মানসিক ভারসাম্য

Baba's Name
শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী

আসলে মানুষ সুখও চায় না, দুঃখও চায় না....মানুষ চায় মানসিক শান্তি, মানসিক স্বস্তি৷ প্রাত্যহিক জীবনে মানুষ কত শত লোকের সংস্পর্শে আসে৷ মাঝে মাঝে কারো কারো সঙ্গে তার সংঘর্ষও বেধে যায়৷ তাহলে মানসিক শান্তি বা স্বস্তি সে পাবে কী করে

যারা অন্যের প্রতি অবিচার করে তাদের অন্যের কাছ থেকে অবিচার সইতেও হয়৷ যারা অবিচার করে তারা সংগ্রামকালে মানসিক ভারসাম্য খুইয়ে বসে৷ যারা অন্যের প্রতি অবিচার করে না তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামে মানসিক সন্তুলন বজায় রাখতে সক্ষম হয়৷ যারা মানসিক শান্তির অধিকারী তাদের এটা একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য৷

ঈর্ষা ও ঘৃণা মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নেয়৷ যাকে তুমি ঘৃণা কর তার যদি বিপদও হয় তবু তার জন্যে তুমি সাধারণতঃ কোন ব্যথা অনুভব কর না৷ কিন্তু ব্যথা অনুভব করা উচিত৷ এমনকি চরম পাপীর জন্যেও তোমার হৃদয়ে অনুকম্পা থাকা উচিত৷ তার জন্যে তোমার হৃদয়ে দুঃখৰোধ–সমবেদনা পোষণ করা উচিত৷

একটি হিন্দী কবিতায় আছে, একবার একজনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল–তোমার মুখমণ্ডলে বিষণ্ণতার ছাপ কেন তুমি কি কিছু হারিয়ে ফেলেছ তুমি কি কাউকে কিছু দান দিয়ে ফেলেছ লোকটি জবাবে বললে –না, আমি কিছু হারাইও নি, আর কাউকে কিছু দানও দিই নি৷ আমি বিষণ্ণৰোধ করছি এই জন্যে যে আমি দেখলুম এক জন অন্য জনকে কিছু দান দিচ্ছে৷ তাই দেখেই আমার মুখ বিষণ্ণ৷

/সোমী কহে সোমা সে, কাঁহে মুহ্ মলিন্

ক্যা কুছ গাঁঠ সে গীর গয়ো, ক্যা কুছ দীও দীন

সোমা কহে, ন কুছ্ গীরো, ন কুছ দীয়ো দীন,

দোসরকো দেত দেখো তাঁহে মুহ্ মলিন৷*

এই যে ঈর্ষা–বিদ্বেষ, এই বৃত্তিগুলো মানুষের মনকে অধঃপাতে ঠেলে দেয়৷

এমনকি যে মানুষ চরম পতিত বা মহাপাতকী, চরম হতভাগ্য তাকেও কখনও ঘৃণা করো না৷ যদি কাউকে ঘৃণা কর তাহলে তোমার নিজেরই মানসিক ও আধ্যাত্মিক অধোগতি হবে৷ ভগবান ৰুদ্ধ বলতেন,

"অক্কোধেন জিনে কোধং অসাধুং সাধুনা জিনে৷

জিনে কদরীয়ং দানেন, সচ্চেন অলীকবাদিনম্৷৷”

তোমার পক্ষে ৰুদ্ধিমানের কাজ হবে ক্রোধ পরিহার করা৷ অনৈতিকতা ও মিথ্যাচারিতার মাঝে থেকেও নিজের নীতি থেকে কখনও বিচ্যুত হয়ো না৷ যদি তোমার এ বিষয়ে নিপুণতা থাকে, তাহলে তুমি প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংগ্রামে জয়যুক্ত হবে৷

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, দুঃখে উদ্বিগ্ণ ও সুখে উল্লসিত হয়ো না, সর্বাবস্থায় মানসিক সন্তুলন বজায় রেখে চলো৷

তোমরা লক্ষ্য করেছ যে আনন্দমার্গের নাম–যশঃ বেড়েই চলেছে৷ এ অবস্থায় আমাদের কী করা উচিত –না, আমরা মানসিক ভারসাম্য বজায় রেখে চলব৷ নিন্দা–স্তুতি সুখ–দুঃখকে উপেক্ষা করে এগিয়ে চলব৷ একবার এক ধনশালী বৈশ্য ভগবান ৰুদ্ধকে গালি দিয়েছিলেন৷ ৰুদ্ধ তাতে অবিচলিত থেকে যান৷ ৰুদ্ধ সেই গালি গ্রহণ না করে সেই নিন্দা–কটূক্তি সেই ধনশালী বৈশ্যকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন৷

যখন জেলে ছিলুম, আমার বিরুদ্ধেও কিছু লোক নিন্দা–পবাদ রটিয়েছিল৷ আবার সেই নিন্দুকরাই আজ আমার প্রশংসা করছে কিন্তু আমি তাদের নিন্দা–স্তুতিতে সেদিন সম্পূর্ণ উদাসীন ছিলুম আর আজ তাদের প্রশংসারও অভিলাষী নই৷

(পটনা, ২৭শে অগাষ্ট, ১৯৭৮)