প্রবন্ধ

ধনসঞ্চয়ের স্পৃহা ও সমাজ আন্দোলন

খগেন চন্দ্র দাস

‘‘আনন্দসূত্রম’’ দর্শন গ্রন্থের অন্তর্গত পঞ্চম অধ্যায়ের দ্বাদশ সূত্রে বলা হয়েছে---‘‘সমাজ দেশেন বিনা ধনসঞ্চয়ঃ অকর্তব্য৷’’ এই সূত্রটিকে আর্থ সামাজিক দর্শন ‘‘প্রাউট’’ এর পঞ্চ মৌলিক সিদ্ধান্তের প্রথম সিদ্ধান্ত হিসেবে ধরা হয়৷ অর্থাৎ এই সূত্রের বাস্তবায়ন ব্যতিরেকে প্রাউট প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়৷ সূত্রটির একটি অতি সংক্ষিপ্ত বিবরণ যা দর্শন স্রষ্টা তুলে ধরেছেন তা একান্ত আবশ্যক বলেই আমরা উদ্ধৃত করছি৷

‘চোর’ বলে চোর ধরো

প্রভাত খাঁ

যদি আমাদের জন্মভূমি পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করতো  বিদেশী শাসক ইংরেজদের বিতাড়িত করে তাহলে হয়তো আমরা এক সুন্দর পূর্ণ স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশ পেতুম ও তখন এই বিশাল ভারতবর্ষ হতো পূর্ণ স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশ৷ তা কি হয়েছে? হয়নি৷ কিন্তু দেশকে রক্তাক্ত করে খণ্ড খণ্ড করে যে অধিকার পেয়েছি সেটি প্রশ্ণাতীত নয়৷ যাঁরা দেশ শাসনের অধিকার পায় তাঁরা নিজেদের মতো করে দেশের সাধারণ মানুষদের বুঝিয়েছেন!

শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘‘রোমান-সংস্কৃত বর্ণমালা’’

সুকুমার সরকার

পুঁজিবাদী বিশ্বায়ন নয় একুশ শতকের নোতুন পৃথিবীর দাবী ‘‘আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধির পথ ধরে বিশ্বৈকতাবাদের প্রতিষ্ঠা’’! পুঁজিবাদী বিশ্বায়ন যেখানে বিশ্বের সকল বৈচিত্র্যকে ধবংস করে মানুষের চাহিদা  ও যোগানকে একই স্তরে নামিয়ে আনতে মরিয়া বিশ্বৈকতাবাদ সেখানে বৈচিত্র্যের মধ্যে মিলনের প্রয়াস করতে সচেষ্ট৷ বর্তমান বিশ্ব আজ এই দুই দ্বন্দ্বের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে৷ আর এই দ্বন্দ্বের নিস্পত্তির ওপর নির্ভর করছে বিশ্ব কোন্‌ দিকে ধাবিত হবে বৈচিত্র্যহীন পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের দিকে, নাকি আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধির পথ ধরে বিশ্বৈকতাবাদ প্রতিষ্ঠার  দিকে? মানুষের ভাষা-সংস্কৃতিও আজ এই প্রশ্ণের মুখোমুখি৷

আপ্তবাক্য

আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত

আমি তোমাদের বলব কোনো অবস্থাতেই পাপের সঙ্গে হাত মিলাবে না, পাপকে সহ্য করবে না, পাপী যদি তোমার অতি নিকটজনও হয়, ঘরের লোকও হয় তবুও তার মুখ দেখবে না৷ সত্য পথে চলবে ও মানুষ গড়ে তুলবে৷ সুশিক্ষায় পশুও মানুষ হয়, দেবতা হয়৷ আমি বলব এ কথাটা তো ঠিক৷ এর অতিরিক্ত আরও একটা কথা কী?---না, পাপীকে অবস্থার চাপে ফেলে তাকে ভালো হতে বাধ্য করো৷ দুষ্টু লোকের চারপাশে এমন একটা প্রাচীর রচনা করো যে তার বাইরে বেরিয়ে গিয়ে সে আর পাপ করতে না পারে,তার থোঁতা মুখ ভোঁতা হয়ে যায়, চিরদিনের জন্য তার শিক্ষা হয়ে যায়৷ একটা দুষ্টু লোক যদি ভালো হয়ে যায় তাতে বিশ্বমানবতার কল্যাণ, লাখ লাখ মানুষের কল্যাণ, লক্ষ লক

আপ্তবাক্য

আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত

‘‘তান্ত্রিকদের কর্তব্য হচ্ছে স্থূলতা, অসাম্য ও ভীতম্মন্যতার বিরুদ্ধে নিরলস সংগ্রাম করে যাওয়া৷ সমাজে সত্যিকারের সাম্য কখনোই আসতে পারে না যদি বিচারের মাপকাঠি  গুণগত না হয়ে শুধু সংখ্যাভিত্তিক হয়৷ সেই জন্যেই আজ যারা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজেদের পরিশীলিত বা উদ্দীপিত করে তোলেন নি, তাদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি তাই গণতন্ত্রের মাধ্যমে নয়, যারা সত্যিকারের তান্ত্রিক তাদের হাতে দায়িত্ব অর্পন করে বা ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে পৃথিবীতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সত্যিকারের সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷ কেননা একাজ অ-তান্ত্রিকের নয়, তান্ত্রিকদের দ্বারাই সম্ভব৷ অবশ্য মানসিক তথা, আধ্যাত্মিক অধিক্ষ

শিক্ষা

রত্নেন্দু দাশ

আজ যা কিছু অঘটন ঘটছে তার মূলে রয়েছে শিক্ষা৷ আমরা অনেকেই মনে করি যা সবার জীবনে নূ্যনতম চাহিদা হল তিনটি, সেগুলো হল অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান কিন্তু জগতকল্যাণসুন্দর বিশ্বগুরু তথা মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার আরও দুটো জিনিসকে জুড়ে দিয়েছেন তা হল শিক্ষা ও চিকিৎসা৷ তিনি এগুলোকে কেন জুড়ে দিলেন এই তিনটির সাথে এটা আবার কেউ কেউ প্রশ্ণ করেন কারণ কেউ কেউ মনে করেন জীবনে কোনরকম খেয়েদেয়ে বাঁচতে পারলেই হল৷ কিন্তু না৷ প্রথমে আমাদের  ক্ষুধা নিবারণের জন্য অন্ন চাই তারপর থাকার জন্য চাই বাসস্থান সাথে বস্ত্র তো আছেই কিন্তু এগুলো দিয়ে কি হবে যদি অকালে জীবনটা চলে যায় তাই তিনি বললেন নূ্যনতম চাহিদা হল চিকিৎসা এর

শতবর্ষে গীতিকার ও সুরকার শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার

খগেনচন্দ্র দাস

শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯২১ সনের বৈশাখী পূর্ণিমার পুণ্য প্রভাতে৷ অর্থাৎ বর্তমান সময় থেকে এক শতাব্দী আগে৷ জন্মশতবর্ষে দাঁড়িয়ে বিরল ও বহুমুখী প্রতিভার  এক অনন্য উদাহরণ এই ব্যষ্টিত্বের কর্মমূখর জীবনের এক অতি সংক্ষিপ্ত  চিত্র তুলে ধরার অপূর্ণ ও অক্ষম প্রয়াস এই নিবন্ধে৷ তিনি একাধারে দার্শনিক, গীতিকার, সুরকার সমাজবিদ, ভাষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, কৃষিবিদ, প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব বা প্রাউট দর্শনের প্রণেতা, সর্র্বেপরি নব্যমানবতাবাদের উদগাতা৷ আজ আমরা এই বহুধাপল্লবিত ব্যষ্টিত্বের শুধু সঙ্গীত  সৃষ্টি নিয়ে আলোকপাতের প্রয়াস করব৷ তাই আশা করি  সঙ্গীতের গুরুত্ব সম্পর্কে সামান্য ভূমিকা

শিক্ষক দিবসের গুরুত্ব

জ্যোতিবিকাশ সিন্‌হা

প্রতি বছর ৫ সেপ্ঢেম্বর দিনটি আমাদের দেশে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালিত হয়৷ বস্তুত এই ‘শিক্ষক দিবস’ পালনের তাৎপর্য্য অত্যন্ত ব্যাপক৷ শিক্ষককুলের প্রতি যথোচিত সম্মান প্রদর্শন ও ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের মেলবন্ধনই এই দিবসের প্রধান উপজীব্য৷ অতি প্রাচীন কাল থেকেই গুরুশিষ্য পরম্পরা এক অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ৷ পূর্বে গুরুগৃহে শিষ্যরা অবস্থান করে বিদ্যাভ্যাস ও অন্যান্য শিক্ষা লাভ করতো৷ পরবর্তীকালে তাঁরা সেই শিক্ষার সুফল বৈয়ষ্টিক জীবনে ও সামাজিক জীবনে প্রতিফলিত করার প্রয়াসী হতেন৷ এমনকি রাজপরিবারের সন্তান-সন্ততিরাও এই একই ব্যবস্থাপনার মধ্যেই শিক্ষিত ও প্রতিপালিত হ’ত৷ গুরুর কাছে শিষ্য ছিলেন অতি প্রিয় সন্তানসম

কৈবর্ত বিদ্রোহ ঃ পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম সুসংগঠিত গণবিদ্রোহ

সুকুমার সরকার

সৃষ্টির আদি থেকেই মানুষকে প্রতিকূল পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে সংগ্রাম করতে করতে এগিয়ে আসতে হয়েছে৷ কখনো এককভাবে বিচ্ছিন্ন কখনো সংঘবদ্ধভাবে৷ সেসব সংঘবদ্ধ সংগ্রাম কীভাবে সংঘটিত হতো তার একটি অনুমান আমরা করতে পারি৷ কিন্তু ঐতিহাসিক সূত্র উল্লেখ করে নির্দিষ্টভাবে বলতে পারি না, অমুক সংগ্রাম বা অমুক বিদ্রোহ অমুক সময়ে, অমুক, অমুকের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছিল৷ বিশেষ করে মানুষের সমাজে রাষ্ট্র ও রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর রাজার বিরুদ্ধে সাধারণ গণমানুষের গণ-বিদ্রোহের কথা৷ এ ব্যাপারে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম যে গণ-বিদ্রোহের কথা  জানতে পারা যায় সেটা হলো ‘‘কৈবর্ত বিদ্রোহ’’৷ একক কারও নেতৃত্বে প্রজাদেরকে সুসংগঠিত করে কোনো

প্রাউটের দৃষ্টিকোন থেকে তিন প্রকারের জীবিকা

মানুষের রয়েছে তিন ধরনের জীবিকা –– শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক জীবিকা৷ কিন্তু পশুদের জীবিকা হ’ল কেবল একটি –– শারীরিক জীবিকা৷ তাই পশুদের যদি খাবার জুটে গেল তো তারা দিব্যি খুশীতে দিন কাটিয়ে দেয়৷ কিন্তু মানুষের তেমনটি হয় না, মানুষ কেবল দু’মুঠো খাবার পেলে অর্থাৎ তার দৈহিক জীবিকার পূর্ত্তি ঘটলেই সে তৃপ্ত হতে পারে না৷ মানুষ চায় তার মনের জীবিকা পূরণ করতে, আধ্যাত্মিক ক্ষুধার আত্যন্তিকী নিবৃত্তি বা আত্মিক জীবিকারও পূর্ত্তি ঘটাতে৷ মানসিক জীবিকা বলতে এখানে কি ৰোঝান হচ্ছে?