সেকালের বড় বড় জানোয়াররা অথর্ব হয়ে যেত তারা তখন একটি নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে ভূমিশয্যা গ্রহণ করত ও কয়েকদিন পরে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করত৷ কোন কোন পণ্ডিতের মতে ওইসকল স্থানে মৃত পশুর অস্থি ও বসা জমে যেত৷ স্থানটি সমুদ্রের নিকটবর্তী ত্রিজলা এলাকা হলে সমুদ্রগর্ভে বা ৰৃহৎ হ্রদগর্ভস্থ স্থানে যে জলপাক বা কুম্ভীপাক বা দহ সৃষ্টি হত শেষ পর্যন্ত তাদের দেহাবশেষ ওই দহে ঘুরপাক খেতে খেতে ভাসা দ্বীপে বা সারগাসো সী-তে (সরসাগর) পরিণত হত৷ এই সারগাসো সী বা সর-সাগরের উপরিস্থিত মাটি জলের বেশ গভীরেও যেত৷ অতীতে প্রাণীদেহ থেকে যেখানে সারগাসো সী তৈরী হত, বেশ কিছু পণ্ডিতের মতে আজ আমরা সেখানেই ভূ-গর্ভ থেকে তেল পাচ্ছি৷
ওই সকল ৰৃহদাকার পশুদের মৃত্যুভূমি সমুদ্রের নিকটবর্তী না হয়ে যদি কোন দেশের অভ্যন্তরে হত সেক্ষেত্রে তাদের দেহাবশেষ ও বসা জলে ভেসে যেত কিন্তু অস্থি জমে হয়ে যেত অস্থির পাহাড়, হাড়ের পাহাড়৷ এই অস্থির পাহাড় কালবশে চূনাপাথর বা ডলোমাইট বা ঘুটিং-এ পরিণত হত৷ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এই বস্তু পুড়িয়ে পাওয়া যায় চূণ---যাকে কথ্য ভাষায় আমরা পাথুরে চূণ বলে থাকি৷ জলজাত কঠিন চর্মযুক্ত জীবেদের খোলা (শামুক, ঝিনুক, শাঁখ, গুগ্লি প্রভৃতি) পুড়িয়ে যে চূণ করা হয় তাকে কথ্য ৰাংলায় বলা হয় কলি চূণ৷ দক্ষিণ ৰাঙলায় বাড়ীতে চূণকাম করাকে বলা হয় কলি ফেরানো৷ এই কলিচূণ আর কাতা দড়ির ব্যবসা কেন্দ্র করে যে স্থানটিতে জমে উঠেছিল সেই স্থানটি আমাদের আজকের ‘কলিকাতা’---ওড়িয়ায় ‘কলিকতা’৷ যাইহোক, পাথুরে চূণই হোক বা কলি চূণই হোক দুই-ই জীবাস্থিরই পরিণতি৷ তাই যাঁরা পাণে কলিচূণ খেতে চান না জান্তব এই জেনে, তাঁদের মনে রাখা উচিত পাথুরে চূণও জান্তব৷ হস্তীযূথের অরণ্যচারী প্রাচীনকালের প্রতিটি হাতীই মৃত্যুর সময় লোকলোচনের আড়ালে চলে যেত৷ এখন হাতীর আর স্থায়ী বাসভূমি নেই৷ মানুষের ভয়ে তারা আজ এ অরণ্য থেকে ও অরণ্যে ঘুরে বেড়ায়৷ তাই তাদের আজ কোন নির্দিষ্ট মৃত্যুভূমি নেই৷