বলেন যে কার্য থাকলে তার কারণ থাকবেইঙ্গ আমরা কারণ জানতেও পারি, নাও জানতে পারি কিন্তু কারণ আছেইঙ্গ তাহলে তোমরা ৰুঝলে প্রতিটি কার্যের পিছনে কারণ থাকবে কিন্তু যেখানে কারণ আছে সেখানে কার্য থাকতেও পারে আবার নাও পারেঙ্গ

তুমি যদি দেখ কোথাও অঙ্কুর আছে, তাহলে তার কারণ হচ্ছে একটা ৰীজ কিন্তু যেখানে ৰীজ আছে সেখানে অঙ্কুরোদগম হতে পারে বা নাও হতে পারেঙ্গ সেই ৰীজের মধ্যে অঙ্কুর সৃষ্টি করার ক্ষমতার অভাব থাকতে পারে অথবা ৰীজের অঙ্কুরোদগমের ক্ষমতা থাকলেও ৰীজটি অঙ্কুর তৈরী করল নাঙ্গ একটি খারাপ বা দুর্বল ৰীজ থেকে কোনো অঙ্কুর হবে না–কিন্তু ৰীজ খুব ভাল হলেও সেই ৰীজ মাটি অথবা বাতাস অথবা জল অথবা আলোর সংস্পর্শে না আসার ফলে কোনো অঙ্কুরোদগম হবে নাঙ্গ তাহলে আমাদের এটা বলতেই হবে যে এই বিশ্বে কোন কিছুই অকারণ নয়ঙ্গ

আমরা এই পৃথিবীতে এসেছিঙ্গ আমাদের এই যে আসা সেই কার্যের কোনো কারণ অবশ্যই আছেঙ্গ যেহেতু এটা একটা কার্য তাহলে তার কারণ কী কেন আমরা পৃথিবীতে এসেছি তত্ত্বগতভাবে তা অবশ্যই কারণরহিত নয়ঙ্গ তাহলে ব্যাপারটা কী

যেখানে গতি আছে, যেখানে দীর্ঘক্ষণ ধরে একটা গতিপ্রবাহ আছে, যদি তা নোতুন প্রেরণা না পায়, তাহলে কী হয় সে দ্রুতি হারিয়ে ফেলেঙ্গ আর শেষপর্যন্ত অধোগতি শুরু হয়ঙ্গ আমাদের মানবসমাজে প্রারম্ভ থেকেই এই দ্রুতির অভাব ছিলঙ্গ এখন তো অধোগতি শুরু হয়ে গেছেঙ্গ এখন মানবতার রক্ত ঝরছেঙ্গ মনে হচ্ছে ভবিষ্যৎ যেন অন্ধকারঙ্গ তাই আমরা এসেছি কিছু করতেঙ্গ আমি এখানে এসেছি কিছু করতে, আর তোমরাও এখানে এসেছো কিছু করতেঙ্গ আমার আসা যেরকম তাৎপর্যপূর্ণ, তোমাদের আসা কম তাৎপর্যপূর্ণ নয়ঙ্গ আমরা একটা মিশন নিয়ে এসেছি আর আমাদের ব্যষ্টিগত ও সামূহিক জীবনেও একটা মিশন আছেঙ্গ আমাদের মিশন একটা সামূহিক মিশন, এক্ষেত্রে আমরা সব একঙ্গ আমরা কিছু করতে এসেছিঙ্গ আর সেটাই হচ্ছে কারণঙ্গ

আর এর কার্যরূপ বা ফল কী হবে ফল হবে এই যে জগতের সকলে উপলব্ধি করবে যে মানবতা এক ও অবিভাজ্য আর স্বর্গ বা নরকের কোনো শক্তিই এই গৌরবময় মানবতাকে ধ্বংস করতে পারবে নাঙ্গ আমরা এসেছি মানবতাকে রক্ষা করতে, আর আমরা মানবতাকে রক্ষা করবওঙ্গ

আর একটা কথা আছেঙ্গ আমরা যে এসেছি আমাদের এই আসা অকারণ নয়ঙ্গ তেমনি আমাদের মধ্যে কেউই নগণ্য নয়ঙ্গ প্রত্যেক সত্তার অনেক কিছু করবার আছে, আর তারা সেটা করবে আর আমাদের ভাগ্য প্রত্যেকের সে৷ একই সূত্রে গাঁথাঙ্গ এটার অর্থ এই যে অতীতে আমাদের মধ্যে একটা একতা ছিল, একটা ঘনিষ্ঠতা ছিল, এক নৈকট্য ছিলঙ্গ এইজন্যে আমরা একত্রিত হয়েছিঙ্গ এটা অর্থহীন নয়ঙ্গ

এই কথা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবেঙ্গ যখন একদল ভাল মানুষ এসেছে–হতে পারে তাদের সংখ্যা হাজার বা লক্ষ বা কোটি কোটি–কিন্তু যখন তারা এসেছে, তারা এসেছে নির্দিষ্ট কিছু করার জন্যেঙ্গ আর সেই গোষ্ঠীর নাম ‘হরি পরিমণ্ডল গোষ্ঠী’ কেননা সেই গোষ্ঠী একটা ভূমাদর্শের চারিপাশে ঘুরে চলেছেঙ্গ তাই তোমরা এখানে এসেছো পরবর্তীকালের জন্যে একটা শক্ত, সুসংৰদ্ধ হরি পরিমণ্ডল তৈরী করতেঙ্গ                             ৬ অক্টোবর ১৯৭৯, কলিকাতা