সুস্থ শরীর সুস্থমন নেশামুক্ত আদর্শ জীবন

লেখক
আচার্য শান্তশিবানন্দ অবধূত

বর্তমান যুগটা হ’ল হাইটেক যুগ৷ এই হাইটেক যুগেও আমাদের সমাজ সংসার আজ হাজারো সমস্যার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে৷ ব্যষ্টি তথা সমষ্টি জীবন সর্বত্রই চলছে চরম অরাজকতা–চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা৷ এক ভয়ঙ্কর জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই আমরা এগিয়ে চলছি ধীরে ধীরে হয়তো ধংসেরই দিকে....৷

হাইটেক যুগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে একদিকে আমাদের জীবনযাত্রা আজ অনেকটাই সহজ সরল–অনেকটা সুখের–আরামের৷ জীবনকে আরও সুখের ও আরাম করার লক্ষ্যে মানুষ আজ গ্রহ গ্রহান্তরে পাড়ি দিচ্ছে, মহাকাশে বিচরণ করছে৷ সুখের উপকরণ খুঁজতে সাগর–মহাসাগর তোলপাড় করছে৷ পাতালেও সাম্রাজ্য বিস্তার করছে৷ বিজ্ঞানের কল্যাণে মাটির এই পৃথিবীকে স্বর্গের চেয়েও সুন্দর করার চেষ্টা চলছে৷

অপরদিকে আজকের এই তথাকথিত সভ্য সমাজে মানুষের মানবিক গুণগুলি দিন দিন যেন লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে৷ দয়া, মায়া, মমতা ইত্যাদির বদলে মানুষের চরিত্রে হিংসা, ঘৃণা, ক্রোধের মত বিভিন্ন পাশবিক গুণের বৃদ্ধি হচ্ছে৷ খুন সন্ত্রাস দাঙ্গা হাঙ্গামা আজকের নিত্য–নৈমিত্তিক ঘটনা৷ ভয়ে আতঙ্কে অশান্তিতে চরম টেনশানে দিন কাটছে৷ হতাশা আর নিরাশায় অনেকেই দিশাহারা হয়ে আজ নেশার আশ্রয় নিচ্ছে৷ মারাত্মক সব নেশার কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে৷ পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক শান্তিতে বিঘ্ণ ঘটাচ্ছে৷ নেশার ছোবল থেকে রেহাই পায়নি কিশোর–তরুণ–ছাত্রর্৷ যুব সমাজ আজ পঙ্গু হতে বসেছে...৷ নেশার কারণে হাইটেক সভ্যতার সুন্দর আকাশে ধংসের কাল মেঘ যেন ক্রমশঃ ঘনিয়ে আসছে৷ মারাত্মক নেশার কারবারীরা অবাধে সাম্রাজ্য বিস্তার করে চলেছে৷ জনদরদী সরকারের কল্যাণে ড্রাগের মত মারাত্মক মাদক সহ হরেক রকম নেশাদ্রব্যের কারবার আজ রমরমিয়ে চলছে শহর–নগর–গ্রাম– সর্বত্র৷ এই ভাবে চলতে থাকলে এই সমাজ সভ্যতা শেষ হয়ে যেতে আর বেশিদিন লাগবে না৷ নেশা আজকের আধুনিক সভ্যতার মারাত্মক এক অভিশাপ৷

না–এইভাবে চলতে পারে না, চলতে দেওয়া যায় না৷ নেশার হাত থেকে সমাজকে বিশেষ করে ছাত্র–যুবকদের যে কোন মূল্যে রক্ষা করতেই হবে৷ এই কাজ যতই কঠিন হোক না কেন–সমাজের চিন্তাশীল বিবেকবান মানুষেরা–যুবক ভাইয়েরা এগিয়ে এলে অনায়াসেই তা করা সম্ভব৷ এর জন্যে নিয়মিত সেমিনার, সভা ইত্যাদির মাধ্যমে অভিশপ্ত নেশা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে৷ নেশা নির্মূল অভিযান শুরু করতে হবে৷ সর্বপ্রকার মাদক বিরোধী তীব্র গণ আন্দোলন সংঘটিত করতে হবে৷ এর জন্যে সবার সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন৷

পি. এম. এস. এ ত্নব্জপ্সন্ধব্জন্দ্বব্ ত্তন্দ্বুক্সব্দ ত্রহ্মন্ব্জন্ব্ধব্ভ্ত্রপ্ ট্টব্দব্দপ্সন্তুন্ত্রব্ ব্যবস্থাপনায় ও পরিচালনায় ভারত তথা বহির্ভারতের বিভিন্ন যায়গায় চলছে নেশা নির্মূল অভিযান৷ মারাত্মক ড্রাগের নেশায় আসক্তদের চিকিৎসায় সুস্থ করে তুলে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংঘটনকে নিয়ে ত্নপ্পব্দ্ত্র যৌথ ভাবে নেশা বিরোধী গণআন্দোলনও সংঘটিত করছে৷

মানুষের জীবনটা ত্রিস্তরীয়–শারীরিক মানসিক ও আধ্যাত্মিক৷ জীবনের প্রকৃত সাফল্য পেতে গেলে এই তিনটি স্তরেই উন্নতি ঘটাতে হবে৷ ত্রিস্তরীয় উন্নতির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানসম্মত মানসাধ্যাত্মিক যোগ সাধনা একটি নির্ভরযোগ্য উপায়৷ জাতি–ধর্মমত নির্বিশেষে যে কোন মানুষ যোগসাধনার অভ্যাসের দ্বারা শরীর–মনকে সুস্থ সবল করে জীবনকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে গড়ে তুলতে পারেন৷ পি এম এস এ’র পরিচালনায় যোগ সেমিনার ও যোগ শিবিরের মধ্য দিয়ে শহর–নগর–গ্রাম– সর্বত্রই বিনামূল্যে বিজ্ঞানভিত্তিক যোগসাধনা শেখানোর ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে৷ বিজ্ঞান ভিত্তিক এই যোগ সাধনা পদ্ধতিতে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের কোন স্থান নেই৷

নিয়মিত যোগসাধনা অভ্যাস করলে শরীর মন সুস্থ সবল থাকে৷ মানসিক শক্তি বেড়ে যায়৷ ফলে মনকে একাগ্র করা সহজ হয়, স্মৃতি শক্তি ও চিন্তা শক্তি বেড়ে যায়, মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়৷ যাবতীয় মানসিক অবসাদ ও টেনশান দূর হয়ে মনে শান্তি আসে৷ ছাত্র, যুবক, কিশোর, বালক–যে কেউ নিজের ঘরে বসে সহজেই এই যোগ সাধনা অভ্যাস করে নিজের ত্রিস্তরীয় উন্নতি ঘটাতে পারে৷

অনেক সমস্যার সমাধান হয় বলেই, অনেক উপকার পাওয়া যায় বলেই, আজকের হাইটেক যুগেও এই আধ্যাত্মিক যোগসাধনা গোটা বিশ্বে দ্রুত প্রসার লাভ করছে৷

তাই যোগসাধনা অভ্যাস করে নিজের জীবনকে সুন্দর ও আনন্দময় করে তুলুন, অন্যকেও উদ্বুদ্ধ করুন৷