(১) ‘ট’ যে কেবল একটি বর্ণবিশেষ তা নয়৷ এটি একটি শব্দও বটে৷ অনেক শব্দের মতই এটিও একটি একাক্ষর শব্দ৷ ‘টস্’ ধাতুর মানে ‘তীক্ষ্ন আওয়াজ করা’৷ ধাতুটি মুখ্যতঃ পরস্মৈপদী হলেও ক্কচিৎ কোথাও কোথাও আত্মনেপদী ব্যবহারও দেখা যায়৷ মানুষ মুখ দিয়ে যে হুইস্লের মত আওয়াজ করে সেজন্যেও সংস্কৃতে ‘টস্’ ধাতু চলবে৷ এই অর্থে ‘টস্’ ধাতু+ ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ট’ শব্দ পাচ্ছি তার ভাবারূঢ়ার্থ হচ্ছে ‘সহসা উত্থিত তীক্ষ্ন ধবনি’৷ আর যোগারূঢ়ার্থে হচ্ছে ‘ধনুক থেকে তির নিক্ষেপের সময় ধনুকের ছিলায় যে শব্দ সৃষ্ট হয় সেই শব্দটি’৷ ধনুকের ছিলার শব্দকে ‘ট’ লি আর তাই থেকেই আমরা পাই ‘টন্’+ কার= টঙ্কার/টংকার৷ তহলে ঝলে ‘ট’ শব্দের একটি অর্থ হ’ল ধনুকের ছিলার ধবনি৷
(২) ‘টস্’ ধাতুর আরও একটি অর্থ হ’ল ‘ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া’, ‘হ্রাসপ্রাপ্ত হওয়া’, ‘কমে যাওয়া’ বা ক্ষয়ে যাওয়া---To wane, to erode . এই অর্থে ‘টস্’+ ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ট’ শব্দ পাচ্ছি তার অর্থ হ’ল ‘কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ, অপর একটি অর্থ ‘বামন’ বা ‘বেটে মানুষ’৷
(৩) ‘টক্’ (টকি) ধাতুর অর্থ ‘বেঁধে ফেলা’ অথবা ‘বেঁধে খণ্ড-বিখণ্ড করা’৷ ধাতুটির টঙ্কতি/টঙ্কতে, টঙ্কয়তি/টঙ্কঁয়তে চার ধরণের রূপই চলতে পারে৷ এই অর্থে আমরা ‘টক্’ (টকি) ধাতুর উত্তর ‘ড’ প্রত্যয় করে ‘ট’ শব্দ পাচ্ছি৷ ‘ট’ শব্দের অর্থ হ’ল ‘পৃথিবী’ বা যে কোন গ্রহ বা ‘উপগ্রহ’৷ পৃথিবীকে ‘ট’ বলা হয় এই কারণে যে পৃথিবী সূর্যের সঙ্গে শক্তি সংযোগে বাধা রয়েছে৷ পৃথিবী ইচ্ছা করলে ছুটে গিয়ে অশ্লেষা বা মঘা নক্ষত্রের চারপাশে ঘুরতে পারে না৷ সে উল্কা নয় যে সে একটা তারা বা উপগ্রহের পরিভূ থেকে বের হয়ে আর একটা তারা বা উপগ্রহের গায়ে ছুটে এসে পড়বে৷ এই পৃথিবী সূর্যের বন্ধনে বদ্ধ৷ তাই এর একটা নাম ‘ট’৷ পৃথিবীর অন্যান্য নামগুলির সঙ্গে লোকে যতটা পরিচিত ‘ট’ নামের সঙ্গে লোকে যতটা পরিচিত নয়৷ পৃথিবীর অন্যান্য পর্যায়বাচক নাম হ’ল---
‘‘ভূ-ভূমি-ধরা-ধরিত্রী-সর্বংসহা-বসুমতী৷
গোত্রা-কু-পৃথিবী-পৃথ্বী-ক্ষমাবনী-মেদিনী-মহী৷৷’’
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘু নিরক্ত থেকে সংগৃহীত)