আনন্দপূর্ণিমার পুণ্য তিথি স্মরণে শোষণমুক্ত নোতুন পৃথিবী গড়ার ব্রত নিন

১৬ই মে, বৈশাখী পূর্ণিমা প্রাউট–প্রবক্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার, যিনি ধর্মগুরু মহাসম্ভূতি শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী নামে বিশ্ববাসীর কাছে সমধিক পরিচিত–তাঁর শুভ ১০১তম আবির্ভাব তিথি সারা বিশ্বের আনন্দমার্গীদের কাছে এই বৈশাখী পূর্ণিমা আনন্দপূর্ণিমা রূপে পরিচিত৷ এই পুণ্য তিথিতে মহাসমারোহে সর্বত্র মার্গগুরুদেবের ১০১তম জন্ম জয়ন্তী পালন করা হচ্ছে৷

এই প্রসঙ্গে বলি, বর্তমানে সারা দেশ–জুড়ে শুধু দেশ–জুড়ে কেন বলব, সারা বিশ্ব জুড়ে সার্বিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে৷ কি সামাজিক, কি অর্থনৈতিক, কি রাজনৈতিক, কি শিক্ষা–সাংস্কৃতিক জগতে, কি ধর্মীয় জগতে সর্বক্ষেত্রেই বিপর্যয় দেখা দিয়েছে৷ এই বিপর্যয় থেকে উত্তরণের পথ মানুষ পাচ্ছে না৷ মানুষ দিশেহারা৷

এই ভয়াবহ সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী দিয়েছেন এক সর্বানুসূ্যত জীবনদর্শন–যা সমাজের সমস্ত ক্ষেত্রেই সমস্ত সমস্যার সমাধানের পথ দেখাচ্ছে৷ তিনি দিয়েছেন ধর্মের ক্ষেত্রকে সমস্ত অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, গোঁড়ামী, সংকীর্ণতা ও ভাবজড়তা (ডগমা) থেকে মুক্ত করতে যুক্তি ও বিজ্ঞান ভিত্তিক আধ্যাত্মিক দর্শন–আনন্দমার্গ৷ এই আনন্দমার্গ বলছে, সমস্ত মানুষের ধর্ম এক–মানবধর্ম৷ সেখানে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রীষ্টান প্রভৃতি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রশ্ণ ওঠে না৷ জাত–পাতের প্রশ্ণ ওঠে না৷ সবাই পরমপুরুষের অর্থাৎ বিশ্বস্রষ্টার সন্তান৷ তাই মানুষ মানুষ ভাই ভাই৷ মানব সমাজ এক ও অবিভাজ্য৷ তিনি যে আত্মোন্নতির জন্যে আধ্যাত্মিক সাধনার পথ দিয়েছেন, সেখানেও মানুষে মানুষে কোনও জাত–পাত–সম্প্রদায় বিভেদের অবকাশ রাখেননি৷

আজ সামাজিক–র্থনৈতিক– ক্ষেত্রেও যে ভয়াবহ সঙ্কট চলছে, মুষ্টিমেয় কিছু ব্যষ্টির হাতে সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে যাচ্ছে, কোটি কোটি মানুষ অনাহারে অর্দ্ধাহারে ধুঁকছে, তার সমাধানও তিনি দিয়েছেন তাঁর প্রাউট দর্শনে৷ তিনি বলেন, প্রচলিত গণতন্ত্র যা আজ পুঁজিবাদের সঙ্গে যোগসাজস রেখে মানুষের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা বা ভোটাধিকার দেবার কথা বলছে–তা, বর্তমানে পুঁজিবাদীদের শোষণেরই উপযুক্ত মাধ্যমে পরিণত হয়েছে৷ এতে দরিদ্র জনসাধারণকে শোষণ করছে মুনাফাবাজ পুঁজিপতিরা, লুঠেরা ও প্রতারকেরা ও ওই সমস্ত শোষক, মুনাফাবাজ ও প্রতারকদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা বেশির ভাগ রাজনৈতিক নেতারা৷

প্রাউটেরও বিকেন্দ্রীত সমবায়ভিত্তিক ‘অর্থনৈতিক গণতন্ত্রে’র মাধ্যমেই এই জটিল অর্থনৈতিক সংকট থেকে সমাজ মুক্ত হতে পারে–তা প্রাউট–প্রবক্তা তাঁর দর্শনে বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন৷ সমাজ আন্দোলনের কর্মসূচীর মাধ্যমে এই দর্শনের বাস্তবায়নেরও পথ তিনি দেখিয়েছেন৷

সামাজিক ক্ষেত্রে আজ যে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ প্রভৃতি অজস্র অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্র থেকে শুরু করে শিক্ষাক্ষেত্রে, ক্রীড়াক্ষেত্রে–সর্বক্ষেত্রেই যে আজ দুর্নীতির রাজ্যপাট চলেছে–এ ভয়ঙ্কর সমস্যার জন্যে তিনি দায়ী করেছেন সমাজের পুঁজিবাদ ও জড়বাদ আশ্রিত ভোগবাদকে ও আসমান জমিন অর্থনৈতিক বৈষম্যকে তিনি বলেছেন এই আত্মসুখ–কেন্দ্রিক, জড়বাদ–কেন্দ্রিক বা ডগমা–কেন্দ্রিক জীবনবাদ থেকেই এই ধরনের সমস্ত দুর্নীতি ও অপরাধের সৃষ্টি৷ তাই আজ দরকার আধ্যাত্মিকতা ভিত্তিক জীবনাদর্শ– যার মূল কথা হ’ল আত্মবিকাশ ও জগতের হিতসাধনা৷ সমাজে সমস্ত প্রকার ডগমা তথা কুসংস্কারমুক্ত আধ্যাত্মিকতার বন্যা বইয়ে দিয়ে সমাজে নীতিবাদী, সেবাব্রতী ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামী মানুষ তৈরী করতে হবে– প্রাউটে যাঁদের বলা হয়েছে সদ্বিপ্র৷ সদ্বিপ্র সমাজের উত্থানের মাধ্যমে সমাজ সমস্ত কলুষতা, পাপাচার ও শোষণের হাত থেকে মুক্তি পাবে৷ গড়ে উঠবে এক সর্বাঙ্গসুন্দর নোতুন পৃথিবী৷

আসুন আনন্দপূর্ণিমার পুণ্য তিথি স্মরণ করে আমরা এই সর্বকলুষমুক্ত সর্বাঙ্গসুন্দর ‘নোতুন পৃথিবী’ গড়ার সংকল্প গ্রহণ করি৷