তঃ (১) ‘তৃ’ ধাতুর অর্থ পার হওয়া---সে মাঠ পার হওয়াই হোক আর নদী পার হওয়াই হোক৷ এই ‘তৃ’ ‘অনট্’ করে পাই ‘তরণ’৷ তরণ মানে সাঁতার কাটা, যার থেকে হিন্দীতে ‘তৈরণা’৷ ‘যার দ্বারা পার হওয়া যায়’ এই অর্থে তরণী মানে নৌকা, তরী মানেও তা-ই৷ উৎ-তৃ+অনট্ - উত্তরণ, মানে নীচের দিক থেকে ওপরে ওঠা৷ ‘সম্’---তৃ+ অনট্= সন্তরণ৷ ৰাংলায় ‘সন্তরণ’ ও তজ্জাত ‘সাঁতার’ শব্দটি ভালভাবেই চলে৷ পার হওয়া অর্থে ‘তৃ’ ধাতু+ ‘ড’ করে আমরা যে ‘ত’ শব্দটি পাচ্ছি তার একটি অর্থ হ’ল ‘নৌকা’৷
(২) প্রাচীন সংস্কৃতে ভাবারুঢ়ার্থে ‘ত’ ৰলতে ‘রথ’কেও ৰোঝাত৷
(৩) চোর জিনিসপত্র নিয়ে যেন-তেন-প্রকারেণ মাঠ-ঘাট-নদী-নালা পার হয়ে পালাবার চেষ্টা করে৷ তাই একই ভাবারুঢ়ার্থে ‘তৃ’+ ‘ড’ প্রত্যয় করে ‘ত’ শব্দের একটি অর্থ ‘ছিঁচকে চোর’ও হয়৷
(৪) ‘তক্’ একটি মূল ধাতু যার মানে চকক্ করা৷ তোমরা এই ধাতুটির সঙ্গে অপ্রত্যক্ষ ভাবে পরিচিত রয়েইছ৷ ‘তক্’ ধাতু+ ‘রক’ প্রত্যয় করে ‘তক্র’ শব্দ পাই যার মানে ঘোল, ইংরেজীতেbuttermilk, আহারের পর ঘোল খেলে স্বাস্থ্য ভাল হয়, শরীর চকচকে হয়, শরীরে বর্র্ণেজ্জ্বল্য glamour) আসে৷ তাই ঘোলকে ‘‘তত্র*-ও ৰলা হয়৷ যে ঔষধীয় ফলটি রোগ হরণ করে, ও রোগ হরণ করার পর শরীরকে চকচক করে দেয়, সেই ফলটি রোগ হরণ করার জন্যে ৰলি ‘হরি’ ও চকচকে করার জন্যে ‘তকি’---একসঙ্গে ‘হরিতকি’ নামে পরিচিত৷ এই ‘তক্’ ধাতু+ ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ত’ শব্দ পাচ্ছি তার ভাবারুঢ়ার্থ হচ্ছে যা চকচক করে আর যোগারুডঢ়ার্থ হচ্ছে জ্যোতিষ্ক celestial body)৷ আকাশের নীহারিকা - তারা - গ্রহ - উপপগ্রহ -উল্কা -ধূমকেতু-এরা পৃথিবীর মানুষের কাছে চকচকে৷ তাই যোগারুঢ়ার্থে ‘ত’-এর একটি মানে ‘জ্যোতিষ্ক’৷
(৫) যে জিনিসটা চকচকে ৰলে মানুষ তাকে অলঙ্কাররূপে ব্যবহার করে সেই ‘মণি-মুক্তা-জড়োয়াকে’ও এই অর্থে ‘ত’ ৰলা হয়৷ মুক্তাখচিত অলঙ্কারকে অনায়াসেই ‘ত’-খচিত অলংকার ৰলা যেতে পারে৷
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে গৃহীত)