প্রবীন প্রাউটিষ্ট নেতা শ্রীপ্রভাত খাঁ বলেন--- স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও দেশের মানুষ আর্থিক স্বনির্ভরতা পেলেন না৷ পুঁজিবাদ আশ্রিত রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষের আর্থিক বিকাশের লক্ষ্যে কোন বলিষ্ঠ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে না৷ যে দলই যখনই শাসন ক্ষমতায় আসে পুঁজিবাদের স্বার্থ ও সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থের উর্দ্ধে সব শ্রেণীর মানুষের সার্বিক কল্যাণের কথা ভাবতে পারবে না৷ পুঁজিবাদের তোষণ ও দলীয় স্বার্থসিদ্ধিই শাসনের দিকদর্শন বলে সবদলই মেনে নিয়েছে৷
রাজনৈতিক দলগুলি শাসন ক্ষমতায় বসে অনেক সময় রাষ্ট্রের সংবিধানকেই অবহেলা করে,উপেক্ষা করে৷ সংবিধান মোতাবেক ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র৷ যার অর্থ সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু সব সম্প্রদায়ের মানুষই নিজ নিজ ধর্মমতে বিশ্বাস রেখে চলতে পারবে৷ আইন শৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্ণ থাকলে প্রশাসন হস্তক্ষেপ করতেই পারে৷ কিন্তু কখনই মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব করা চলবে না৷
শ্রীখাঁ বলেন এসব প্রসঙ্গ উত্থাপনের কারণ দেশের বর্তমান শাসকদল একটি বিশেষ ধর্মমতকেই রাষ্ট্রের ধর্মমত বলে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে৷ যা শুধু মানুষের মৌলিক অধিকারেই হস্তক্ষেপ নয়, দেশের সংহতি রক্ষার ক্ষেত্রেও বিপজ্জনক৷ কোন ভাষা সংস্কৃতি, কোন মতবাদ জোরপূর্বক কারও ওপর চাপাতে চাইলে তার পরিনাম মোটেই ভালো হয় না৷ পৃথিবীতে এরকম উদাহরণ অনেক আছে৷ এ সব বিষয়ে রাষ্ট্র নেতা ও দেশের শাসকদের এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন৷ শ্রী খাঁ আক্ষেপ করে বলেন---আজও দেশের অর্দ্ধেক মানুষ পেট পুরে খেতে পায় না, কোটি কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে, সে দেশের মানুষ গঙ্গায় ডুবে অমৃত লাভের আশায় মহাকুম্ভে ছুটছে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে মানুষকে পদপিষ্ট করে৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় ভারতের আর্থিক দৈন্যতার করুণ চিত্র ফুটে উঠছে৷ কারো বিশ্বাসে আঘাত দিতে একথা বলছি না৷ কিন্তু আমার প্রশ্ণ আর্থিক ববস্থা পুঁজিবাদের হাতে সমর্পণ করে দিয়ে শুধু ধর্মীয় মতবাদ আঁকড়ে ধরে মানুষ কতদিন চলবে ধনকুবেরদের গ্রাসে দেশের সিংহভাগ সম্পদ, ধনবৈষম্য দিন দিন বাড়ছে৷ জীবন ধারণের নূ্যনতম প্রয়োজনটুকু জোগাড় করতেই মানুষ হিমসিম খাচ্ছে৷ সরকারের সে দিকে হুঁস নেই৷ মানুষকে ধর্মীয় আবেগে ভাবিয়ে পুঁজিবাদী শোষনের পথ তৈরী করে দেবার এ-এক চতুর পরিকল্পনা৷
শ্রী খাঁ প্রাউটের অর্থনীতি প্রসঙ্গ তুলে বলেন---পুঁজিবাদী আর্থিক ব্যবস্থার খোল-নলচে পাল্টে অর্থনীতির বিকেন্দ্রিকরণ করতে হবে প্রাউটের ব্লকভিত্তিক আর্থিক পরিকল্পনা রূপায়ণের মাধ্যমে৷ অবশ্যই এইপরিকল্পনা রূপায়ন করতে হবে সমবায় পদ্ধতিতে৷ তবে আশু প্রয়োজন মানুষকে সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে সচেতন করে তোলা মানুষের অসচেতনতার সুযোগ নিয়েই কায়েমী স্বার্থবাদীরা অন্ধ আবেগ ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন মতবাদকে হাতিয়ার করে শোষন করে চলেছে৷
পুঁজিবাদী শোষনের এই স্বরূপ বুঝেই প্রাউট প্রবক্তা সাধারণ মানুষকে সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সচেতন করার উপর জোর দিয়েছেন৷ মানুষকে বুঝতে হবে নিছক কোন মতবাদের প্রতি অন্ধবিশ্বাস আর পুঁজিবাদ নিয়ন্ত্রিত আর্থিক ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের কল্যাণ করতে পারে না৷
বহুভাষা-ভাষী ও সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির বর্ণময় বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করতে হলে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি জনগোষ্ঠীর ভাষা কৃষ্টি সংস্কৃতিকে সম মর্যাদা দিয়ে প্রতিটি ঘরে আর্থিক বিকাশের সুফল পৌঁছে দিতে হবে৷ আর সেটা প্রাউটের বিকেন্দ্রিত আর্থিক পরিকল্পনা রূপায়নের মাধ্যমেই সম্ভব৷
- Log in to post comments