ৰাংলায় আর একটা কথা রয়েছে ‘হাট’৷ সংস্কৃত ‘হট্ট’ শব্দ থেকে ‘হাট’ শব্দটি এসেছে৷ যেমন পাশাপাশি সাজানো অনেকগুলি হাট, সংস্কৃতে ‘হট্টমালা’৷ ‘হট্টমালার গল্প’ তোমরা অনেকেই নিশ্চয় পড়েছ৷ সংস্কৃতে ৰড় ৰড় হাটকে ৰলে ‘হট্টিক’৷ হট্টূ‘ষ্ণিক্’ প্রত্যয় করে ‘হট্টিক’৷ যদিও বৈয়াকরণিক বিচারে ‘হট্টিক’ মানে ছোট হাট হওয়া উচিত কিন্তু আসলে ৰড় হাট অর্থেই ‘হট্টিক’ শব্দটি ব্যবহার করা হ’ত৷ ‘হট্ট’–এর তদ্ভব ৰাংলা হচ্ছে ‘হাট’৷ যেমন রাজারহাট, বাগেরহাট, মাঝেরহাট প্রভৃতি৷ ‘হট্টিক’ শব্দের ৰাংলা ‘হাটি’৷ যেমন ‘নবহট্টিক’ থেকে ‘নৈহাটি’, ‘নলহট্টিক’ থেকে ‘নলহাটি’, ‘গুবাকহট্টিক’ থেকে ‘গৌহাটি’ (গুয়াহাটি) প্রভৃতি৷ দক্ষিণ ৰাংলায় হাটকে ‘হাটা’, ঘাটকে ‘ঘাটা’ রূপে উচ্চারণ করার একটা প্রবণতা ছিল৷ তার ফলে আমরা পাচ্ছি পাথুরে ঘাটা, বেলেঘাটা, মুরগীহাটা, দরমাহাটা, গড়িয়াহাটা প্রভৃতি৷
আউশ ধানের জেলা নদীয়ায় স্বাভাবিক নিয়মেই গো–খাদ্যের (ন্দ্রপ্সস্তুস্তুন্দ্বব্জ) টান পড়ত৷ পাশেই রয়েছে আমনের জেলা বর্দ্ধমান৷ বর্দ্ধমানের নন্দনঘাট (নাদনঘাট) থেকে নৌকো ৰোঝাই খড় জলঙ্গী নদী দিয়ে নদীয়া জেলায় আমদানী করা হ’ত৷ সেকালের এই খড়ের নৌকো–বোঝাই জলঙ্গী নদীর তাই নতুন নামকরণ করা হয়েছিল খড়িয়া বা খড়ে নদী৷ অর্থাৎ পদ্মা হতে নিঃসৃত এই জলঙ্গী নদী মুর্শিদাবাদ জেলায় ‘জলঙ্গী’ নামে পরিচিত হলেও এর আটপউরে নাম খড়ে নদী৷ তাই সেই নদীয়া জেলার গোপালক–প্রধান রেউই গ্রামের (সেকালকার সেই রেউই গ্রামই পরবর্তীকালে ‘কৃষ্ণনগর’ নামে পরিচিত হয়েছিল) পাশেই ছিল প্রকাণ্ড একটি গোরুর হাট–সংস্কৃত ভাষায় ‘গোহট্টিক’ঞ্ছপ্রাকৃতে ‘গোহড্ডি’ঞ্ছর্দ্ধপ্রাকৃতে ‘গোহাডি’ঞ্ছ পুরোনো ৰাংলায় ‘গোহাড়ি’ঞ্ছবর্তমান ৰাংলায় ‘গোয়াড়ি’৷ ইংরেজরা নদীয়া জেলার সদর গোয়াড়িতেই করেছিলেন৷ এখনও আমরা একসঙ্গে উচ্চারণ করে ৰলি ‘গোয়াড়ি–কৃষ্ণনগর’৷
যেখানে কেনা–বেচার জন্যে খুৰ ৰড় রকমের কেন্দ্র রয়েছে–তা সে গ্রামেই হোক বা শহরেই হোক, তাকে ফার্সীতে ৰলে ‘কসৰা’৷ চব্বিশ পরগণাতে ‘কসৰা’ ৰলে একটি জায়গা রয়েছে৷ যশোর শহরের পুরোনো নাম ছিল ‘কসৰা’৷ আসল যশোর নামক স্থানটি যখন খুলনা জেলা তৈরী হ’ল তখন খুলনা জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়৷ খুলনা খুব প্রাচীন জেলা নয়৷ চব্বিশ পরগণার সাতক্ষীরা, যশোরের খুলনা, বাখরগঞ্জের বাগেরহাটের অধিকাংশ অংশ নিয়ে জেলাটি তৈরী করা হয়েছিল৷ যশোর স্থানটি (ধূমঘাট) খুলনা জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবার পরে জেলার অবশিষ্টাংশের নাম যশোর রাখার কোন সার্থকতা ছিল না৷ তবু ‘যশোর’ নামটি বরাবর থেকে গেছ্ল৷ তখন থেকেই লোকে জেলা–সদর কসৰা শহরকে যশোর নামে অভিহিত করেন৷ আমাদের ছোটবেলায় দেখেছি, গ্রাম্য মেয়েরা শ্যালদায় টিকিট কাটতে গিয়ে ৰুকিং ক্লার্ককে ৰলত, ‘মাষ্টারৰাৰু, কসৰার একটি টিকিট দেবে গা?’’ আর সঙ্গে সঙ্গে ৰুকিং ক্লার্ক যশোরের একটা টিকিট বার করে দিতেন৷
কলকাতার উত্তর ঘুঘুডাঙ্গাতে ইংরেজরা সৈন্যাবাস তৈরী করেছিলেন৷ সেখানে হরদম গুলিগোলার দুমদাম আবাজ হত৷ এ যেন সেই দীপাৰলীর রাত্রে এক–দমা দো দমা ফাটানো হচ্ছে৷ চারিপাশের গ্রামের লোকেরা আবাজে অতিষ্ঠ হয়ে ওই জায়গাটার নাম রেখেছিলেন ‘দমদমা’৷ পরে যখন সেখানে রেলের ইষ্টিশান হ’ল তখন জায়গাটির নাম রাখা হ’ল ‘দমদম’৷ জায়গাটার আসল নামটা হচ্ছে তাহলে ‘দমদমা’৷ স্থানীয় জনসাধারণ শ্যালদা ইষ্টিশানে টিকিট কাটতে গিয়ে বলত, ‘‘মাষ্টারৰাৰু, ঘুঘুডাঙ্গার একটা টিকিট দাও তো গো’’৷ ৰুকিং ক্লার্ক তাদের দমদমের টিকিট দিতেন৷ কেউ সিঁথির টিকিট চাইত না৷ হয়তো বা সিঁথির নামডাক ঘুঘুডাঙ্গার চেয়ে একটু কম ছিল বলেই চাইত না৷