ভারতীয় সংবিধানে ইণ্ডিয়া ও ভারত দুটো নামেরই বৈধতা আছে৷ নাম পরিবর্তন করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে৷ কোন দেশের নামকরণের ক্ষেত্রে সেই দেশের বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার দরকার৷ যেমন, শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন বিভিন্ন জায়গা থেকে সুন্দর সুন্দর জিনিস সংগ্রহ অর্থাৎ চয়ন করে যে দেশটি তৈরি হয়েছে তার নাম চীন৷
ঠিক তেমনি সুজলাং সুফলাং শস্য শ্যামলা যে দেশ তার নাম ভারত হওয়াই বাস্তবসম্মত৷ তবে শুধু ভারত বললে দেশের নাম হিসাবে তা সঠিক নয়৷ শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী এ প্রসঙ্গে বলেছেন--- ‘যদা যদাহি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত৷ এখানে ‘ভারত’ শব্দের অর্থ হচ্ছে রাজা৷ অর্জুন রাজা ছিলেন (রাজবংশজাত ছিলেন)৷ এখানে রাজা অর্থে ‘ভারত’ শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে৷ ‘ভৃ’ ধাতুর অর্থ হলো ভরণ পোষণ করা আর তন্ ধাতুর অর্থ হল বিস্তারিত করা৷ তাই ‘ভারত’ শব্দের অর্থ হল শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক প্রগতির জন্য যিনি সর্বদাই প্রয়াসশীল তিনি৷ এই অর্থে যে দেশ তার অধিবাসীদের শারীরিক,মানসিক ও আধ্যাত্মিক প্রগতিতে সহায়তা করে সেই দেশের নাম ভারতবর্ষ৷ ‘বর্ষ’ মানে দেশ৷ দেশের নাম শুধু ভারত বলা ঠিক নয়৷ দেশ বোঝাতে গিয়ে ‘ভারত’ শব্দের সঙ্গে বর্ষ শব্দ যুক্ত করতে হবে৷ অন্যথা বৈয়াকরণিক দৃষ্টিতে তা অশুদ্ধ বলে গণ্য হবে৷ তাই ‘ভারত নয়’ ‘ভারতবর্ষ’ বলতে হবে৷
আর ইণ্ডিয়া নামটা এদেশের ক্ষেত্রে মোটেই মানানসই নয়৷ এ প্রসঙ্গে শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের মন্তব্য--- ‘‘হিন্দু শব্দটা ফারসী যার মানে হচ্ছে হিন্দ্ অর্থাৎ ভারতের বাসিন্দা (ইংরেজীতে ইন্ডিয়ান)৷’’ দেশে প্রভূত পরিমাণে খাদ্যশস্য উৎপন্ন হত বলে নাম রাখা হল ভারতবর্ষ৷ আর্যরা মধ্য এশিয়া থেকে এদেশে এসে দেখেন---অত্যন্ত উর্বর এই দেশ অনায়াসেই এখানে খাদ্য সংগ্রহ করা যায়৷ উদ্বৃত্ত সময়টুকু মানসিক ও আধ্যাত্মিক প্রগতির জন্য কাজে লাগে৷ সকল প্রকার মানসিক উৎকর্ষ সাধনের উপযোগী৷ তাই আর্যরা দেশের নাম রাখলো---ভারতবর্ষ৷ দেশের এই সবগুণাবলী ‘ইণ্ডিয়া’ শব্দ ব্যক্ত করে না৷ অতএব, ইণ্ডিয়া নয়, ভারত নয়, দেশের নাম রাখা হোক ভারতবর্ষ৷
- Log in to post comments