রাজ্যপাল ও রাজনীতি

লেখক
মনোজ দেব

রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপাল৷ রাষ্ট্রপতি রাজ্যপালকে নিয়োগ করে থাকেন৷ যদিও কেন্দ্রের শাসক দলের মর্জি মতই রাজ্যপাল বাছাই করা হয়৷ তাই রাজনীতির রং থেকে রাজ্যপাল সম্পূর্ণ মুক্ত নন৷ তবু এই সাংবিধানিক পদটির মর্যাদা রক্ষা করতে রাজ্যপালের নিরপেক্ষ ভূমিকা অবলম্বন করাই শ্রেয়৷ কিন্তু সংসদীয় রাজনীতির পাঁকে পড়ে এই অরাজনৈতিক পদটি অনেক সময়ই রাজনীতির স্বার্থেই ব্যবহার করা হয়৷ বিশেষ করে রাজ্যের ও কেন্দ্রের শাসক দল যদি ভিন্ন মতাবলম্বী হয়৷ রাজ্যপাল নিয়োগ যেহেতু কেন্দ্রীয় শাসকদলের মর্জিমত হয়ে থাকে তাই রাজ্যপালের দলীয় আনুগত্য কেন্দ্রীয় শাসকদলের দিকেই থাকে৷ কেন্দ্রের শাসক দলও দলীয় আনুগত্য দেখেই রাজ্যপালকে চয়ন করেন৷ বিশেষ করে যে সব রাজ্যে বিরুদ্ধ দল শাসন ক্ষমতায় থাকে৷ তাই কেন্দ্রে শাসক দল পরিবর্তন হলেই রাজ্যে রাজ্যে রাজ্যপালদেরও সরে যেতে হয় মেয়াদ ফুরোবার আগেই৷

রাজ্যপালরা রাজনৈতিক জগৎ থেকে এলেও রাজ্যপাল  থাকাকালিন রাজনীতির উর্দ্ধে উঠতে হয়৷ রাজ্যপালদের রাজনৈতিক বিতর্কে না জড়ানোই সমীচীন৷

 কিন্তু সম্প্রতি কোন কোন রাজ্যপাল সৌজন্য হারিয়ে এই বিতর্কের মধ্যে প্রবেশ করে রাজ্যপাল পদের মর্যাদা হানি করছেন৷ কেন্দ্রের সব কেন্দ্রীয় শাসক দলই দলীয় স্বার্থে রাজ্যপালদের ব্যবহার করে থাকে৷ এই নিয়ে রাজ্যপাল ও রাজ্যের শাসক দলের মধ্যে বিরোধও বাধে৷ তবে রাজ্যপালরা কখনোই কোনও প্রকার রাজনৈতিক বক্তব্য রাখতেন না৷ যদিও অনেক সময়ই সাংবিধানিক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বা করতে বাধ্য হয়েছেন৷

কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে কোন কোন রাজ্যপাল প্রকাশ্যে এমন কিছু মন্তব্য করছেন রীতিনীতির বাইরে গিয়ে যা দল বা সংঘ পরিবারের নেতাদের কণ্ঠেই শোনা যায়৷  রাজ্যপালের ভূমিকা রাজনীতির ঊধের্ব উঠে সাংবিধানিক দায়-দায়িত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত৷ দলের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখেও সেই দায় দায়িত্ব পালন করা যায়৷ রাজ্যপালকে দিয়ে কেন্দ্রীয় শাসক দল এমন অনেক কাজ করিয়ে নিতে পারে যা অনৈতিক হলেও অসাংবিধানিক নয়৷ এই কাজে দিল্লীর সব শাসকদলই সিদ্ধহস্ত৷ তাই রাজ্যপাল বাছাইয়ের সময় থেকেই রাজনীতির শুরু হয়৷ যেখানে প্রশাসনিক দক্ষতা ও নৈতিক আচার-আচরণ অপেক্ষা দলীয় আনুগত্যই প্রধান মাপকাঠি হয়৷ অবশ্য দল ও রাজনীতির ঊধের্ব উঠে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের নিদর্শনও কোন কোন রাজ্যপাল রেখে গেছেন৷ কিন্তু তাঁরা সংখ্যায় খুবই কম৷

পশ্চিমবঙ্গের  বর্তমান রাজ্যপাল শাসক দলের প্রতি আনুগত্য দেখাতে এমন ধরণের মন্তব্য করে বসছেন যাতে তারাও রাজনীতির বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন৷ যে ধরণের মন্তব্য রাজনীতির নেতাদের মুখে শোভা পায় রাজ্যপালের মুখে তেমন কথা মানায় না৷ সম্প্রতি ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচনে জয়ী হওয়া শাসকদলের বিধায়কের শপথ নিয়ে রাজ্যপাল যে রাজনীতি করছেন তা অত্যন্ত নিম্নমানের নিকৃষ্ট রাজনীতি৷ এতে তিনি দলের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখলেও  ও দলীয় নেতাদের মনোতুষ্টি করলেও রাজ্যপাল পদের মর্যাদা হানি করেন৷ এইভাবে সাংবিধানিক দায়দায়িত্বের বাইরে গিয়ে রাজ্যপাল ও রাজনীতি যদি এক হয়ে যায় তবে রাজ্যে রাজ্যে রাজ্যপালের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ণ উঠবে৷