জাতের নামে বজ্জাতি

লেখক
একর্ষি

এই ধর্মের অন্তরে লগ্ণ হয়ে আছে চারটি ভাব--- দায়বদ্ধতা, সেবা, কল্যাণ বা প্রগতি ও অন্যের সামাজিক ধর্মপালনে শ্রদ্ধা আর মান্যতা৷ দায়বদ্ধতা থেকেই সেবার প্রেরণা আসে, সেবার লক্ষ্য কল্যাণ, কল্যাণ মাত্রা পায় অন্যের  সত্তাগত ও সামাজিক ধর্মপালনে মান্যতা  শ্রদ্ধার্ঘ্যে৷ আর এর সংবেদন বা আকর্ষন হচ্ছে জ্ঞান ও কর্ম সমন্বিত ভক্তি (ভক্তির সমিকরণটা---জ্ঞান+ কর্ম৷ কর্ম বেশি হল, জ্ঞান কম সমন্বিত ভক্তি (বাড়তিটা হবে অহংকার আবার জ্ঞান বেশী হল, কর্ম কম হল, তাহলেও জ্ঞানের বাড়তিটা হবে অহংকার৷ সুতরাং জ্ঞান ও কর্মের সমন্বয়েই ভক্তিমার্গের উদ্ভব৷ আর  আধ্যাত্মিকতা ছাড়া ধর্মরাজ্য সংস্থাপনা যেমন সম্ভব নয় তেমনি মানুষের প্রকৃত সেবা বা কল্যাণ করাও সম্ভব নয়৷

প্রাসঙ্গিকভাবেই এসে যাচ্ছে দুটি বিষয়--- ১) কৃষ্ণ চরিত্রের দুটো দিক একটা হল বাল্য ও কৈশরে বৃন্দাবনের বা ব্রজের কৃষ্ণ, অন্যটা হল মথুরা দ্বারকার রাজা কৃষ্ণ বা  পার্থসারথি কৃষ্ণ৷ বৈষ্ণবদের কাছে, তথাকথিত কৃষ্ণভজা প্রেম-ভক্তিবাদীদের কাছে পার্থসারথি কৃষ্ণের কোন গল্প নেই৷ কৃষ্ণ চরিত্র মাধুর্য ভরা৷ কিন্তু কৃষ্ণ চরিত্রের আসল মাধুর্যই তাদের কাছে অধরা৷ এ মাধুর্য কেবল ভক্তের ভগবানের নয়, ‘‘এ মাধুর্য হল হৃদয়বত্তার মাধুর্য৷ সবাইকার   কল্যাণ করবো, সবাইকে পাপীর হাত থেকে মুক্ত করবো, সবাইকে নিশ্চিন্তে মনে প্রশ্বাস নিতে দেবো---এই ভাবনা,এটাই মাধুর্য৷ ‘‘মহাভারত রচনা করা, সমাজের বুক থেকে অধর্মকে উৎখাত করে, অন্যায়  অবিচার নাশ করে ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার দৃঢ় সংকল্প পালনার্থে তাঁর ধরাধামে আসা৷ অথচ নিছক কৃষ্ণপ্রেম-ভক্তির ধবজাধারীরা মধুর রসের ন্যাজা ছুঁয়ে কান্তাপ্রেমের ভনভনানিতে স্থূললৌকিক প্রেমের আধারে কৃষ্ণ চরিত্রকে গণমুখী করতে গিয়ে লোক সমক্ষে কৃষ্ণকে কলঙ্কিতই করেছে৷ ফাইট ইজ দা এসেন্স অব্‌ লাইফ---কিন্তু সেই সংগ্রামে বিমুখ হয়ে, সংগ্রাম করার ভয়ে নৈষ্কর্মবাদকে আকড়ে ধরে জগৎ ও জীবনের প্রতি সামাজিক  দায়বদ্ধতাকেও বিসর্জন দিয়েছে৷ কৃষ্ণ চরিত্রের গভীরে যাওয়ার সদিচ্ছা হয়নি, নেইও৷ কার্যতঃ ভূয়োদর্শিতার বিচারে---জগতে মানুষের সামূহিক কল্যাণে মানুষের সমাজে একটা আধ্যাত্মিকতা ভিত্তিক অখণ্ড আর্থ-সমাজ-রাজনৈতিক দৃঢ় ভিত্তি অবশ্যই দরকার৷ পার্থসারথি কৃষ্ণ তারই প্রবক্তা, কৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রের মহারণের  দৃষ্টান্তে তাকেই মাত্র দিয়েছেন৷ ধর্মসংস্থাপনের প্রচেষ্টার এটা ছিল একটা প্রকরণ৷                           (ক্রমশঃ)