কণ্টকী

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

শব্দটি ‘কণ্টক’-এর স্ত্রীলিঙ্গ রূপ হলেও ব্যবহারে ‘কণ্টকতুল্য’ অর্থেই প্রযোজ্য৷ যে শ্বাশুড়ী বধূকে কষ্ট দিত তাকে ৰলা হত ‘ৰধূকণ্টকী’ (ৰউ-কাঁটকী)৷ তেমনি যে বধূ শ্বাশুড়ীকে কষ্ট দিত তাকে ৰলা হত ‘শ্বাশুড়ী-কাঁটকী ৰউ’৷ যে ফলের গায়ে কাঁটা আছে তাকে ৰলা হয় কণ্টকীফল-কাঁটাল৷ ‘কাঁঠাল’ ৰানানটি অশুদ্ধ৷ ‘ঠ’ ব্যবহারের কোন যুক্তিই নেই৷

কাঁটাল একটি গ্রীষ্মপ্রধান দেশের ফলন ৷ ভারতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, দক্ষিণ আফ্রিকায় ও দক্ষিণ আমেরিকায় এই ফল প্রাচীনকাল্প থেকেই রয়েছে৷ তাই বিশেষ একটি দেশকে এর আদি বাসস্থান ৰলা চলে না৷ মালয় বর্গীয় ভাষাগুলিতে একে ‘লঙ্কা’ ৰলা হয়৷ ‘কণ্টকীফলম’ বা ‘কাঁটাল’ শব্দটি ফলের কাঁচা ও পাকা উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷ কাঁচা অবস্থার জন্যে ৰাংলায় বিশেষ শব্দ রয়েছে ‘এঁচড়’৷ গুণেতে ‘এঁচড়’ মাংসেরই সমান৷ তৰে মাংসের তামসিক দোষগুলো এতে নেই৷ পাকা কাঁটালের জন্যে সংস্কৃতে অপর শব্দ রয়েছে ’’পনস’’৷ ওড়িয়া ও মারাঠীতে কাঁচা-পাকা নির্বিশেষে সব কাঁটালকেই ‘পনস’ ৰলা হয়৷

কাঁটাল একটি পুষ্টিকর কিন্তু গুরুপাক খাদ্য৷ বিভিন্ন ধরণের শিল্প সৃষ্টিতে কাঁটালের সম্ভাবনাও প্রচুর৷ ত্রিপুরায় কাঁটালের অতি প্রাচুর্য৷ কাঁটালের সম্ভাবনা ঠিকভাবে কাজে লাগালে ত্রিপুরার অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়তে ৰাধ্য৷ কাঁটালের সমগোত্রীয় অপর ফল হচ্ছে ‘রুটিফল’ * bread fruit)৷ এর আদি বাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়৷ এই ফলটিকেও কাঁচা অবস্থায় এঁচড়ের মত ব্যবহার করা যায় ও পাকলে এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও মুখরোচক খাদ্য কিন্তু অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত৷ কাঁটালের মাটি বিচার নেই৷ তবে উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত দুই-ই এ পছন্দ করে৷

পৃথিবীতে সাধারণতঃ হলদে, ঘিয়া ও লাল রঙের কাঁটাল দেখতে পাওয়া যায়৷ খাজা (কচকচে), নেয়ো (গলা বা রসাল), বিমিশ্র ভেদে তিন ধরণের কাঁটাল পাওয়া যায়৷ পৃথিবীর সর্ব দেশেই গরীব মানুষদের এটি একটি উত্তম মানের খাদ্য৷ কাঁটাল বীজের পৌষ্টিকতা আলুর চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশী৷ মোগল যুগে ভারতে আলু আসবার পূর্ব পর্যন্ত আলুর কাজ কাঁটাল বীজে সারা হত৷

রক্তকণ্টকী ৰলতে বোঝায় লিচুকে৷ লিচু ফলের গায়েও কাঁটা আছে কিন্তু তা লাল রঙের৷ তাই সংস্কৃতে এই ধরণের নামকরণ হয়েছে৷ এই ফলটি চীন দেশ থেকে আগত৷                             (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)