এটি একটি প্রাচীন পারসিক শব্দ৷ হিন্দুস্তানীতেও ব্যবহৃত হয়৷ হিন্দুস্তানী থেকে বাংলায় এসেছে যার মানে ‘ছয়’-এর সমষ্টি (এক্কা, দোক্কা, তেক্কা, চউকা,পঞ্জা,ছক্কা)
‘অশ্বিনীনন্দন ধা তাতে রন৷
প্রাণ করে তার পঞ্জা ছক্কা৷৷’ ---দ্বিজেন্দ্রলাল
‘ছক্কা’ বলতে তাই ছয় দিকবিশিষ্ট ঘুঁটিকেও বোঝায়৷ ‘ছক’ শব্দ থেকেই প্রাচীন বাংলায় ‘ছঁচ’ ও বর্তমান বাংলায় ‘ছাঁচ’ মানেও একটি সীমায়িত বস্তু যার মধ্যে অপেক্ষাকৃত নরম বস্তু ফেললে সেই নরম বস্তুটি তদাকার প্রাপ্ত হয়, যেমন ‘সন্দেশের ছাঁচ’৷
ঘরের দু’দিকের ছাউনি যেখানে উঠোনের একটি কোণে একত্রিত হয়েছে তাকেও ‘ছাঁচ’ বা ‘ছাঁচতলা’ বলা হয়৷ ছাঁচের বিবর্ত্তিত রূপ ‘ছাঁচি’ বা ‘চাঁচি’৷ কলকাতায় আমরা ‘চাঁচি’ বলতে বুঝি দুধের কড়ায় লেগে থাকা সর কিন্তু মুর্শিদাবাদ ও মধ্য বাঙলায় চাঁচি মানে খোয়া ক্ষীর৷ শুদ্ধ অঙ্গিকায় ছাঁচ বা চাঁচি মানে ‘ঘোল’৷
বিশেষ একটি উন্নত মানের বস্তুকে এককালে ‘সাঁচি’ লা হত৷ এই ‘সাঁচি’ থেকে বর্তমান বাংলায় ‘ছাঁচি’শব্দটি এসেছে৷ যেমন ছাঁচি পাণ, ছাঁচি পেয়াজ, ছাঁচি কুমড়ো (গ্রাম-বাংলায় চালকুমড়ো বা চুনো কুমড়োও বলা হয়৷ সংস্কৃত প্রতিশব্দ ‘কুষ্মাণ্ড’৷ হিন্দীতে ছাঁচি কুমড়োকে ‘পেঠা’ বলে,তারা মোরববাকেও ‘পেঠা’ বলে৷ পূর্ব বিহারে ‘পোয়া’ ও পশ্চিম বিহার ও উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে ‘ভতুয়া’ বলা হয়৷ রাঁচীর নাগপুরিয়া ভাষায় বলা হয় ‘রাখস কোঁহ্ড়া’৷ কলকাতায় আমরা ছাঁচি কুমড়োই বলি)৷
এক্ষেত্রে আরো স্মর্ত্তব্য এই যে লাল কুমড়োর, যা বাজারে বেশী চলে, কোন সংস্কৃত নাম নেই৷ জিনিসটা সাম্প্রতিককালে ইয়ূরোপ থেকে এসেছে৷ বাঙলায় কোথাও মিষ্টি কুমড়ো, কোথাও লাল কুমড়ো, কোথাও সূর্য্যি কুমড়ো, কোথাও বিলাতী লাউ, উত্তর ভারতে কোথাও কদিমা, কোথাও কোঁহড়া, কোথাও বা কদু বলা হয়৷ উত্তর প্রদেশের কোন কোন জায়গায় সিতাফলও বলা হয়, যদিও শুদ্ধ হিন্দীতে সিতাফল মানে আতা৷ ‘সিতা’ মানে চীনী৷ কুমড়ো জিনিসটি মিষ্টি বলেই সম্ভবতঃ সিতাফল বলা হয়৷ রাঢ়ে ‘ডিংলা’ শব্দই বেশী প্রচলিত৷ ডিঙ্গি লাউ ডিংলা, যার মানে যে লাউ ডিঙ্গিতে করে অর্থাৎ জলপথে বিদেশ থেকে এসেছিল৷ কলকাতায় আমরা কুমড়ো বলতে এই লাল কুমড়োকেই বুঝি৷ ডিংলা বীজের দাম রাঢ়ের মানুষের একটি প্রিয় মুখরোচক ও পুষ্টিকর খাদ্য৷
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘু নিরক্ত থেকে সংগৃহীত)