সমাজ আন্দোলন দেশের সংহতি ও অর্থনৈতিক বুনিয়াদ সুদৃঢ় করবে

লেখক
মনোজ দে

স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও ভারতবর্ষ সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে খুবই দুর্বল৷ সমাজের ভিতর যেমন সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত বিদ্বেষ সামাজিক ঐক্যের পরিপন্থি তেমনি অর্থনৈতিক বৈষম্য রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে দুর্বল করছে৷ পুঁজিবাদ নির্ভর কেন্দ্রিত অর্থনীতি এই সামাজিক অর্থনৈতিক সমস্যার মূল কারণ৷

প্রাউট এই সমস্যার সমাধানে ভারতবর্ষকে ৪৪টি সামাজিক অর্থনৈতিক জনগোষ্ঠীতে বিভক্ত করে সমাজ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে৷ আমরা বাঙালী এই সমাজ আন্দোলনের অগ্রপথিক তাই যারা ‘আমরা বাঙালী আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও প্রাদেশিকতা বলে প্রচার করে তারা পুঁজিবাদী শোষকের হয়ে কথা বলে, ‘আমরা বাঙালী’র আদর্শ ও চিন্তাধারা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ৷ দেশের বর্তমান সমস্যা সম্পর্কেও তাদের সম্যক ধারনা নেই৷ হয়তো বা সবকিছু জেনেও শোষকের ইঙ্গিতে নেচে চলেছে৷

অর্থনৈতিক বৈষম্য ও সামাজিক ভেদ-বিভেদ দেশের সংহতির প্রধান অন্তরায়৷ যে দেশে মুষ্টিমেয় মানুষ বিলাস-ব্যসনে সম্পদের  অপচয় ক’রে  আর লক্ষ লক্ষ মানুষ অনাহারে অর্দ্ধাহারে দিন কাটায় সেখানে সামাজিক ঐক্য গড়ে ওঠা সম্ভব নয়৷ প্রাউট প্রবক্তার ভাষায়---‘‘সমাজের মধ্যে যদি একতা আনতে হয়, সর্বপ্রথম যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পার্থক্য, উচ্চ-নীচ মনোভাব রয়েছে তাকে দূর করতে হবে৷’’ ‘‘আমরা বাঙালী’’র সমাজ আন্দোলনের লক্ষ্য এই সামাজিক অর্থনৈতিক  ভেদ-বিভেদ ও বৈষম্য দূর করে প্রাউটের আদর্শে সুসন্নিবদ্ধ সমাজ ঘটন করা৷ এখানে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও প্রাদেশিকতার প্রশ্ণ নেই৷ বরং আমরা বাঙালী চায় শাসক ও শোষকের সুবিধার্থে তৈরী  প্রদেশগুলির পুনর্গঠন করে সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা৷ ‘আমরা বাঙালী’র আন্দোলন শুধু বাঙালী জনগোষ্ঠীর আন্দোলন নয়, ভারতবর্ষের ৪৪টি জনগোষ্ঠী ও বিশ্বের ২৫০টিরও বেশী জনগোষ্ঠীর শোষণ মুক্তির আন্দোলন৷

ভৌগোলিক অবস্থান, জল-হাওয়া, নদী - পাহাড় - পর্বতের ঘটনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী৷ তাদের আহার-বিহার, আচার-আচরণ সাংসৃকতিক অভিব্যক্তিতে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য৷ প্রকৃতিগত বৈচিত্র্যের এই বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেই জনগোষ্ঠীগুলির মধ্যে মৈত্রী ও সংহতি গড়ে তুলতে হবে৷ ‘আমরা বাঙালী’ আদর্শগতভাবে মানে মানুষের সমাজ এক ও অভিন্ন৷ কিন্তু প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের সঙ্গে জনগোষ্ঠীগত বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় অর্থনৈতিক সমস্যা ও সম্ভাবনা ও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ভিন্ন৷ তাই প্রতি জনগোষ্ঠীর ভাষা-কৃষ্টি-সংসৃকতি ও নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলি বজায় রেখে এক আদর্শের পতাকা তোলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমস্ত প্রকার সামাজিক অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে এক শোষণমুক্ত মানবসমাজ ঘটনের আন্দোলনে নেমেছে৷ প্রাউট প্রবক্তা বলেছেন---‘প্রত্যেকটি মানুষকে বোঝাতে হবে পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ প্রত্যেকের সাধারণ সম্পত্তি৷ সবারই একে ভোগ করার জন্মগত অধিকার রয়েছে৷ এই অধিকারে হস্তক্ষেপ করা কখনই চলবে না, এই অধিকার অর্জনই প্রাউটের সমাজ আন্দোলনের লক্ষ্য৷