মনের ওপর মাইক্রোবাইটামের প্রভাব

লেখক
সমরেন্দ্রনাথ ভোৌমিক

মাইক্রোবাইটাম একটি অতি সূক্ষ্ম জীব৷ এই সমস্ত মাইক্রোবাইটামের মধ্যে যারা স্থূলতম তাদের দ্বারাই মহাকাশ হ’তে জীবপ্রাণ উৎসারিত হ’য়ে জড়ের মধ্যে প্রাণ স্পন্দন এসেছে৷ আর যে সমস্ত মাইক্রোবাইটামেরা আরও সূক্ষ্ম অর্থাৎ অতি শক্তিশালী অনুবীক্ষণ যন্ত্রেও ধরা পড়ে না, তারা দুই প্রকারের হয়৷ (এক) যে সব মাইক্রোবাইটামেরা অনুভূতিতে অর্থাৎ পঞ্চতন্মাত্রের (রূপ, রস, গন্ধ, শব্দ, স্পর্শ) মাধ্যমে কাজ করে৷ আর--- (দুই) যে সব মাইক্রোবাইটামেরা মানসিক সংবেদনে কাজ করে৷

যে সমস্ত মাইক্রোবাইটাম অণুবীক্ষণে ধরা দেয় না তারা বিশুদ্ধ তন্মান্ত্রে ধরা দেয়, তাদের অধিক্ষেত্র হ’ল মানব মন৷ এরা মানব-মনে থেকেই কাজ ক’রে থাকে৷ মানুষের অভুক্ত কামনা-বাসনা সংস্কার রূপে মৃত্যুর পরে বিদেহী মনের সঙ্গে থেকে যায়৷ এই সংস্কারযুক্ত যে সব বিদেহী মন ক্ষিতিতত্ত্ব ও অপতত্ত্বের দেহ পায়না কিন্তু এরা ত্রিভৌতিক তেজসতত্ত্ব, মরুৎতত্ত্ব ও বোমতত্ত্বের শরীর পায়৷ তখন এরা লুমিনিয়াস বডিতে Lumiious body) থেকে যায়৷ এদের বলা হয় ‘দেবযোনি৷’ এই দেবযোনিরা হ’ল এক ধরণের মাইক্রোবাইটাম৷ এই সমস্ত মাইক্রোবাইটামেরা সাত প্রকারের হয়৷ এরা হ’ল--- (১) যক্ষ, (২) গন্ধর্ব, (৩) কিন্নর, (৪) বিদাধর, (৫) বিদেহলীন, (৬) প্রকৃতিলীন, (৭) সিদ্ধ৷

যক্ষ মাইক্রোবাইটাম ঃ যক্ষ হল সেই মাইক্রোবাইটাম যারা মানব মনের মধ্যে থেকে মনে বিত্ত সঞ্চয়ের তীব্র অর্থ লিপ্সার আকুতি এনে দেয়৷ এই আকুতি ক্রমশঃ ক্রমশঃ এতই প্রবল হয়ে যায় যে, ধনসম্পত্তি সঞ্চয়ের জন্য মানুষ পাগল হ’য়ে যায়৷ তারপর এই সঞ্চয় বৃত্তিটি কঠিন মানসিক ব্যাধিতে পরিণত হয়৷ এই ব্যাধিটির নাম রাখা হয়েছে যক্ষরোগ৷ মাইক্রোবাইটামের প্রবক্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন---‘‘এই যক্ষরোগটি যক্ষারোগের চেয়েও ভয়ঙ্কর ও এই যক্ষরোগের কারণেই মানুষ মানুষকে শোষণ করে৷ এই যক্ষরোগের ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে পুঁজিবাদের এষণা৷’ মানুষ এই যক্ষ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অর্থ চিন্তায় উন্মাদ হয়ে যায় ও এক আদর্শ বিহীন মানুষে পরিণত হয়ে যায়৷ অর্থই যাদের একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান তাদের অর্থ-ধনসম্পত্তিকে তাই বলা হয় --- ‘যক্ষের ধন’৷

গন্ধর্ব মাইক্রোবাইটাম ঃ যে সকল মাইক্রোবাইটামেরা মানুষের মনে সঙ্গীতের প্রতি প্রবল অনুরাগ সৃষ্টি করে ও ললিতকলার স্পন্দন জাগায় সেই সমস্ত মাইক্রোবাইটাম গোষ্ঠীকে গন্ধর্ব দেবযোনি বলে৷ এই মাইক্রোবাইটামেরা মানুষের মনে থেকে তাকে সূক্ষ্ম কলা-চেতনা, নাচ-গানে উদ্বুদ্ধ করে উন্মাদ করে তোলে৷ এই সমস্ত মাইক্রোবাইটামেরা মিত্র স্বভাবের হয়৷ সংস্কৃতে সঙ্গীতের অপর নাম গন্ধর্ব বিদ্যা৷ তাই এদের গন্ধর্র্ব মাইক্রোবাইমাম বলে৷ এই সমস্ত মাইক্রোবাইটামেরা পৃথিবীর মানুষের কছে দ্যুলোকের ডাক পৌঁছে দিয়ে চেতনার আলোকে উদ্ভাষিত করে৷ যখন গায়ক বা নর্ত্তকরা সমবেত হয়ে সঙ্গীত অথবা নৃত্য করেন৷ তখন এই গন্ধর্বরা মানস দেহে, তাঁদের সংস্কার ও অতিস্নায়ুকৌষিক স্মৃতি সহ সেখানে পৌঁছে যান সঙ্গীতানুষ্ঠানে তাদের একাগ্র মনে শিল্পীরা গন্ধর্বের জ্যোতির্ময় দেহ দেখতে পান৷

কিন্নর মাইক্রোবাইটাম ঃ যে সমস্ত মানুষের মনে সৌন্দর্য ও রূপের অভীপ্সা তীব্রভাবে থাকে তারা মৃত্যুর পর আর পঞ্চভৌতিক শরীর পায় না৷ এদের এই সৌন্দর্য্যের প্রতি তীব্র কামনা-বাসনার আকাঙ্ক্ষা থাকার জন্যে মরণের পর এরা ত্রিভৌতিক শরীর পায়৷ এরাই হ’ল কিন্নর দেবযোনি বা মাইক্রোবাইটাম৷ এরা মানুষের মনকে যে ভাবনায় প্রেষিত করে তাকে বলা হয় কিন্নরীবৃত্তি৷ এই সমস্ত মাইক্রোবাইটাম যদি মিত্র হিসাবে কাজ করে তবে মানুষের মনকে চেতনালোকের দিকে নিয়ে গিয়ে চির সুন্দরের সঙ্গে সমাহিত করে দেয়৷ আর যদি শত্রু ভাবে কাজ করে তবে তাকে নিে যায় জড়ত্বের দিকে৷

বিদ্যাধর মাইক্রোবাইটাম ঃ যে সমস্ত মানুষ, মানুষ হিসাবে খুব ভাল ও এরা উন্নত মনের বড় সাধক কিন্তু এরা পরমপুরুষের ভুলে পরমপুরুষের কাছে শুধু বিদ্যার্জনকেই ধান-জ্ঞান করে ফেলেছে অর্থাৎ গুণ সংগ্রামের প্রতি প্রবল অনুরাগ নিয়ে চলে, এই ধরণের মানুষের বিদেহী আত্মা দেবােগি প্রাপ্ত হয়৷ এরা ত্রিভৌতিক (তেজ, মরুৎ, বোম) লিউমিনিয়াস বডিতে থাকে৷ এরা পাঞ্চভৌতিক শরীর পায় না৷ এই ধরনের দেবােনিকে বিদ্যাধর মাইক্রোবাইটাম বলে৷ বিদ্যাধর এক ধরণের পজেটিভ মাইক্রোবাইটাম৷ গুণ সংগ্রামের আকুতি যদি সৎকার্যে অথবা পরমপুরুষের গুন-কীর্ত্তনে ব্যায়িত হয়, তবে বিদ্যাধর মিত্র হিসেবে কাজ করে৷ কিন্তু নিজ স্বার্থের জন্য ও জড় জগতের কিছু পাওয়ার জন্য লালায়িত হয়, তবে এরা অরাতি-মাইক্রোবাইটাম হিসাবে কাজ করে৷

বিদেহ লীন মাইক্রোবাইটাম ঃ যে সব মাইক্রোবাইটামরা মানুষের মনকে স্থান হতে স্থানান্তরে ছুটিয়ে নিয়ে যায়, মানুষের মনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং দিগ্‌ভ্রান্ত ও দিশেহারা করে দেয়---এরূপ মাইক্রোবাইটামদের সমাহৃত গোষ্ঠী হ’ল বিদেহলীন৷

প্রকৃতিলীন মাইক্রোবাইটাম ঃ যে সমস্ত মানুষ জড়বস্তুকে ভোগের জন্য উন্মাদ হয় এবন মর্তি পূজা করে ও মূর্ত্তিটাকেই ভগবান বা ব্রহ্ম জ্ঞানে একাগ্র মনে মূর্ত্তিপূজায় উন্মাদ হয়ে চলতে থাকে, তখন বুঝতে হবে এর পিছনে কাজ করে চলেছে এক বিশেষ ধরণের মাইক্রোবাইটাম৷ এই ধরণের মাইক্রোবাইটামই হ’ল প্রকৃতিলীন৷ এই ধরণের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ইঁট, কাঠ, পাথরের মূর্ত্তিকে মনে মনে ধান করার ফলে এরা মৃত্যুর পরে ইঁট, কাঠ অথবা পাথর হয়ে জন্ম নেয়৷ মেন ভাবনা তেমনি সিদ্ধিলাভ হয়৷ ‘‘দৃশীভাবনা স সিদ্ধির্ভবতি৷’’ দীর্ঘদিন মূর্ত্তির কথা ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত প্রকৃতির সঙ্গে অকাত্ম হয়ে লীন হয়ে যায়৷ মানুষ যদি সৎসঙ্গে না থাকে, সদ্‌গ্রন্থ পাঠ না করে তবে তাদের মধ্যে অরাতি মাইক্রোবাইটাম (প্রকৃতিলীন) বাসা বাঁধে৷

সিদ্ধ মাইক্রোবাইটাম ঃ যত প্রকারের দেবােনি আছে তাদের মধ্যে সিদ্ধ মাইক্রোবাইটাম সর্বশ্রেষ্ঠ৷ এই সিদ্ধরা প্রপঞ্চময় জ্ঞাৎ থেকে পরমপুরুষের দিকে চলতে সাহায্য করে ও মনের মধ্যে প্রেরণা যোগায়৷ বৃহৎকে পাওয়ার জন্য আকুল করে তোলে৷ শুভকাজে বাঁধা এলে এই সিদ্ধরা বাঁধা সরিয়ে দেয়৷ কোথাও আধ্যাত্মিক সমাবেশ ঘটলে এই সিদ্ধরা ওই আধ্যাত্মিক সমাবেশে উপস্থিত হয়ে যান৷ এমনকি মন একাগ্র করে ন্কীর্ত্তন করতে করতে সাধকের মন অন্তর্মুখী হলে সিদ্ধরা দেখা দেন৷ এই সিদ্ধ মাইক্রোবাইটামরাই রাজাকে রাজমুকুট ফেলে সর্বতাগী সন্ন্যাসী হওয়ার জন্য হাতছানি দেয়৷