পশ্চিম বাংলার পূর্ণাঙ্গ বাজেট (ব্যয়মাত্রিকা) চমকপ্রদ হলেও স্থায়ী কোন আর্থিক সমস্যার সমাধান হবে না

লেখক
প্রভাত খাঁ

সরকার চালাতে হলে প্রতিবছরের আয় ও ব্যয়ের উল্লেখ করে একটি বাজেট রাজ্য সরকারকে বিধানসভায় পাশ করিয়ে নিতে হয়৷ এ বছর এমন সময় বাজেট পাশ করাতে হচ্ছে যখন লোকসভার নির্বাচন আসন্য৷ তাই এই সময় ভেবে চিন্তে বিরোধী দলের শাসককে রাজ্যের বাজেট পাশ করাতে হচ্ছে যাতে লোকসভার নির্বাচনে দলের প্রার্থীগণ কিছুটা সুবিধা লাভ করতে পারে সেই আশায় ভর করে৷ কারণ নির্বাচন হলো রাজনৈতিক দলের কাছে এক বড়ো বালাই অস্তিত্বের৷ তাই এই বাজেট হয়েছে এমন বাজেট যা নাকি কল্পতরু বাজেট৷ যদিও সরকার চরম আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে এগুচ্ছেন৷ কারণ কেন্দ্রের বিরোধী বিজেপি সরকার দল স্বার্থে রাজ্যকে জনসমক্ষে হেয় প্রতিপন্ন করতেই যেন কেন্দ্রের ন্যায় সঙ্গত আর্থিক প্রাপ্যটা নানা মিথ্যা ছলাকলায় বন্ধ করে রেখেছে! যার ফলে জনকল্যাণমূলক কাজগুলি প্রায় অনেকগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে!

তবে রাজ্য সরকার আর্থিক অসুবিধা সত্ত্বেও জনগণের আশা আকাঙ্খাপূরণের জন্য বর্তমান বাজেটে প্রায় সকল বিভাগের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছেন রাজ্যের তাতে আপাততঃ সকল রাজ্য কর্মচারী ও বিভিন্ন স্তরের নাগরিকগণ কিছু আশান্বিত হতে পেরেছেন৷

চরম বেকার সমস্যা সমাধান, বিভিন্ন সংস্থায় যে পদখালি আছে সেখানে লোক নিয়োগ সেটার কোন ইঙ্গিত এতে নেই৷ তাই এটাকে সার্থক বাজেট বলা যায় না৷ একটি কথা বার বার মনে পড়ে এদেশে যে ধরণের রাজনৈতিক দলের সরকার গণতন্ত্রের নামে চলছে সেটা হলো সংসদীয় গণতন্ত্র যেটা বার বার জ্যোতিবাবু বলতেন তাতে প্রকৃত গণতন্ত্রের চিন্তাধারা বাস্তবায়িত হয় না কারণ রাজনৈতিক দলগুলি মূলতঃ বিশেষ স্বার্থে ঘটিত কিছু সমমনোভাবাপন্ন ব্যষ্টির তাতে দলীয় স্বার্থটাই বাস্তবায়িত হয়৷ তাই দল মানেই দলাদলি ও লুটোপুটি সেটা দেখা গেল দীর্ঘ ৭৭ বছরের দলীয় শাসনে যারা মূলত ঃ অধিকাংশই ধনতান্ত্রিক আর্থিক ও সামাজিক ব্যবস্থার পক্ষপাতী৷ তাই এদেশের কোটি কোটি মানুষ চিরকালই সরকারের দ্বারা প্রতারিত ও বঞ্চিত হয়েই চলেছে৷ তাই এদেশের ৭০ শতাংশ সম্পদ মুষ্টিমেয় ধনীদের হাতে আর মাত্র ৩০ শতাংশ বাকিদের মধ্যে বর্তমান৷ চরম মূল্য বৃদ্ধির কারণেই মনে হয় এদেশে এক বছরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে ২ লক্ষ৷ ভাবতে পারা যায়! আর রাজনৈতিক দলগুলির পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ হোমরা চোমরারা নেতারা হলো জনগণের ভাগ্যবিধাতা! এরই কারণে ১৪২ কোটি মানুষের মধ্যে সিংহভাগ মানুষ হতদরিদ্র শোষিত ও রক্তশূন্য হয়ে কালাতিপাত করে চলেছেন! এই হলো সংসদীয় গণতন্ত্রের ছবি৷

দেশের কেন্দ্র সরকারের নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলিতে লক্ষ লক্ষ শূন্য পদে লোক নেওয়া হয় না৷ বিভিন্ন সংস্থায় কর্মী সংকোচ করেছে কেন্দ্র সরকার ৷ তাই কি বলা চলে এদেশের শাসন ব্যবস্থাকে ? কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা সমস্যা সংকুল পশ্চিম বাংলার সরকার চেষ্টার ত্রুটি করছেন না জনগণকে সেবা দিতে কেন্দ্রের শত বঞ্চনা সত্ত্বেও৷

কেন্দ্রের হাতে নোট ছাপাবার যন্ত্র আছে, আছে জি.এস.টির মতো মারাত্মক কর ব্যবস্থা যেটা নির্দয়ভাবে কর আদায় করছে! এদেশ নাকি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র!

চিরকাল বিশেষ করে দেখা যাচ্ছে ইংরেজ সরকার চলে যাওয়ার পর যে কটি দল কেন্দ্রে শাসনে এসেছে রাজনৈতিক দল প্রায় সবকটি ধনীদের সেবাদাস৷ মহান সংবিধানে বলা হয়েছে ভারত যুক্তরাষ্ট্র ধর্ম নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক, সাধারণ তান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক ও প্রজাতান্ত্রিক দেশ৷ বাস্তবে দেখছি কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিতে যে দলীয় সরকারগুলি বর্তমান তারা সংবিধানকে সঠিক মান্যতা দেন কী? জোর করে বিজেপি যে দল কেন্দ্রের শাসনে তারা হিন্দুত্ববাদী বলেই প্রচার করে থাকে তারাই বিশেষ ধর্মমত নিয়ে দলবাজি করে চলে আর সাম্রদায়িকতাকে অধিকাংশ নির্বাচনে সেটাকেই মান্যতা দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র জিয়িয়ে রেখেছে৷ এদেশে সেই গণতন্ত্রেরই নামে শাসনে মূলতঃ মানবিক মূল্য বোধটাই অস্বীকৃত! দেশের নেতারা দুর্নীতিতে ও দলবাজিতে মত্ত! এতে নাগরিকদের অধিকার ক্ষুণ্ণ্ হচ্ছে! সার্থক অর্থনীতি হলো প্রগতিশীল সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি৷ সেখানেই গণতন্ত্র স্বীকৃতি পায়৷ বিকেন্দ্রীক অর্থনীতিই হলো সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি আর কেন্দ্রীকৃত অর্থনীতি হলে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি যা শোষণের উপর সমৃদ্ধি বাড়ায় মুষ্টিমেয়র৷ যেটা ধনতান্ত্রিক দেশের শাসকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত৷ বাঁচ আর বাঁচতে দাও এটাই হলো মানবতাবাদীদের শাসন ব্যবস্থা৷ তাই প্রাউটের সমবায় ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিতে হবে৷ এতে অর্থের চলনটা (সার্কুলেশন হয়) ব্যাপক ও তাতে ক্রয়ক্ষমতা সকলের বৃদ্ধি পায়৷ তাই সরকারকে অবশ্যই সৎনীতিবাদী জনসেবক হতেই হবে৷ পরিশেষে বলি এই বাজেটকে সারপ্লাস বাজেট বলা যায় না এটা ঘাটতি বাজেট বলেই মনে হয়৷ কারণ পদে পদে রাজ্য সরকার অর্থ সংকটের ইঙ্গিত দেন৷ তবে জনকল্যাণে এই বাজেট পাশ করিয়েছেন৷ এতে জনগণও সন্তুষ্ট কিছুটা৷