উজান

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

উৎ-যা+অনট্‌৷ ঊধর্ব দিকে বা ওপরের দিকে যে গতি তাকে উজান বলা হয়৷ নদীর স্বাভাবিক গতি পাহাড় থেকে সমুদ্রের দিকে অর্থাৎ ভাটির দিকে৷ নদীর গতি যদি সমুদ্র থেকে পাহাড়ের দিকে হয় অর্থাৎ তা যদি অস্বাভাবিক বা উল্টো হয় তবে তাকে বলা হবে উজান৷ নৌকো যখন ভাটির দিকে যায়, সে তখন স্রোতের টানেই এগোয়৷ তার সঙ্গে যদি বায়ু অনুকুল থাকে, তাহলে পাল তুলে দিলে তো কথাই নেই৷ মাঝি কেবল হাল ধরে বসে থাকলেই হল৷ দাঁড়িদের কাজ থাকে না বললেই চলে৷ সেই সময় লোকে গলা ছেড়ে সুদীর্ঘ টান দিয়ে যে গান গেয়ে থাকে সেই ভাটির দিকের গতিতে গাওয়া গানকে বাংলায় ‘ভাটিয়ালী’ বলা হয়ে থাকে৷ গতি সমুদ্র থেকে পাহাড়ের দিকে হয় অর্থাৎ উজানে হয়, তাহলে দাঁড়িদের অপরিসীম পরিশ্রম করতে হয়৷ হেঁইয়ো, হেঁইয়ো করে কর-চালনাকে প্রোৎসাহিত করতে হয়৷ সেই সময়ে গলা ছেড়ে উচ্চৈঃস্বরে গান গাওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার৷ লম্বা টান দেওয়া তো আরো অসম্ভব৷ এই অবস্থায় অর্থাৎ উজানের পথে গাওয়া গানকে বলা উচিত উজানিয়া বা উজিয়ালী৷ কিন্তু াংলায় এই ধরণের গানকে সাধারণতঃ ‘ভাওয়াইয়া’ বলা হয়ে থাকে৷ বাঙলার নদীর উজানের অংশে বসবাসকারী মানুষকে উজানী বা উজানিয়া লা হয়৷ অসমেও তাই লা হয়৷ যেমন শিবসাগর, তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড় প্রভৃতি অঞ্চলকে বলা হয় ‘উজান অসম’৷ আর কামরূপ, নগাঁওকে লা হয় ‘ভাটি অসম’৷ বাঙলার উজানী অঞ্চলের মানুষ ভাটি অঞ্চলের মানুষকে ‘ভাটিয়া’ বলে থাকে৷                 (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘু নিরক্ত থেকে সংগৃহীত)