চলিতেছে সার্কাস

লেখক
সুকুমার সরকার

জীবজন্তু নিয়ে সার্কাস দেখানো এখন প্রায় নিষিদ্ধ৷ তাই বিভিন্ন মেলায় মানুষ এখন খুব একটা সার্কাস দেখতে যায় না৷ কিন্তু মানুষের মনের মধ্যে সার্কাস দেখার একটা প্রবণতা রয়ে গেছে৷ বর্তমান ভারতবর্ষের মানুষের এই প্রবৃত্তির নিবৃত্তি ঘটছে৷ সংসদদের প্রেক্ষাগৃহে সাংসদদের দেখে যেন আজব এক চিড়িয়াখানা! দর্শক আমরা সাধারণ মানুষেরা আর বিচিত্র এই সার্কাসের রিং মাষ্টাররা হচ্ছেন কর্পোরেট পুঁজিপতিরা৷ তাদের এই অঙ্গুলীহেলনে নাচছি সবাই কি দর্শক, কি দর্শনীয় সকলেই! এর জন্যে সাংসদ নামক পুঁজিপতিদের খাঁচায় বন্দী সাংসদরা যতটা দায়ী, ততোধিক দায়ী ওই সাংসদদের ভোট দিয়ে যারা পাঠাচ্ছেন সেই আম আদমীরাও৷ আসলে এই যে বললুম সার্কাস দেখার প্রবৃত্তি৷ নইলে ভোট দেবারই স্বাধিকার যখন আছে তখন কেন আম আদমিরা একবারও ভাবছেন না কাদেরকে পাঠাচ্ছেন সংসদে৷
দেশের প্রায় ১৩০ কোটি মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয় বিধানসভা বা সংসদে৷ রাজ্যগুলির বিধানসভায় ও কেন্দ্রীয় সংসদ ভবনে বিগত কয়েক দশক ধরে কী চলছে, তা কি আম-আদমীরা দেখছেন না? বিধানসভায় বা সাংসদদের প্রতিটি অধিবেশন কীভাবে বাতিল হচ্ছে, কীভাবে বিরোধী শূন্য বিল পাশ হচ্ছে, কীভাবে সংসদে হৈ-হট্টগোল, হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি চলছে আমার তো লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসছে! এই নাকি বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের বিধানসভা, সংসদ ভবন তাই একে সার্কাসের সঙ্গে তুলনা না করে পারলুম না কেউ আহত হলে ক্ষমা করবেন৷
কিন্তু এখানেই তো থেমে থাকলে চলবে না৷ সময় তো এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে আগামী দিনে নতুন প্রজন্মের জন্যে কিছু বার্তা তো রেখে যেতে হবে! কিন্তু কী সেই বার্তা?
আসলে ব্যঙ্গ করে যে সংসদ চিড়িয়াখানার কথা বললুম সেটা আসল কথা নয়! সংসদ নামক ভবন তো কোনও দোষ করেনি, দোষ করেছেন সংসদে যাঁদেরকে পাঠানো হচ্ছে তাঁরা৷ আর যারা পাঠাচ্ছে তারা৷ এখন দেখার এদের কে কতটা দায়ী---দেশের আম আদমীর সকলেই সমান শিক্ষিত নয়৷ তাদের বিচার ক্ষমতা কতটুকু---এটাও যেমন সত্য, তেমনি এটাও তো সত্য যারা শিক্ষিত, যারা বুদ্ধিজীবী, যারা অশিক্ষিত ও বিচারক্ষমতাহীনদের্ পরামর্শ দেন, কিংবা প্রচারযন্ত্রে যারা সংবাদ পরিবেশন করেন---মানুষকে প্রভাবিত করেন তাদেরও তো একটা বিরাট ভূমিকা আছে৷ কিন্তু কোথায় তারা কী ভূমিকা পালন করছেন? তাঁরা এরকম হাজারটা প্রশ্ণবোধক চিহ্ণ দাঁড় করানো যাবে কিন্তু সমাধান আসবে না৷ মাথায় কালো হাঁড়ি নিয়ে সাংসদরা নিজেদের মুখ যেমন কালো করবেন, সাধারণ মানুষদের মুখেও চুনকালি মাখাবেন সংসদ ভবন, বিধানসভা ভবনের ভিতরে-বাইরে ধর্ণায় বসে সাধারণ মানুষের হয়রাণি বাড়াবেন৷ কাজের কাজ কিছুই হবে না৷
আসলে এত সব কিছুর মূলে আছে দর্শনহীনতা দিশাহীনতা৷ এই দর্শনহীনতা, দিশাহীনতার কারণেই পুঁজিবাদের চাবুক আমাদেরকে কাউকে কাউকে করছে সার্কাসের জীবজন্তু, কাউকে কাউকে করছে সার্কাসের দর্শক৷ ভেতরে কেবল হালুম, হুলুম কানে না প্রবেশ করছে কোনও দর্শনের আহ্বান, না বুঝতে পারছে কোনও দিশার হাতছানি৷
কিন্তু আশা কি একেবারই নেই ---আছে সার্কাসের ঘেরাটোপ নামক সমাজ, ধর্মমত, রাজনীতির অন্ধ মোহ থেকে বেরিয়ে এসে দেখুন পূর্ব আকাশে প্রাউট (প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব) নামক নোতুন এক সামাজিক- অর্থনৈতিক- রাজনৈতিক দর্শন ও দিশা হাতছানি দিয়ে ডাকছে৷ এর বাইরে অন্য কোন পথ নেই, পন্থা নেই যা আছে তা হল---
হালুম হুলুম
আবাজ শুনে অবাক হলুম
সোঁদর বনের বাঘ
গায়ে তার কালো ডোরা দাগ৷