বাংলায় একটি প্রবাদ আছে---‘নামে তালপুকুর ঘটি ডোবে না৷’ কংগ্রেসের অবস্থাও আজ নামে তালপুকুরের মতো৷ কিন্তু মুস্কিল হলো কংগ্রেসের জাতীয়স্তরের নেতারা সেকথা বুঝতেও চায় না, মানতেও চায় না৷ স্বাধীনতার পর ভারতবর্ষে ছিল একচেটিয়া কংগ্রেসের শাসন, রাজ্যে রাজ্যেও ছিল ডবল ইঞ্জিন সরকার৷ কালের অমোঘ নিয়মে কংগ্রেসের সেই স্বর্ণযুগ আজ অস্তাচলে৷ দু-দফা একক গোরিষ্ঠতায় দেশ শাসন করে বিজেপি তৃতীয়বার একক গোরিষ্ঠতা না পেয়ে শরিকদের নিয়ে জোট সরকার চালাচ্ছে৷ কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট ৯টি রাজ্যে শাসন ক্ষমতায়, বাকী রাজ্যগুলি বিজেপি নেতৃত্বাধীন এন.ডি.এ জোটের শাসন৷ বর্তমানে বিরোধী জোটের শাসনে যে ৯টি রাজ্য, তার মধ্যে কংগ্রেস এককভাবে শাসন ক্ষমতায় আছে তিনটি রাজ্যে---কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা হিমাচল প্রদেশ৷ পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশের মত রাজ্যে প্রায় অর্দ্ধশতাব্দী কংগ্রেস ক্ষমতায় নেই৷ পশ্চিমবঙ্গে বিবেক বিসর্জন দিয়ে সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়েও কুল-কিনারা পায়নি৷ বেশ কিছু রাজ্যে কংগ্রেস ভেঙে তৈরী আঞ্চলিক দলগুলিই প্রধান দল হয়ে উঠেছে৷
স্বাধীনতার আগে থেকেই কংগ্রেসে দেশের থেকে দল ও ব্যষ্টির স্বার্থকে বড় করে দেখা হয়৷ যার জন্যে কংগ্রেসে গান্ধী সুভাষ বিরোধের সময় গান্ধীকে হিটলার মুসোলিনি স্ট্যালিনের সঙ্গেও তুলনা করা হয়েছিল৷ ভারতীয় রাজনীতি থেকে সুভাষচন্দ্রের হারিয়ে যাওয়ার পিছনেও কংগ্রেসে সংকীর্ণ রাজনীতি দায়ী৷ এমনকি স্বাধীনতার পরও সুভাষচন্দ্রের অন্তর্ধান রহস্যের সত্য প্রকাশ করতে সাহস পায়নি কংগ্রেস৷ অবশ্য এই ব্যাপারে আর এস এস বিজেপিও কংগ্রেসের সঙ্গেই আছে৷ কারণ কংগ্রেস আর এস এস উভয়েই সুভাষ বিরোধীতায় একই মঞ্চে ছিল৷
ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে আজও কংগ্রেস বাইরে আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে জোট করলেও ভিতরে ভিতরে আঞ্চলিক দলগুলোকে দুর্বল করাই তার লক্ষ্য৷ তাতে যদি রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি জিতে যায় তাতে কংগ্রেসের কিছু যায় আসে না৷ বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতিও দেশকে সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷ কংগ্রেস কিন্তু দেশ অপেক্ষা দলের অস্তিত্ব রক্ষা করতে বেশী তৎপর৷ রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেসের দুর্বল হওয়ার পিছনে আঞ্চলিক দলগুলির ভূমিকাকেই কংগ্রেস বড় করে দেখে৷ কিন্তু যে দলের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান আছে, দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল থেকে কেন এমন আঞ্চলিক পর্যায়ে নেমে এসেছে, কেন রাজ্যে রাজ্যে দল ভেঙে তৈরী হয় আঞ্চলিক দল তার আত্মবিশ্লেষণ কোনদিন করেনে৷ স্বাধীনতার ৭৭ বছরে দিল্লীর দ্বিচারিতার স্বীকার পশ্চিমবঙ্গ৷
পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চনার ক্ষেত্রে বর্তমান মোদি সরকারও কংগ্রেসের পথই অনুসরণ করছে৷ যেখানে ৩০বছর কেন্দ্রে রাজ্যে কংগ্রেসই ক্ষমতায় ছিল সেখানে ৪৭ বছর ক্ষমতার বাইরে৷ এখন তো বিধানসভায় শূন্য৷ কংগ্রেস জানে বোঝে রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেসই ক্ষমতায় ছিল৷ সেখানে ৪৭ বছর ক্ষমতার বাইরে৷ এখন তো বিধানসভায় শূন্য৷ কংগ্রেস জানে বোঝে রাজ্যে রাজ্যে তার এই দুরবস্থার জন্যে আঞ্চলিক দলগুলোই দায়ী৷ তাই বিজেপি দেশের অখণ্ডতা রক্ষার ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক হলেও কংগ্রেসের লক্ষ্য আঞ্চলিক দলগুলোকে দুর্বল করা, তাতে বিজেপি জিতলেও তার আপত্তি নেই৷
তাই মহারাষ্ট্র দিল্লিতে উড়িষ্যায় বিজেপির জয়ে কংগ্রেস অখুশি নয়৷ দিল্লিতে কংগ্রেসের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছিল আপ, উড়িষ্যায় বিজেডি, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরী করে ৩৪ বছরের সিপিএমের শাসনের অবসান ঘটিয়ে তিন দফায় রাজ্য শাসন করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বিজেপি নয়, কংগ্রেসের নিশানায় তাই আঞ্চলিক দলগুলি৷
- Log in to post comments