সমাজের সার্বিক বিকাশে চাই বাস্তবমুখী পরিকল্পনা

লেখক
পত্রিকা প্রতিনিধি

ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক শোষণই হ’ল সব ব্যর্থতার মূল কারণ৷ মনে রাখতে হবে সাধারণ মানুষ কোন মতাদর্শের ধার ধারে না৷ তারা দু’মুঠো খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে চায়৷ সেই স্থানে যদি শোষণ ও বঞ্চনা হয় তাহলে তারা অবশ্যই রুখে দাঁড়ায়৷ দেশে দেশে শোষণের ছলাকলার পরিবর্ত্তন ঘটিয়ে ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিশ্ব কব্জা করেছে৷ এমনকি যারা ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক সময়ে বড় বড় কথা বলে জনগণকে নিজেদের দিকে টেনে এনেছিল, শেষে তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা তাদের ওই ধনতন্ত্রের অক্টোপাশের বন্ধনেই আবদ্ধ করে ফেলে৷ তাই রাশিয়া ও চীন সেই ধনতন্ত্রেরই পায়ে ফুল দেয়৷ আর চীন মিথ্যাচারিতা করে কমিউনিজমের গালভরা বুলি কপচাচ্ছে৷ ভারতের মিশ্র অর্থনীতিও ব্যর্থ৷ পুঁজিবাদের দিকে ঢ়লে পড়েছে ভারতের যুক্ত রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা৷ ১২১ কোটির বেশী লোক আজ বাস করে এদেশে৷ কয়েক বছরের মধ্যে লোকসংখ্যা বাড়বে৷ যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন হওয়া দরকার তা হচ্ছে না৷ আজও উন্নত কৃষির দেখা নেই৷ মৌসুমী বায়ুর দয়ার ওপর দেশ নির্ভরশীল৷ চাষে নিযুক্ত চাষীরা কখনো জলের অভাবে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে আবার কখনো বন্যায় ফসল নষ্ট হয়৷ সেচের জলের ঠিক মতো যোগান নেই৷ উন্নত সার ও বীজ নেই৷ চরম বেকার সমস্যায় দেশ জর্জরিত৷ কিছু সরকারী কর্মচারী, বেসরকারী কর্মচারী, আর এম এল এ, এম পি, মন্ত্রীদের মাসিক বেতন বাড়িয়ে কি দেশের উন্নতি করা যাবে মোট জনসংখ্যার সিংহভাগ আজ নানা সমস্যায় ধুঁকছে৷ শোষণ চরম সীমায় পৌঁছেছে৷ গরীবের মুখের খাবার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে৷ লোভী ব্যবসাদাররা অত্যধিক লাভের আশায় বাজার আগুন করে রেখেছে৷ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যেন নীরব দর্শক৷ সমস্যার কোন সুরাহা নেই৷ বিকেন্দ্রিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উৎপাদন বৃদ্ধি না করতে পারলে, সমস্যার সমাধান হবে না৷ দু’একটা ধনীর অঙ্গুলি হেলনে ‘সেজ’, বহুমুখী বিক্রয়কেন্দ্র খুলে কোনদিন সমস্যা মিটবে না৷ চাকুরীর আশায় গ্রামের শিক্ষিতরা নগর ও শহরে ছুটে আসছে৷ তাতে নগর ও শহরের সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে৷ তাই ব্লকে ব্লকে কৃষি ভিত্তিক ও কৃষি সহায়ক কুটির শিল্প গড়ে তুলে মানুষকে বিশেষ করে যুব শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে৷ ফলে গ্রামের ছেলে মেয়েরা গ্রামেই জীবিকা নির্বাহ করে গ্রামকে শক্তিশালী করে তুলবে৷ এতে সন্তুলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সৃষ্টি হবে৷ সমস্যাটা কমবে৷ এ দেশের সংবিধানে সমবায়কে মূল্য দেওয়া হয় কিন্তু ধনীদের পৃষ্ঠপোষকে পরিচালিত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলো সেই সমবায়কে বাড়তে দেয়নি৷ সমবায়কে ধ্বংস করে দিয়েছে সরকার ও সরকারের সাকরেদরাই৷ ভারত কৃষিপ্রধান দেশ৷ এর নাম ভারত হয়েছে এই কারণে যে এদেশে ভরণপোষণের ও মানসিক বিকাশের পূর্ণ সুযোগ রয়েছে৷ আজ সেই ভারত ভিখারীতে পরিণত হয়েছে৷ গণতন্ত্রের নামে আদর্শ ও নীতিহীন দলগুলো রাক্ষসের মতো লুটেপুটে খাচ্ছে৷ আর ওই পুঁজিবাদী হাঙ্গরদের মুখে সব সম্পদকে ঠেলে দিচ্ছে৷ আজ এই দেশ কিছু লোকের কাছে লুঠের স্বর্গরাজ্য আর সিংহভাগ মানুষের শত অত্যাচার, অনশনে দিনযাপনের মর্মান্তিক ছবিটা সত্যই বেদনাদায়ক৷ আজ ডাস্টবিনের খাবার কুড়িয়ে খেয়ে বা অনাহারে প্রতিদিন সারাভারতে কত মানুষ যে দিন কাটাচ্ছে তার হিসাব নেই৷ অনাহারে প্রতিদিন সারা ভারতে মানুষ মরছে৷ চাষী গলায় দড়ি দিয়ে মরছে৷ শ্রমিক বেকারত্বের যন্ত্রণায় আত্মহত্যা করছে৷ আর দেশের সরকার মদের দোকানের লাইসেন্স দিয়ে দেশের তরুণ–তরুণীদের নেশায় আকৃষ্ট করে মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতাকে কবরে পাঠাচ্ছে৷ এছবি সবাই দেখছে কিন্তু কারোরই যেন কিছু করার নেই৷ ঋণ করে সরকার দেশ শাসন করছে৷ রাজসুখ ভোগ করছে বছরের পর বছর৷ এই মর্মান্তিক করুণ ব্যর্থতাকে যদি নিয়ন্ত্রণ না করা হয় তাহলে আগামী দিনে দেশের বুকে যে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে সেকথা সুনিশ্চিত৷ দলবাজিতে, দুর্নীতিতে দেশ ভরে গেছে৷ সারা দেশে তো সৎ নীতিবাদী নেতার অত্যন্ত অভাব৷ সবাই লুটে পুটে খাচ্ছে দেশটাকে৷

আজ মানুষকে বুঝতে হবে ধনতন্ত্র ও মার্কসবাদের পথে মানুষের কল্যাণ নেই–চাই নোতুন আদর্শ৷ প্রাউটের আদর্শেই আজ দেশ গড়তে হবে৷ এছাড়া কোন উপায় নেই৷

বর্তমান অর্থনীতি প্রসঙ্গে প্রাউট প্রবক্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন–‘‘আজ অর্থনীতি বস্তাপচা তত্ত্ব কথার কচ্কচানি ছাড়া আর কিছুই নয়৷ একে অধিকতর বাস্তবমুখী করতে হবে.....অর্থনীতি হবে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও প্রয়োগ ভৌমিক বিজ্ঞান, আর একে বিশ্বের সর্বস্তরের মানুষের, সর্বজীবের তথা সর্ব অস্তিত্বের সার্বিক কল্যাণের স্বার্থে বিকশিত করতে হবে৷’’

প্রাউটের বাস্তবমুখী আর্থিক পরিকল্পনার প্রাথমিক লক্ষ্যই হল প্রতিটি মানুষের জীবনধারণের প্রাথমিক প্রয়োজনগুলির পূর্তি৷ এই প্রয়োজনগুলি হল অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা৷ প্রাউট প্রবক্তার কথায়– এই প্রয়োজন পূর্তি না হলে কখনও সামগ্রিকভাবে মানুষ জাতির উন্নতি সম্ভব নয়৷

প্রাউট চায় বর্তমান পুঁজিবাদ নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীত অর্থনীতির খোলনলচে পালটে প্রাউটের বিকেন্দ্রিত আর্থিক পরিকল্পনার প্রতিষ্ঠা–যেখানে ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের ভাষাকৃষ্টি ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ও অর্থনৈতিক সমস্যা ও সম্ভাবনা বিচার করে এক একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা৷ সেখানে আর্থিক ক্ষমতা থাকবে প্রতিটি সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থানীয় মানুষের হাতে৷