চৈত্য

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

 ‘চিতা’ শব্দের উত্তর ‘ব্যঞ্‌’ প্রত্যয় করে ‘চৈত্য’ শব্দ নিষ্পন্ন হচ্ছে৷ ৌেদ্ধ যুগের প্রথা ছিল মহাপুরুষদের চিতাভস্ম সংগ্রহ করে তা একটি প্রস্তর পাত্রে (কোন কোন ক্ষেত্রে মৃৎপাত্রে) রাখা হত৷ ওই সংরক্ষিত চিতাভস্মকে লা হত ধাতু৷ এই ধাতুর ওপর সেকালে অনেক বড় বড় বৌদ্ধ বিহার ও সংঘারাম (শব্দটি সংস্কৃত ‘সংগ্রহম্‌’ থেকে আসা প্রাকৃত শব্দ৷ এই ‘সংঘারাম’ থেকে আবার ‘সংঘ’ শব্দটি এসেছে৷ মনে রাখা দরকার, ‘সংঘারাম’ ও ‘সংঘ’ শব্দ দুটির কোনটিই তৎসম শব্দ নয়, দুটোই প্রাকৃত৷ যাঁরা কখনো কখনো উক্তি করেন, ‘সংঘে শক্তিঃ কলৌযুগে’ তাঁরা জানেন কি জানি না যে এটি কোন সংস্কৃত উক্তি হ’ল না) তৈরী করা হত৷ চিতাভস্মের স্মৃতিতে নির্মিত এই সকল বিহার ও সংঘারামকে ‘চৈত্য’ বলা হত৷ অনেকের মতে প্রাচীনকালে একাধিক চৈত্য থাকার কারণেই বাংলার একটি শহরের নাম হয়েছিল চৈত্যগ্রাম যা পরবর্ত্তীকালে ‘চট্টগ্রাম’ নামে রূপান্তরিত হয়৷ কারও কারও মতে কিছু বিদেশাগত বণিকেরা এই শহরের কাছে এসে অনেক চাটি/সাটি (তৎকালে প্রাচীন চট্টগ্রামীর কথ্যভাষায় চাটি/সাটি মানে প্রদীপ) জ্বলতে দেখেন৷ তারই ফলে স্থানটির নাম হয় চাটিগাঁও বা চাঁটগাঁও৷ পর্ত্তুগীজরা অবশ্যই চৈত্যগ্রাম, চট্টগ্রাম বা চাঁটিগাঁও কোন শব্দই ব্যবহার করেন নি৷ তাঁরা স্থানটির নাম রেখেছিলেন পোর্ৎ-দ্য-বাঙ্গালা৷ পর্ত্তুগীজরা যখন এসেছিলেন তখন বাঙলায় দু’টো বড় বড় বন্দর ছিল৷ পূর্বদিকে ছিল এই চাটগাঁও বা পোর্ৎ-দ্য-বাঙ্গালা আর পশ্চিমদিকে হুগলী জেলার সপ্তগ্রাম বা সাতগাঁও৷ সম্ভবতঃ চাটগাঁও আর সাতগাঁও-য়ের তফাৎ বোঝাবার জন্যেই তাঁরা ওই দু’টো নামই ব্যবহার না করে একটার নাম রেখেছিলেন পোর্ৎ-দ্য-বাঙ্গালা, অপরটির নাম রেখেছিলেন পোর্ৎ-দ্য-গ্রাঁদি৷

--- শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘু নিরক্ত থেকে সংগৃহীত