শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্যে চাই আদর্শ রাজনীতি

লেখক
হরিগোপাল দেবনাথ

সামাজিক অস্থিরতা, সাংসৃকতিক অবক্ষয় অর্থনৈতিক বিপর্যয়, প্রশাসনিক অথর্বতা, শাসক শক্তির ক্লীবতা, রাজনীতির অসাড়তা, জনজীবনে আসুরিক দৌরাত্ম্যের কারণে নিরাপত্তার অভাব ও দুর্নীতির একাধিপত্য---এত সব যে অবাঞ্ছিত বিড়ম্বনা আজ সর্বত্রই মারাত্মকভাবে প্রকটিত৷ এর পেছনে শুধু একটাই কারণ বিদ্যমান রয়েছে বলেই এক মহামানবের সিদ্ধান্তমূলক ঘোষণা৷ অবশ্য তিনি অন্যান্য অধিকাংশ অর্থাৎ শতকরা ৯৯ শতাংশ রাজনীতিক, ঐতিহাসিক, দার্শনিক, তাত্ত্বিকদের মত শুধু ঘোষণাকরেই ক্ষান্ত থাকেন নি৷ উপরে উল্লিখিত সমস্যাগুলিই তো শুধু নয় এ ধরণের আরো অজস্র রকমের ছোট কিংবা বড় মাপের সমস্যাগুলি রয়েছে৷ বলতে গেলে মানব দেহে যেমন স্নায়ুগুলো সারা দেহ জুড়ে জাল বিছিয়ে রয়েছে তদ্রুপ সমস্যাসমূহের জালও ছড়িয়ে রয়েছে সমাজ দেহের সর্বত্র, আনাচে-কানাচে ও বিন্দুতে বিন্দুতে৷ আর এরই কারণে গোটা মানব সমাজে আজ নেমে আসছে প্লাবনের চাইতেও আরও মারাত্মক আরও ভয়াবহ দুর্নীতির মহাপ্লাবন, যার তোড়ে ভেসে যাবার সম্ভাবনা পৃথিবীর বুক থেকে মানব-সভ্যতা মায় মানুষের অস্তিত্বও---তিনি এই সমস্যাগুলির সমাধানের পথও দিয়েছেন৷
আমাদের ভারত যুক্তরাষ্ট্র৷ এই পৃথিবীময় সমস্যাজালের ভেতরেই আবদ্ধ এক রাষ্ট্র৷ সুতরাং ভারতেও বিরাজ করছে একই পরিস্থিতি৷ সারা ভারত আজ সমস্যাময় জর্জরিত, ভারতের প্রশাসন ন্যুব্জ, ভারতের শাসককুল সমস্যা-নিয়ন্ত্রণে শ্যাম রাখি না কুল রাখি৷ এ অবস্থা পৃথিবী জুড়ে মানবতা ধূলি লুণ্ঠিত৷
তারপর তুলে ধরছি আমাদের ঘরের কথা অর্থাৎ আমাদের রাজ্য ত্রিপুরার কথা৷ ত্রিপুরা যেহেতু ভারত যুক্তরাষ্ট্রেরই অঙ্গরাজ্য বিশেষ আবার ভারত নিজেই পৃথিবীর চলমান রাজনীতির এক মুক্তাঙ্গন৷ তাই ত্রিপুরা রাজ্যও কোনমতেই উপরে বর্ণিত অবক্ষয়প্রাপ্ত, আগাগোড়াই দুর্নীতিগ্রস্ত রাজ্য প্রশাসন তথা ঘূণে ধরা রাজনীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলা যেতে পারে যে, বিগত তেত্রিশ বছর ধরে বামপন্থী তথা মার্কসবাদীদের শাসনে এ রাজ্যের প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পাপ ঢুকেছে৷ এমন কোন দুষ্কর্ম নেই যা ত্রিপুরায় সংঘটিত হচ্ছে না, এমন কোন একটি অপকর্মও নেই যা এখনকার শাসকদলীয় ক্যাডার কিংবা মাফিয়া ডনরা অভ্যাসগতে নেওয়া থেকে বিরত রয়েছে, এ রাজ্যে যা-কিছু ঘটেছে ও প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে, সেগুলোর অধিকাংশের নজির কোন তালিবানিরা করেছে বা করছে কিনা বলা যায় না, কোন আফ্রিকার জংলীগোষ্ঠীর সদস্য রাও সেই নজির রেখেছে কিনা জানা নেই কিংবা কোন মধ্যযুগীয় বর্বররা কখনও করেছে কিনা কেথাও আমাদের অজানা৷
এ রাজ্যে বিচারালয় বা আদালত রয়েছে৷ আদালতে বিচার-বিভাগ কর্তৃক নিযুক্ত বিচারকরা রয়েছেন, থানায় পুলিশ-দারোগারা রয়েছেন, সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের জন্যে আইনজ্ঞরাও রয়েছেন৷ এমতাবস্থায় শোষকশক্তি কত বড় সৈরাচারী হয়ে উঠলে থানা-পুলিশ আইন-আদালত সবই অগ্রাহ্য করে পার্টি-ক্যাডাররা বিচারের ভার তাদের হাতে তুলে নিতে পারেন, সহজেই অনুমেয়৷ উদাহরণ স্বরূপ, লালমাটি, জয়ন্তীবাজার, আগরতলা শহরের সন্নিকটে চন্দ্রপুর কালীবাড়ীর চন্দ্রপুর বিশালগড়ে নারী-নির্যাতনের ঘটনাক্রম ক্যাডারদৌরাত্ম্যের উৎকৃষ্ট প্রমাণ৷ আর এ সব কয়টিই হল পার্টি-ক্যাডারদের বিচারের নামে নারী-নির্যাতনের ঘটনা৷ কিছুদিন আগে কমলপুর ডিগ্রি কলেজের এসএফআই-র ছেলেরা তাদের বিরোধী মনোভাবের এক সহপাঠীকে মুখে পেচ্ছাপ করে শায়েস্তা করতে চেয়েছে! গত প্রায় দু-দশক ধরে ছেলেমেয়েরা কলেজে ভর্তি হতে চাইলে আগেই এসএফআইয়ের তালিকাভুক্ত হয়ে তাদের ফাণ্ডে চাঁদা দিতে হয়, নতুবা কলেজ কর্তৃপক্ষেরও এসএফআইয়ের ধমক শুণতে হয়৷ আছে কোন জংলী, হার্মাদ বা তালিবান শাসনে এমন সব ঘটনার নজির?
নারী নির্যাতনের পরেই আসছে এ রাজ্যে নারী, শিশু, নাবালিকা ও গৃহবধূ, বিধবা সহ বৃদ্ধাদের ওপরও পাশবিক অত্যাচারের কথা৷ এমন একটিওদিন বাদ পড়ছে না, যে দিন খবরের কাগজে এ ধরণের খবর ছাপা হয় না; কাজেই সহজেই অনুমেয় রাজ্যের নৈতিকতা কোন্ স্তরে গিয়ে নেমেছে; এ রাজ্যে সহোদর ভাই তার সহোদরা বোনকে , শ্বশুড় তার ছেলের বউকে, পিতা তারই কন্যাকে, রাস্তায় ভবঘুরে বা বিকৃত মস্তিষ্ক নারীকে অজানা পুরুষ পুঙ্গব কর্তৃক বলাৎকারের নজীরের অভাব নেই; কুমারী মা হওয়া, বিধবার কোলে সন্তান আসা যেমন এ রাজ্যে সম্ভব তেমনি শিক্ষক কর্তৃক পড়ুয়া মেয়ের শ্লীলতাহানিও ঘটছে---পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পায়৷ মাত্র সেদিনের কথা সাব্রুমের চার নাবালিকা কালী পূজোর রাতে পূজো দেখে বাড়ী ফেরার পথে চার যুবক তাদের মুখে চাপা দিয়ে জঙ্গলে নিয়ে যায় ও বলাৎকারের উদ্যোগ নেয়৷ মেয়েরা চিৎকার করলেও পূজো মণ্ডপের মাইকের আওয়াজে সেই কান্নার রব চাপা পড়ে যায়৷ কিছু সময় পরে পাশ দিয়েই যখন অন্যান্যরা বাড়ী ফিরছিল তখন নাবালিকাদের আর্তরব শুণে জঙ্গলে ঢুকলে তাদের হাতে ওই দুষৃকতীরা ধরা পড়ে যায়৷ পথচারীরাই তাদের এসপির হাতে তুলে দেয় ও ধর্ষিতাদের নিজ নিজ বাড়ীতে পাঠায়৷ কিন্তু থানা থেকে ও তাদের কোনরূপ জামিনদার ইত্যাদি ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া হয় ও বলাৎকারের ঘটনা নথিভুক্ত করার সময় এমন কারসাজিতে থানাবাবুরা লেখেন যাতে বলাৎকারেরই প্রমাণ থাকে না৷ উপরন্তু পার্টির লোকদের পক্ষ থেকে পরবর্তী সময়ে ধর্ষিতাদের পরিবারের লোকজনদের ভয় দেখানো হয় যে, কেউ যেন আদালতে না যায়, এমনকি থানাকেও চাপ না দেয়৷ এতে কী বোঝা গেল থানাবাবুরা পার্টির দলদাস, আইন এখানে শিশু ভোলানো ছড়া৷ আর এইসব পাশবিক অত্যাচারের মত সমাজ গর্হিত কাজও পান্তাভাত মাত্র৷ বলাৎকার পান্তাভাত ও মামুলি ঘটনা হিসেবে পরিগণিত হওয়ার সুবাদেই ধর্ষণের পর খুনও যে অহরহ হচ্ছে না তা নয়৷ খুনের পর প্রমাণ লোপাট করতে পারলেই তো হয়ে গেল শোণা যায়, এইসব বলাৎকারের বিচারও পার্টির ঘরে বসেই মীমাংসা করা চলে৷ এরপরও কি বলা চলে না যে, আমাদের প্রিয় ত্রিপুরা আমাদের সাধের ত্রিপুরা, আমাদের স্বর্ণযুগের স্বর্ণিম ত্রিপুরা, আমাদের বাম-জামানার উন্নয়নের ত্রিপুরা আসলে বলাৎকারের বাস্তব স্বর্গরাজ্য যার তুলনা একমাত্র এই ত্রিপুরাই৷ খুব সম্ভবত, এ কারণেই দিল্লীর রিপোর্ট অনুসারে নারী-নির্যাতনে ও ধর্ষণে ত্রিপুরা নাকি শীর্ষস্থানে বিরাজ করছে৷ খুন, সন্ত্রাস, উগ্রবাদ---এখানে বাম-জমানার শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ একথাও নিঃসন্দেহে বলা চলে৷ ধর্ষণের মত খুনটাও এ রাজ্যে এখন জলভাত যে ব্যবসা-সংক্রান্ত, কালোবাজারি মদ, গাঁজা, ফেনডিলের বখরা নিয়েই খুন হোক কিংবা রাজনৈতিক খুনই হোক, খুনী কিন্তু সহসা ধরা পড়বেই না যদি কায়দা করে ম্যানেজ করা যায় কেননা, পুলিশ ও থানাবাবুদের সিংহভাগই যেহেতু পার্টির দলদাস৷ তাই, ইয়েদের সঙ্গে একটু বোঝাপড়া করে নিলেই অনায়াসে জল্লাদিপনা চালানো যায়৷ সহৃদয় পাঠকবর্গ সিধাই, মোহনপুর, মহকুমা, কালীবাজারের সিরিয়্যাল খুনের কথা নিশ্চয়ই মনে রেখেছেন ইদানিং মাত্র কয়েকদিন আগে সংশ্লিষ্ট থানা-কর্তৃপক্ষ সজাগ হলেন৷ আশ্চর্যজনক নয় কি এই কাঞ্চনপুর মহকুমার কাশীরামপাড়ায় আর এক রাজ্য থেকে আগত শরণার্থীরা দিনের বেলায় পুলিশ-টিএস-দের সামনে একুশটি পরিবারের বাড়ীঘর লুটে নিল, ১৭৬টির মত গবাদী পশু চুরি করলও বাসিন্দাদের দেড় শতাধিক ঘরও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিল৷ অথচ এ রাজ্যের করিতকর্মা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আজ্ঞাবহরা দুষৃকতকারীদের একটি কেশাগ্রও স্পর্শ করার সাহস পেল না৷ এতে কী বোঝা গেল পেছনে রাজনৈতিক হিংস্রতা অথবা দুরভিসন্ধি লুকানো ছিল না বলতে চাইবেন আর বললেই তা মেনে নিতে হবে বলে ভাবছেন? আরও কিছু কথা রয়েছে যেগুলো, আজ বিশেষ করে রাজ্যে যখন দু দুটো কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ফলাফলের প্রতি রাজ্যবাসী উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে রয়েছেন বলেই বলতে হচ্ছে৷ এ রাজ্যে লাগামহীনভাবে যে দ্রব্যমূল্য বেড়ে চলেছে এতে কি রাজ্য সরকার ও প্রশাসন একেবারেই দায়ী নয় বলবেন? কোন কোন জিনিষের, নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্যস্তর অধিকাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, অথচ প্রশাসন নির্বিকার, নীরব কেন? সরকারীভাবে দেখার ও ভাবার ও কিছু একটা করার কোনই উদ্যোগ নেই কেন? সরকার ও প্রশাসন নীরব কাদের স্বার্থে ও কেন---সে কি পুঁজিপতি মহাজনদের স্বার্থে অথবা রাজ্যেরই গরীব মেহনতি মানুষদের স্বার্থে?
রাজ্য সরকারকে রাজ্যের বেকারদের নিয়ে প্রতারণার পর প্রতারণা করে চলেছেন৷ এরও পেছনে কে মার্কসবাদী ফন্দিবাজদের গূঢ়তম ষড়যন্ত্র রয়েছে তা কিন্তু আমরা অনেকেই তাকিয়ে দেখি না৷ আর আমাদের যুবসমাজ এ রাজ্য হতাশায় ও হীনমন্যতায় ভুগছে বলেই তারা অধিকাংশ শাসকদলের লেজুরবৃত্তি করছে, অনেকে ভীরুতার শিকার হয়ে কাঁপছে, কিন্তু প্রতিবাদের ঝড় তুলতে সাহস পাচ্ছে না৷ তদ্রুপ রাজ্য-সরকারের কর্মচারীগণের একাংশ মাতাল লম্পট, চরিত্রহীন ও নিষ্ঠুর স্বামীদের হাতে রোজরোজ লাকড়ির বারি, লাথি, কিল, চুলটানা খেতে না পাওয়ার কষ্ট ও অত্যাচার সবই যেমন নীরবে সহ্য করে গুম মেরে থাকে অথবা মধ্যযুগীয় বাদী ক্রীতদাসীর মত সর্বস্ব খুইয়ে দিয়েও মালিকের পদসেবায় রত থাকে, ঠিক তন্দ্রুপ গরীবের বন্ধু সরকারটির পদলেহনে রত নতুবা এত প্রতারণাও বঞ্চনার পরও তাদের কোন চেতনাই জাগছে না কেন?
এছাড়া এই রাজ্যে চাষীভাইরাও এই বাম-সরকারের স্বৈরাচার, স্বজন-পোষণ ও দলবাজির চরম শিকারে পরিণত৷ তারাও প্রকৃত অর্থেই সংঘটিত নন বলেই প্রতিবাদের ঝড় তুলতে পারছেন না৷ অথচ, রাজ্যবাসীর খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা আনতে হলে ও চাষীসাধারণেরও বাঁচার জন্যে রাজ্যের কৃষি - ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতেই হবে এ জন্যেও চাই রাজ্য থেকে বাম-শাসনের অবসান৷
আরও একটি কথা ত্রিপুরা প্রাচীনকাল থেকেই উষর মাটির দেশ এ রাজ্যের পাহাড়-ঘেরা অনেক ভূমি এখনও কুমারী মৃত্তিকা যাতে চাষাবাদ করলে অনায়াসেই সোণার ফসল, অর্থকরী পণ্যাদি উৎপন্ন হবে, ত্রিপুরা সহজেই অর্থনীতিতে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে৷ কিন্তু, প্রচুর পরিমাণে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সুদীর্ঘকাল যাবৎ অর্থাৎ বিগত কংগ্রেসী আমল, জোট আমল ও বর্ত্তমানের বাম-আমলের শাসকেরা সেই ধরণের সদিচ্ছা নিয়ে আর উপযুক্ত পরিকল্পনার দ্বারা এ জাতীয় ব্যবস্থা নিতে মোটেই আগ্রহী নয়৷ এই জাতীয় শাসকরা কেবলই ক্ষমতা দখল আর ভোগের লালসায় রাজনীতি আঁকড়ে থাকেন ৷জনগণেরই সার্বিক স্বার্থে এদের আজ হটাতেই হবে আর এ জন্যেই চাই আমাদের অর্থাৎ রাজ্যবাসীদের বাস্তব ক্ষেত্রে কিছু কাজ হাতে তুলে নেওয়া৷
এখানে প্রশ্ণ হল, কী সেই কাজ যা জনগণকে হাতে তুলে নিতে এগিয়ে আসতে হবে৷ এর জবাবে এখানে প্রথমেই যে কথাটি বলতে হচ্ছে, তা হল এই যে প্রবহমান রাজনীতিতে বর্তমানে এ রাজ্যে যতগুলো রাজনৈতিক দল---সর্বভারতীয়, আঞ্চলিক রেজিষ্টার্ড নন-রেজিষ্টার্ড ইত্যাদি সব কয়টি রাজনৈতিক দলই কেবলমাত্র একটি ছাড়া রাজনীতি চালাচ্ছে দিশা বা মূল লক্ষহীনভাবে কেননা ওই দলগুলো প্রকৃতপক্ষেই আদর্শহীন ও নৈতিকতাবর্জিত৷ স্রেফ ব্যষ্টিস্বার্থ বা গোষ্ঠীস্বার্থ বড়জোর দলীয় স্বার্থ আর ক্ষমতাভোগ৷ আর তা দখলে রাখা ছাড়া অন্য কোন সচিচ্ছা সেই দলগুলোর নেই কিনা তাই৷ নয়তো আমরা দেখছি নিজের ইজম বা মতামতেরও কোন বালাই ওদের নেই৷ যে কারণেই ওরা কখন দল পাল্টাতে পারে, দল ভেঙ্গে আবার নোতুন দল বানাতে পারে, দলে দলে কু-রটাতে পারে, জোট বানাতে পারে, জোট ভাঙতেও পারে নীতি বা আদর্শের বাঁধন নেই বলেই৷ সেটা সম্ভবনিজস্ব নীতি থাকলে এরকমটি সম্ভব হত না মোটেই৷ কংগ্রেস দল যদি গান্ধীবাদের কথা মুখে আওড়ায় কাজে নেই, আবার সেই গান্ধীবাদও কোন দলীয় আদর্শের পর্যায়ভুক্ত নয়৷ গান্ধীবাদীরা আসলে পুঁজিবাদেরই তল্পিবাহক বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেস সবাই তো কংগ্রেস দলটির অপভ্রংশ মাত্র৷ আর বামেরা যদি মুখে মুখে মার্কসবাদের শ্লোগান দিয়ে বোকা বানিয়ে, আসলে ওরাও সেই কংগ্রেসীদের চাইতেও বেশী ধুরন্ধর ও পুঁজিবাদেরও দালাল মাত্র৷ এছাড়া মার্কসবাদী হল আগাগোড়া একটি ভুল মনস্তত্ব, তাই অকালে এর মৃত্যু ঘটেছে৷
পাঠকবর্গ নিশ্চয়ই মনে আনতে পারছেন, এ লেখাটিরই গোঁড়ার দিকে আমি এক জায়গায় তিনি বলে একটি শব্দ উল্লেখ করেছি আবার একটু আগে উল্লেখ রেখেছি একটি মাত্র দলের কথা নীতি--আদর্শের রাজনীতির কথা বলতে গিয়ে এবার বলছি এই একটিমাত্র দল হচ্ছে আমরা বাঙালী দল৷ি আমরা বাঙালী দলটিই একমাত্র নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতা ভিত্তিক দল৷ আর এই দলের রাজনৈতিক আদর্শ হল প্রগতিশীল সমাজতন্ত্র৷ উল্লেখ্য যে, পূর্বে উল্লেখিত সেই তিনি হচ্ছেন প্রাউট দর্শনের রচয়িতা দার্শনিক ও সমাজতত্ত্ববিদ শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার৷ তাঁরই রচিত সামাজিক-অর্থনৈতিক দর্শন হচ্ছে প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব বা সংক্ষেপে প্রাউট৷ বস্তুত, এই প্রাউট-ই মানব সমাজের যাবতীয় সমস্যাবলীর একমাত্র অর্থাৎ বিকল্পহীন সমাধান৷ উক্ত প্রাউট দর্শনের ভিত্তিতেই আমরা বাঙালী দলটি মানব সেবার উদ্দেশ্যে, বিশ্ববাসীর কল্যাণার্থে শোষণমুক্ত ও বিভেদমুক্ত সমাজ গঠন করে বিশ্বরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলনে ব্রতী৷
পরিশেষে বলব, সিপিএম প্রমুখ বামপন্থী ও কংগ্রেস প্রমুখ ডানপন্থী দলগুলির কোনটারই হাতে সামাজিক-অর্থনৈতিক দর্শন নেই বলেই ওরা স্বৈরাচারী, দূর্নীতিপরায়ণ, দলবাজ বলার অপেক্ষা রাখে না৷