মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বের আলোকে বিশ্বসৃষ্টির মূল কারণ

লেখক
সমরেন্দ্রনাথ ভৌমিক

এই বিশ্ব সৃষ্টির মূল কারণ কী? প্রাণ বা প্রাণীনতার আদি বিন্দুটি কী? এই বিশ্বের কিংবা মহাবিশ্বের বুকে প্রাণীনতার আদিবিন্দুটি কী? এই প্রশ্ণের উত্তরে মহাপ্রাজ্ঞ শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন---‘‘এই মাইক্রোবাইটামই সেই প্রাণশক্তির উৎস৷ মাইক্রোবাইটাম একটি অতি সূক্ষ্ম জীব৷ এদের মধ্যে প্রাণ উৎসারিত হয়ে এসেছে ও জড়াধারে এসেছে প্রাণের স্পন্দন৷ তারপর ঘাত-প্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে সংঘাত সংহতিতে সমিতি-প্রমিতিতে ঘটেছে তার পরিবর্তন৷ এসেছে ডাইনোসর, এসেছে ঐরাবত, ---এসেছে বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ৷ আবার এরাই বিভিন্ন গ্রহে উপগ্রহে মানসসত্তাকে, জৈবসত্তার শরীর-সংরচনাকে ধবংস করে চলেছে৷ কাজেই ‘‘প্রাণের মূল কারণ এক কৌশিক প্রোটোজোয়া বা অনুজীব পঙ্ক নয়, প্রাণের উৎস হ’ল এই মাইক্রোবাইটাম Microvitum is the seeds of life)৷’’

সুতরাং মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বের আলোকে বলতে পারি--- আজ হয়ত চাঁদ বা মঙ্গলগ্রহে কিংবা বৃহস্পতিগ্রহে আজকের বিজ্ঞানীরা প্রাণীনতার হদিশ খুঁজে পাচ্ছে না, হয়ত বা আশু ভবিষ্যতে এই মাইক্রোবাইমের প্রভাবে দেখতে পাবো ওখানেও অনেক আমাদের চাইতে উন্নত জীবের অস্তিত্ব মিলছে৷ শুধুমাত্র চন্দ্রে বা মঙ্গলগ্রহেই যে উন্নত জীবের সন্ধান মিলছে তা নয়৷ মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বের আলোকে নিঃসন্দেহে বলতে পারি---একদিন বিশ্ব তথা মহাবিশ্বে মাইক্রোবাইটামের প্রাণীনতার সাহায্যে একদিন ভিনগ্রহে বুদ্ধিমান জীবের সৃষ্টি হবে৷

গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের কোন এক সময়ে আমাদের পরমারাধ্য ‘বাবা’ বলেছিলেন---আগামী সাড়ে তিন হাজার বছরের অনেক আগেই এই পৃথিবী নামক গ্রহটি আর মানুষের বসবাস যোগ্য থাকবে না৷ তাই তারকব্রহ্মও আর আসবেন না৷ ষাটের দশকের শেষের দিকে সংঘে যোগদান করার পর ২-৩ জন সিনিয়ার পূর্ণকালীন কর্মীর কাছে পরমারাধ্য ‘বাবা’ এই কথাগুলি বলেছেন আচার্য সুজিতজির লিখিত কথারই সমর্থনে আচার্য নিত্যসত্যানন্দ অবধূতজি যা লিখেছেন, পাঠকবর্গের কাছে কথাগুলিকে পুনরায় উপস্থাপিত করছি৷

আমরা জানি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়৷ এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছুই একদিন পরিবর্তন হতে হতে প্রাণীন ও অপ্রাণীন সব সত্তাই মহাশূন্যে বিলিন হয়ে যাবে৷ একদিন আমাদের এই সৌরজগতের মধ্যে অবস্থিত পৃথিবী নামক গ্রহটাও আর বসবাসযোগ্য থাকবে না৷ যদিও আরও কিছুদিন বসবাসযোগ্য থাকত--- কিন্তু পৃথিবীর উপর প্রতিনিয়ত অমানবিক অত্যাচারের ফলে জল, স্থল, আকাশ, বায়ুমন্ডলকে ব্যাপকভাবে দূষণ করে চলেছে৷ পৃথিবীর দুইমেরু যে হারে গলতে শুরু করেছে, তাতে করে সমগ্র পৃথিবীটাই হয়ত একদিন খুব শীঘ্রই জলের তলায় তলিয়ে যাবে৷ সুতরাং মানব সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে দূর ভবিষ্যতেন্যগ্রহে আমাদের পাড়ি দিতে হবে৷ অনেক মানুষকে সেখানে নিয়ে গিয়ে বসতি স্থাপন করতে হবে৷ কিন্তু প্রশ্ণ হ’ল অন্যগ্রবে কি কোন উন্নত জীবের অস্তিত্ব আছে? ‘বাবা’-কে এই প্রশ্ণই সর্বপ্রথম আচার্য সুজিতজি করেছিলেন৷

‘বাবা’ এই প্রশ্ণের উত্তর দিয়েছিলেন---

‘‘হ্যাঁ আছে৷’’

প্রশ্ণ ঃ কোথায় আছে?

‘বাবা’ বলেছিলেন---বিশাখা নক্ষত্রে৷

‘বাবা’-কে এই প্রশ্ণগুলি যখন করেছিলেন--- তখন ছিল ১৯৬৩ সাল৷ একদিন আচার্য সুজিত কুমারজি পরমারাধ্য ‘বাবা’র সাথে ‘সংস্কার’ সম্বন্ধে আলোচনা করেছিলেন৷ আচার্য সুজিতজি প্রশ্ণ করেছিলেন আর উত্তর দিচ্ছিলেন স্বয়ং ‘বাবা’৷ ওই দিন ‘বাবা’ ডেমনেষ্ট্রেশনের মাধ্যমে ‘বাবা’ বহু আশ্বর্যজনক বিস্ময়কর ও অবিশ্বাস তথ্যের কথা দেখিয়ে ছিলেন৷

সুজিতজি একবার ‘বাবা’কে প্রশ্ণ করেছিলেন---‘আচ্ছা ‘বাবা’ এটা কি সম্ভব হতে পারে অন্যকোনও গ্রহে যে মানুষের মত উন্নত জীব আছে---সেখানকার জীব কি এখানে অর্থাৎ পৃথিবীবে জন্ম নিতে পারে? তা কি সম্ভব ? বাবা বলেছিলেন---হ্যাঁ সম্ভব৷ কিন্তু এমন ব্যাপার খুব কমই হয়৷ তবে হয়৷ বিশাখা নক্ষত্রে মানুষের মধ্যে উন্নত জীব বাস করে,তখন তিনি এ ব্যাপারে  বাবাকে আরও কিছু প্রশ্ণ করেন৷ উত্তরে বাবা বলেছিলেন--- বিশাখানক্ষত্রে মানুষের মত উন্নত জীব আছে৷ সুজিতজি এই সময় প্রশ্ণ করেছিলেন---তাঁরা কি আধ্যাত্মিক সাধনা করে?

বাবা---হ্যাঁ করে৷ ওরা যে আধ্যাত্মিক সাধনা করে তা বেশ উন্নত ধরণের৷

এরপর সুজিতজি প্রশ্ণ করেন---ওখানে কি আনন্দমার্গের মতো কোন সংস্থা আছে?

বাবা উত্তর দিয়েছিলেন---হ্যাঁ আছে৷

প্রশ্ণ--- এখানে তো আমরা সংঘের ইয়ূনিট তৈরী করি৷ কমপক্ষে পাঁচজন সাধক-সাধিকা দিয়ে একটি আনন্দমার্গের আদর্শানুযায়ী রীতি-পদ্ধতি মেনে সমবেত সাধনা করে থাকেন৷ সমাজে আনন্দমার্গের আদর্শ প্রচারের জন্য ইয়ূনিটের প্রত্যেকে বিভিন্ন দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ দয়া করে যদি বলেন যে আজ পর্যন্ত বিশাখা নক্ষত্রে ক’টি ইয়ূনিট তৈরী হয়েছে?

‘বাবা’ উত্তর দিলেন--- আশিটি

প্রশ্ণ---ওখানে কি এখানকার মতো ‘আচার্যের’ ব্যবস্থা আছে---যিনি আধ্যাত্মিক সাধনা শেখান দীক্ষা দেন?

‘‘বাবা’---বললেন---হ্যাঁ আছে৷

১৯৬৩ সালের ঘটনা এটা৷ ‘বাবা’র এই কথা শুনে আচার্য সুজিত কুমারজির দৃঢ় ধারণ হল বিশাখা নক্ষত্রে তারকব্রহ্মরূপে আবির্ভত হয়েছিলেন৷

অন্য একজন সাধকের কাছে আচার্য সুজিতজি শুনেছিলেন যে পরমারাধ্য ‘বাবা’ নাকি বলেছিলেন যে আমাদের এই গ্যালাক্সিতে) ৪৯টি গ্রহে মানুষের মত উন্নত জীব আছে তবে কবে কোথায় কোন প্রসঙ্গে বাবা এই কথাগুলি বলেছিলেন তা সুজিতজি জানতে পারেননি৷

ব্রহ্মাণ্ড বা গ্যালাক্সির এর কথা ‘বাবা’ বলেছেন, কিন্তু এই ব্রহ্মাণ্ড এর ধারণা হয়ত বা অনেকের ভালভাবে মনে নেই৷ কারণেই এখানে গ্যালাক্সির সম্পর্কে দু’চারটে কথা সংক্ষেপে আলোচনা করে নিচ্ছি৷ মোটামুটি আমরা যে ব্রহ্মাণ্ড বা গ্যালাক্সিতে বসবাস করি সেই গ্যালাক্সিটি মোট দশহাজার কোটি নক্ষত্রের মধ্যে সূর্য হ’ল এই গ্যালাক্সি এর মধ্যে অতি ক্ষুদ্র ও নগন্য একটি নক্ষত্র৷ আর আমরা হলাম এই ব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্র হতে ৩০,০০০ আলোকবর্ষ দূরে, পৃথিবী নামক এক শহরতলীয় বাসিন্দা৷ এই হ’ল আমাদের ভৌগোলিক পরিচয়৷

আজ সময়ের পরিপেক্ষিতে আমাদের ব্রহ্মাণ্ডের মত মহাকাশের বুকে অজস্র ব্রহ্মাণ্ডের সহিত যোগাযোগ করতে হবে৷ তাই বাবা তারকব্রহ্ম বা মহাসম্ভূতিরূপে এত তড়িঘড়ি এসেছিলেন৷ আজ হতে সাড়ে তিন হাজার বছর আগে সদা শিব এসেছিলেন ভারতে, এরপর সাড়ে তিনহাজার বছর পর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এসেছিলেন ভারত গড়তে৷ কিন্তু বাবা এসেছেন মহাবিশ্বব্রহ্মাণ্ড  গড়তে৷

কালচক্রের এই নিয়ম অনুযায়ী আমরা তো সাড়ে তিন হাজার বছর পর আবার তারকব্রহ্মের আবির্ভাব আশা করতেই পারি তাই না? কিন্তু না এই শেষবারই আনন্দমূর্ত্তিজীর নাম রূপের মাধ্যমে তারকব্রহ্ম রূপে এই গ্রহে এসে গেলেন৷ এই কারণেই ‘বাবা’ পৃথিবীতে এত তড়িঘড়ি এসেছেন এক ‘অজানা’ পথিক রূপে৷

অজানা পথিক এসেছে, আলো জ্বেলেছে কুটিরেআমার৷

হাসিতে মুুকুতা ঝরে,যা কিছু করে ভালো যে তাহার৷৷

তন্দ্রা ভাঙ্গায় মধুর তানে, চন্দ্রালোকে রাঙায় প্রাণে৷

বর্ষা নামায় প্রীতির টানে, সে বানে হিয়া ভাসায় সবার৷৷

জানে সে বাসিতে ভালো, বাছে না মন্দ ভালো

দেখে না শাদা কি কালো, ভরে’ দেয় মমতা অপার৷৷

মহাসম্ভূতি বাবা আবার আমাদের অজানা পথিক রূপেই  পৃথিবী ছেড়ে কাউকে না জানিয়ে ১৯৯০ সালের ২১শে অক্টোবর অপরাহ্ণে সকলকে চোখের জলে পৃথিবী ছেড়ে অজানা জগতে চলে গেলেন৷

তুমি এসেছিলে কাউকে না বলে’ না জানিয়ে গেলে চলে’

মোর আরও গীতি ছিল গাওয়ার, আরও ছন্দে তালে৷৷

ভাবিতে পারিনি আমি, এভাবে আসিবে তুমি৷

এমনি যাবে যে চলে, আঁখি জলে মোরে ফেলে’৷৷

ধরার ধূলিতে যত ফুল ফোটে শত শত৷

তাদের কোরক তলে দিয়ে গেলে মধু ঢেলে’৷৷

প্রাউট ও নব্যমানবতাবাদের প্রণেতা জগৎ গুরু শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী কেবলমাত্র সদ্‌বিপ্র সমাজ ঘটনের উদ্দেশ্যে তারকব্রহ্ম রূপে এই পৃথিবীতে আসেননি৷

শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী নিজেই বলেছেন---

‘‘আমি এখানে সদ্‌বিপ্র সমাজ ঘটনের উদ্দেশে আসিনি৷ সেটা আমার আসল উদ্দেশ্যের এক ভগ্ণাংশ মাত্র৷ আমার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে পৃথিবীকে ভক্তি স্রোতে প্লাবিত করা৷’’

I have not come here to establish sadvipra samaj. That is but a fraction of my purpose. My real mission is to inundate the world with devotion.