ভারতে করোনার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার এর ২০২১-২২ সালের আর্থিক বছরের আয়ব্যয়মাত্রিকা পেশ করা হয়েছে মাননীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতার মনের দ্বারা৷ এই আয়ব্যয় মাত্রিকা বেশ কিছুক্ষেত্রে বিলগ্ণিকরণের উল্লেখ আছে৷ এতে যে দেশের হতদরিদ্র লোক প্রাণে বাঁচার সুযোগ পাবেন তা আশা করাই বৃথা, কারণ দেশটি চলছে পুঁজিবাদী শাসকদের দ্বারা৷ অদ্যাবধি দেখা যাচ্ছে এ সরকার যা করে চলেছেন তা সকল ক্ষেত্রে ধনীদেরই জয় জয়কার৷ সরকার আর্থিক ক্ষেত্রে একেবারেই জি.ডি.পির মান শূন্যের নীচে এ দাঁড় করিয়েছেন৷ লক্ডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ১২ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ৷ কিন্তু ১০০ জন ধনকুবের লক্ডাউনে ৩৫ শতাংশ সম্পদ বাড়িয়েছেন৷ সম্প্রতি অক্সফ্যাম ‘‘ইন ই কম্যুনিটি ভাইরাস’’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ এই প্রতিবেদনে ভারতের অর্থনৈতিক বৈষম্যের করুণ অবস্থার চিত্রফুটে উঠেছে৷ ধনীব্যষ্টিগণ যাঁদের নাম বর্ত্তমানে সকলের মুখে কারণ এঁরাই হলেন ভারতের ভাগ্যবিধাতা৷
আশ্চর্য লাগে সরকার প্রায় একবছর উৎপাদন বন্ধ করে দেশটাকে অকেজো করে রাখলো৷ কর্মক্ষমদের অকেজো করে এক গরিব দেশকে পঙ্গু করে দিলো৷ সবক্ষেত্রেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশ ছোঁয়া হলো উৎপাদন বন্ধ করে৷ কোটি কোটি মানুষ হয়ে পড়লো পথের ভিখারী! যাঁর যা ছিল সবই নষ্ট হলো!
বিলগ্ণিকরণ করে দিলে কারা সেটি কিনবেন? না, সেই ধনীরাই৷ তাঁরা নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করবেন, আয়ের বৃদ্ধি ঘটাতে উৎপাদন ব্যয় বাড়াবেন৷ লাভ অত্যধিক করতে সেই শ্রমিকদের উপর নির্যাতন হবে ও দেশ প্রচণ্ডভাবেই শোষিত হবে৷ মোদ্দাকথা আর্থিক শোষণে ভারত একেবারে আরো পঙ্গু হয়েই পড়বে৷ তাই বিজেপির বাজেট (আয় ও ব্যয়মাত্রিকাকে কোন ধনী ব্যষ্টির সংঘটন একটি বাক্যও ব্যয় করেন নি কারণ এতে তাঁদেরই পোয়াবারো৷ আর সর্বনাশ কোটি কোটি হতভাগ্য দেশ বাসীর ৷
‘রাম বলে একটি প্রচলিত শব্দ আছে৷ আর এই শব্দ কেনা, বেচা, দুঃখী শব্দের সঙ্গে যুক্ত করলে হয় কেনারাম, বেচারাম আর দুঃখীরাম আর একটি শব্দ হয় ‘রাম রাম’!
(ঘৃণা ও দুঃখ প্রকাশ করতে এই শব্দ ব্যবহৃত হয়৷)
এদেশের প্রথম দিকে যেমনই স্বাধীনতা হোক না কেন কিছু কেনারামের শাসকদল কাজ করেন৷ পরে ধনীর তোষণ করতে গিয়ে সবকিছু ধীরে ধীরে খুইয়ে বসে দেশ৷ এসে দাঁড়ায় বেচারামের শাসকদলের হাতে বর্ত্তমানে আর হতভাগ্য হলেন জনগণ সেই দুঃখীরাম বা দুখীরাম৷ তাই আজ সবাই এর মুখে ছি! ছি! এক ঘৃণা বা দুঃখের ভাব প্রকাশ পাচ্ছে৷ এ কেমন গণতন্ত্র ! বিলগ্ণিকরণ থেকে পাওয়া যাবে ১.৭৫লক্ষ টাকা৷ কিন্তু দেশের হালটা কী হবে এরপর?
৭৫ বছর এর বেশী বয়স্ক প্রবীন নাগরিকরা সাধারণঃ যে পেনশন রাজ্যসরকারের কাছ থেকে পান সেটা যৎসামান্য, বছরের পাঁচ লাখও হয় না যেখানে অনেকেরই লক্ষাধিক টাকা মাসিক বেতন পান৷ যদিও টাকার বিনিময়মূল্য তলানিতেই গেছে৷ বাজেটে কর্মসংস্থানের দিশা নেই!
রাষ্ট্রপতির প্রথম দিকে মাসিক সান্মাসিক প্রাপ্য ছিল ১০,০০০ টাকা৷ আজতো লক্ষাধিক টাকা৷ দেশের শাসন চালাতে কেন্দ্র ও রাজ্যসরকারগুলিকে যে বেতন ও ডিএ দিতে হয় বিরাটদেশে তার ফলে জনগণের সেবাটা হবে কি করে? বিশেষ করে বেচারামের রাজত্বে৷
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দিকে সরকারের (কেন্দ্র ও রাজ্যের) কোন নজর নেই৷ দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে! দেশের কর্ষকদের নিয়ে তো চলছে এক দড়ি টানাটানি৷ তাঁদের সরকার আয় দ্বিগুন করবেন বিশেষ করে ভর্তুকী দিয়ে? প্রান্তিক চাষী আত্মহত্যা করছেন৷ তাঁদের উপর যে দ্বিচারিতা চলছে সেটা মানুষ বুঝছেন ভালোভাবেই৷ এটাতো একধরণের নির্যাতন! চাষীদের প্রচণ্ডশীতে পথে নামানোটা! বাজেট কী শুধু ৭৫ বছরের পেনশন হোল্ডারদের জন্য! কোটি কোটি মানুষের মধ্যে সরকারী কর্মচারী ক’জন? এ আবার কিসের বাজেট?
সবচেয়ে লজ্জার কথা ডিজেল ও পেট্রোল নিয়ে কি কাণ্ড হচ্ছে? রান্নার তেল নিয়েই বা কি বাজেটে ধরা হয়েছে? এতে গরীব মানুষ কি করে বেঁধে খাবেন? মাননীয়া অর্থমন্ত্রীর তো এটা জানা উচিত৷ ফলও সব্জির উপর যেমন আপেল, কড়াইশুঁটির উপর কর বসেছে৷ বাজেটে দাম বাড়ছে--- বিদেশী অটোমোবাইল, যন্ত্রাংশ, সোনার সেল,মোবাইল ফোন, পার্টস ও চার্র্জর, আমদানিকৃত রত্ন ও পাথর, এয়ার কন্ডিশান ও ফ্রিজের কম্প্রেশার, এলইডি আলো, প্রিন্টেড সার্কিড বোর্ড, সিল্ক ও সূতি, সোলার ইন ভার্র্টর ও লন্ঠন ইঙ্ক কার্টিজ, নাইলন ফাইবার, সূতা, প্লাস্টিক বিল্ডার ওয়ারস, পালিশ করা সিন্থেটিক পাথর৷ এতো সবচেয়ে ক্ষতি হবে মধ্যবিত্তদেরই৷ এটাতো এক ধরণের শোষণ! বাজেটে দাম কমছে---সোনারূপো, চর্ম দ্বারা প্রস্তুত সামগ্রী, নাইনলের জামাকাপড়, কিন্তু নাইনলের ফাইবার ও সূতোরতো দাম বাড়ছে৷ তাহলে এর জামা কাপড়ের দাম কমবেশি করে? লোহা সিটল তামার দ্বারা নির্মিত সামগ্রী প্লাটিনাম ও প্যলাডিয়াম, বিদেশি সংস্থার পাঠানো মেডিকেল সরঞ্জাম৷ বিদেশি সংস্থার পাঠানো মেডিকেল সরঞ্জাম৷
সাধারণ মানুষের এতে কতোটুকু সুবিধা হবে৷ তাঁরাতো অনেক জিনিস চোখেই দেখেন না! পরিবেশ বান্ধব গাড়িতে জোর দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু ১৫ ও ২০ বছরের গাড়িগুলি পুরাতন লক্ষ্যমাত্রায় আনা হবে৷ আর যে গুলি পুরাতন ও যাতায়াতের উপযোগী নয়, সেগুলির স্বেচ্ছায় যান বাতিল নীতির মধ্যে পড়বে৷ পুরাতন গাড়ির মালিকরা কেন্দ্রীয় সরকারের এই নীতি কতটুকু মানবেন সেটাই দেখার কারণ এগুলির সঙ্গে অনেকেরই মান সম্মান জড়িয়ে আছে বংশানুক্রমে৷ ডিজেল ও পেট্রোল নিয়ে সরকার যা কাণ্ড করছেন তাতে সেস বসিয়ে ও দাম লিটার প্রতি যা বাড়ানো হয়েছে তাতে বাসভাড়া বাড়বেই, যা জনগণের পক্ষে দুর্বিসহ হবে৷ তাই এই বাজেট (আয় ব্যয়মাত্রিকা বাৎসরিক) একটা গোদের উপর বিষফোড়া ছাড়া কিছুই নয়৷ সরকার জনগণের আন্তরিকতার সঙ্গে সেবক হোন ও তাঁদের বাঁচার পথের সন্ধান দিন৷ বেকার সমস্যার সমাধান করুন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যাপক উৎপাদন ও বন্টন যাতে ন্যায্য মূল্যের হয় সেদিকে কঠোর দৃষ্টি দেওয়া হোক৷ তাতে দেশ বাঁচবে ও আর্থিক উন্নয়ণের পথে দেশ এগুবে৷ ধনীর সেবাদাস হওয়াটা তো গণতন্ত্রে অভিশাপ অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ করাটাই হলো গণতন্ত্র, তার তিলমাত্র দীর্ঘ ৭৪ বছরে দেখা গেল না৷
এটাই হলো এদেশের দলতন্ত্রের চরম ব্যর্থতা ও গণতন্ত্রকেই শুধু মর্যাদাহানী করা হচ্ছে৷ অর্থনৈতিক সামাজিকরণেই হলো গণতন্ত্রের সার্থকতা৷ এরজন্য ব্যাপক হারে সমবায়কে উৎসাহ দেওয়া৷ শ্রমিক শুধু উৎপাদনে ফ্যাকটর নয়, তাঁরাই প্রাণ৷ তাই ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শ্রমিক শোষণ বন্ধ হওয়া দরকার ও তাঁদের দিতে হবে মালিকানার অধিকার অর্থাৎ অংশীদার এর স্বীকৃতি৷ তবেই সমাজতন্ত্র স্বীকৃতি পাবে৷
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ব্যতীত গণতন্ত্র একটা প্রহশন ছাড়া কিছুই নয়৷
আর বোটরঙ্গটা হলো নাগরিকদের ছল-বল-কৌশলে ঠকিয়ে বোটটা জোর করে হস্তগত করা৷ তাই বোট দানটাতে নাগরিকগণ সরে থাকেন৷ তাঁরা বোঝেন দলগুলো মিথ্যাচারিতা করেই চলেছে৷ তাই এই পোড়া বাজেট গরিবের আর্থিক শোষণ বাড়াবে বই কমাবে না৷
স্বাধীনতার মূল লক্ষ্যই হলো, স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব সকল দেশবাসীর জন্মগত অধিকার পাওয়া৷ সেটা কি দেশবাসী সকলে পেয়েছেন? পাননি৷ শাসকগণ কিন্তু নিজেদের স্বার্থে বাজেট করেন নিছক জনগণকে ধোঁকা দিতে সম্পদ বিক্রি করে আয়ের উৎস দেখানো আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়ে শোষিত হবে মানুস৷ সরাসরি যাই বলা হোক সেটাকে বাজেট বলে না৷ এটা একটা মারাত্মক আর্থিক শোষণেরই ধান্দা৷ তাই এটা শাসক বেচারামেরই একটা মারাত্মক ধান্দা ছাড়া কিছুই নয়! আর্থিক বছরটি জনগনের দুর্দ্দশার অন্ত নেই!
- Log in to post comments