আম/আঁৰ

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

ফলশাক বলতে বোঝায় যে গাছে ফুলের পর ফল আসে৷ কাঁচা–পাকা যে কোন রকমের ফল শরীরের পক্ষে ভাল৷ কারণ ফল নিজের রসে জীর্ণ হয়–হজমের জন্যে যকৃতের সাহায্য বেশী নিতে হয় না৷ অথচ ফল শক্তির যোগান দেয় যথেষ্ট৷

ফলের তালিকায় তৃতীয় স্থান আমের হলেও (প্রথম দু’টি–জাম আর শশা) আমকে রাখা হয় শীর্ষে, (কেন না) ফলটি অনেক গুণের আধার৷ আম টকই হোক, মিষ্টিই হোক, গলার নীচে নাৰলেই সব আম সমান৷ যে আমের খোলা যত পাতলা, সে আম তত উন্নত৷ পাকা আম রক্তৰর্ধক৷ হয়তো বা দাড়িম্বী (বেদানা–ডালিম) ব্যতিরেকে আর কোন ফলই এত রক্তের যোগান দেয় না৷ দ্বিপ্রহর বারটার পূর্বে এক বল্কা দুধের সঙ্গে পাকা আমের রস পান করলে রোগমুক্ত মানুষ অল্প সময়েই শক্তি ফিরে পাবে৷ অতি ৰৃদ্ধ বাদে সকল বয়সের মানুষ–বিশেষ করে অল্পবয়সী যুবক, এই আম্রদুগ্ধ পান করে প্রভূত শক্তির অধিকারী হয়৷ এটি কিন্তু উষ্ণবীর্য৷ তাই পেট যার খুব ভাল নয়, তার পক্ষে আম্রদুগ্ধ পান না করাই উচিত৷ ক্যালসিয়াম যথেষ্ট পরিমাণে থাকায় পেট ভাল থাকলে যক্ষ্মা রোগী আম্রদুগ্ধ পান করলে বিশেষভাবে উপকৃত হবে৷ অতিমাত্রায় পান করলে এটি (আম্রদুগ্ধ) মধুমেহ রোগ সৃষ্টি করে ও রক্ত সঞ্চালন ৰাড়িয়ে দিতে পারে৷ তাই একটু পরিমিত ভাবেই জিনিসটা ব্যবহার করা উচিত৷ অন্যথা শরীরের বিভিন্ন অংশে স্ফোটক সৃষ্টি হতে পারে ঙ্মআগের দিন রাত্রে আম জলে ডুৰিয়ে রেখে পরের দিন তা ব্যবহার করলে আম খাওয়ার অনেক অবাঞ্ছিত প্রভাব থেকে বাঁচা যায়ৰ৷

জাম

ফলের মধ্যে জম্বুফল বা জাম সর্বগুণাধার৷ কিছুটা কষ থাকায় তা মধুমেহ রোগের প্রতিষেধক৷ মধুমেহের প্রতিষেধক রয়েছে জামের অস্থির (আঁটির) অন্তর্গত সারবত্তাতে (সার অংশে)৷ জামের (ফলের) ভিতরের অংশও (Pulp) মধুমেহের ঔষধ৷ জামফলের ৰীজ ভেঙ্গে তার ভেতরের শাঁস এক আনা পরিমাণ (সিকি চামচ) মধু সহ লেহন করে খেলে মধুমেহ রোগে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়৷

তাল

মোটামুটি বিচারে তাল একটি পুষ্টিকর খাদ্য৷ পাকা তালের রস ঙ্মআঁশযুক্ত আঁটি ঘসে ঘসে রস বের করে তা দিয়ে ৰড়া, ক্ষীর ইত্যাদি নানা ভোজ্য তৈরী করা হয়ৰ খুবই পুষ্টিকর, কিন্তু উদরাময়ের পক্ষে খারাপ৷ কাঁচা অবস্থায় তালশাঁস স্নায়ুর পক্ষে ভাল হলেও আমাশয় রোগীর অভক্ষ্য৷ পাকা তালের আঁটির ভেতরকার শাঁস লঘুপাচ্য পুষ্টিকর জিনিস৷ আঁটির ভেতরের সংলগ্ণ কিছুটা কঠিন শাঁস ঙ্মস্নেহ পদার্থযুক্ত অর্থাৎ তার থেকে তেল তৈরী হতে পারে৷ ওই তেল রন্ধন কার্যে ও সাবান শিল্পে ব্যবহার করা যেতে পারে৷ দক্ষিণাপথের তাল রসে অল্প জ্বাল দিয়ে ‘নীরা’ নামে যে বস্তুটি তৈরী হয় তারও পুষ্টিগত মূল্য রয়েছে৷ তালরস (গাছ চেঁছে) থেকে যে গুড় তৈরী হয় তার গুণ অনেক বেশী৷ তালগুড় কফ রোগের ঔষধ ও কফ রোগের ঔষধ হিসেবে প্রাচীনকাল থেকেই তালমিছরীর ব্যবহার হয়ে এসেছে৷

কলা

যদিও সাধারণ অর্থে ‘কদলী’ ৰলতে সব কলাকেই ৰোঝায়, তবু বিশেষ অর্থে ‘কদলী’ অর্থে কাঁচকলা আর ‘রম্ভা’ মানে পাকা কলা৷ এখানে কাঁচকলা বলতে আমরা সেই কলাকে ৰোঝাচ্ছি যা কাঁচা অবস্থায় তরকারী রেঁধে খাওয়া হয়, আর পাকা অবস্থায় সাধারণতঃ খাওয়া হয় না৷ কলা সমস্ত গ্রীষ্মপ্রধান দেশেই জন্মায়৷ তবে কলার আদি নিবাস পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ–ড্র্ত্রব্দব্ধ ঢুস্তুন্ন্দ্বব্দ ট্টব্জন্তুড়ন্হ্মন্দ্বপ্) অর্থাৎ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স প্রভৃতি দেশ৷ ভারতও অন্যতম কলা–উৎপাদনকারী দেশ৷ কেবল ভারতেই শতাধিক প্রজাতির গাছ রয়েছে৷ ভারত ও বহির্ভারত নিয়ে সমগ্র বিশ্বে কলার প্রজাতির সংখ্যা দেড় হাজারের মত৷ ভারতের কেরলেই সবচেয়ে বেশী প্রজাতির কলা পাওয়া যায়৷ ৰাংলায় সবচেয়ে বেশী কলার চাষ হয় হুগলী জেলায়৷ এছাড়া হাওড়া, মেদিনীপুর, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, চব্বিশ পরগণা, জলপাইগুড়ি ও ত্রিপুরায় প্রচুর পরিমাণ কলা জন্মায়৷

কলার কোন অংশই পরিত্যাজ্য নয়৷ কলার খোলাও পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের লোকেরা বিভিন্ন ভাবেই খেয়ে থাকেন৷ ফলন্ত কলা গাছের কাণ্ডের অভ্যন্তরভাগ যাকে ৰাংলায় থোড় বলা হয়, তাও মানুষের খাদ্য৷ থোড়ের বেশির ভাগ অংশই জল৷ তবে থোড়ে কিছু মূল্যবান খনিজ লবণও রয়েছে৷ সেই হিসেবে থোড়ের একটা খাদ্যমূল্যও রয়েছে৷ যারা রক্তাল্পতায় ভোগে অথবা যাদের চর্ম কিছুটা বিবর্ণ, থোড় তাদের পক্ষে মোটামুটি বিচারে ভাল৷ কলাপাতা ভোজনপাত্র হিসেবে ব্যবহূত হয়৷ কলাগাছ পোড়ালে যে ক্ষার পাওয়া যায় তা দিয়ে এককালে কাপড় কাচা হত৷ এই কলাগাছের ক্ষার–সোডিয়াম কার্বনেট (হল) যা কাপড় কাচা সোডার মূল উপাদান৷ কলাগাছের সূতোতে পৃথিবীর অনেক দেশে বস্ত্র প্রস্তুত করা হয়৷ যেমন বস্ত্র প্রস্তুত হয় আনারসের সূতো দিয়ে৷

কদলী একটা খুব পুষ্টিকর খাদ্য৷ পালা জ্বর ৰলে এক রকমের যে জ্বর হয় একদিন অন্তর বা দু’দিন অন্তর–তার ঔষধ কদলী৷ যকৃত, অগ্ণ্যাশয়, কিডনী এই তিনের কাজ ভাল রাখে কদলী৷ আমাশয় রোগেরও খুব ভাল ঔষধ কদলী৷ আবার মৃতবৎসা নারীর পক্ষে খুব ভাল খাদ্য কদলী৷

(আগেই ৰলেছি) খাদ্য হিসেবে কলা বেশ পুষ্টিকর৷ তবে যেসব কলায় অম্লভাব বেশী (যেমন চাঁপা কলা) সেগুলি সন্ধ্যার পর খেলে অম্লদোষ হতে পারে৷ ঙ্ম যদিও সব প্রজাতির কলাতেই পুষ্টিমূল্য প্রায় সমান, তবুও কাঁটালী কলার পুষ্টিমূল্য তুলনামূলক ভাবে একটু বেশী৷ বিশেষ করে ঔষধ হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে–আমাশয় বা রক্ত–আমাশয়ে ঘিয়ে ভাজা বা দুগ্ধক্ষীরার রস সহ পাকা কলা–এক্ষেত্রে কাঁটালী কলাই ব্যবহার করা উচিত ৰ

(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য’ থেকে)