১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করেছে৷ এর পেছনে রয়েছে বহু বরেণ্য মানুষের অপরিসীম ত্যাগ ও কষ্টবরণ৷ শত শত শহীদের জীবনদানের ফলে এই স্বাধীনতা আমরা লাভ করেছি৷ তাঁদের হূদয়ে ছিল একান্ত বাসনা–‘‘ভারত আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে৷/ধর্মে মহান্ হবে,/কর্মে মহান্ হবে,/নব দিনমণি উদিবে আবার পুরাতন এ পূরবে৷’’ এই আশা বুকে নিয়েই তাঁরা হাসতে হাসতে জীবন দিয়েছেন৷ তাঁদের আত্মত্যাগের মূল্যেই আমরা ব্রিটিশ শাসনের কবল থেকে মুক্তি লাভ করেছি৷
১৯৪৭ সালের পর ৬৫ বৎসর অতিক্রান্ত হ’ল৷ নেহেরু থেকে শুরু করে দেশের শীর্ষ স্থানীয় সমস্ত নেতা–নেত্রী জনসাধারণের কাছে কত আশার ফানুষ না তুলে ধরেছেন৷ কিন্তু আজ দীর্ঘ ৬ দশক অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও দেখা যাচ্ছে, দেশের প্রায় ২৭ কোটি মানুষ পেট ভরে খেতে পায় না৷ দেশের প্রায় ৪৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত৷
দেশ নেতারা বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রতি বছর বলে চলেছেন, ভারত এগিয়ে চলেছে, ভারতের জাতীয় উৎপাদন বাড়ছে, মাথা পিছু জাতীয় আয় বাড়ছে, ইত্যাদি৷ কিন্তু ভারতের এই পরিসংখ্যানগত উন্নতির সুফল কারা ভোগ করছে দেশের মুষ্টিমেয় ধনকুবের পরিবার ও উচ্চবিত্তসম্পন্ন মানুষ৷ স্বাধীনতা কি কেবল কিছু উচ্চবিত্ত মানুষের জন্যে যারা মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও দারিদ্র্য সীমারেখার নিম্নে বসবাসকারী তারা দেশের সংখ্যাধিক্য৷ তাহলে এ স্বাধীনতা কাদের জন্যে দেশের সবার জন্যে কি স্বাধীনতা নয় প্রকৃতই স্বাধীনতার স্বাদ আজও দেশের বৃহত্তর অংশ লাভ করতে পারে নি৷
আমাদের দেখতে হবে–এর কারণ কী কারণ হ’ল–ভারতের মানুষ তথাকথিত রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করলেও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করে নি৷ তাই ক্ষমতালোভীরা অর্থের বিনিময়ে সাধারণ মানুষের সমর্থন লাভ করে’ সহজেই গদি দখল করে’ স্বাধীনতার সমস্ত সুফল ভোগ করছে, সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে চলেছে৷
তাই জনসাধারণের যথার্থ উন্নতির জন্যে আজ চাই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা৷ প্রাউট দর্শনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতার কোনো মূল্য নেই৷
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বলতে কী বুঝব রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলতে যেমন বোঝায় রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভ করা, তেমনি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বলতে বোঝায় অর্থনৈতিক ক্ষমতা অর্থাৎ ক্রয়ক্ষমতা অর্জন করা৷
রাজনৈতিক ক্ষমতা বলতে বোঝায় ভোটাধিকার লাভ৷ তাত্ত্বিকভাবে এদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী নির্বাচনের জন্যে প্রতিটি মানুষ (১৮ বছরের ঊধের্ব) তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে৷ এটাই হচ্ছে ‘রাজনৈতিক ক্ষমতা’৷
আর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার প্রথম কথা যে ক্রয়ক্ষমতা–তার মানে বোঝায়, প্রতিটি মানুষের অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাসস্থানের গ্যারান্টী৷ দেশের প্রত্যেকটি মানুষ যেন তার জীবনধারণের নূ্যনতম চাহিদা পূরণ করবার জন্যে যে অর্থের দরকার সেই পরিমাণ অর্থ যেন সে আয় করতে পারে৷ তার গ্যারাণ্টী চাই৷ এটা দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্মগত অধিকার৷ কাউকে যেন অন্নাভাবে, বস্ত্রাভাবে, চিকিৎসার অভাবে, বাসস্থানের অভাবে বা নূ্যনতম শিক্ষার অভাবে ভুগতে না হয়৷
অর্থনৈতিক স্বাধীনতার দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হবে, স্থানীয় অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা, অর্থাৎ স্থানীয় কৃষি–শিল্পে–বাণিজ্যের্ মালিকানা থাকবে স্থানীয় মানুষের হাতে৷ বহিরাগতদের নিয়ন্ত্রণ থেকে স্থানীয় অর্থনীতিকে মুক্ত করতে হবে৷ তাহলেই মানুষ অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্ত হবে৷
প্রতিটি মানুষের ক্রয় ক্ষমতা অর্জনের জন্যে প্রয়োজন প্রতিটি মানুষের কর্মসংস্থানের গ্যারাণ্টী৷ আর সেজন্যে ব্লকভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করতে হবে৷ কৃষির ওপর আজ দেশের ৭০/৮০ শতাংশ মানুষ নির্ভরশীল৷ কেবল কৃষির মাধ্যমে দেশের বিপুল জনসংখ্যার কর্মসংস্থান সম্ভব নয়৷ আবার, কৃষি জমিকে নষ্ট করে বড় বড় কলকারখানা গড়লেও দেশের বেকার সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়৷ দেশের বিপুল সংখ্যক কর্মপ্রার্থী মানুষের তুলনায় বৃহৎশিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ অত্যন্ত সীমিত৷
তাহলে উপায় কী ব্লকে ব্লকে কৃষি ভিত্তিক শিল্পের (অর্থাৎ উৎপাদিত দ্রব্যের ভিত্তিতে তথা এই কৃষিজাত দ্রব্যকে কাঁচামাল হিসেবে নিয়ে যে শিল্প) আর, কৃষি–সহায়ক শিল্পের (অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষ করতে গেলে যে যন্ত্রপাতি, সার, কীট নাশক প্রভৃতি প্রয়োজন হয়–সেই সব কৃষি সহায়ক দ্রব্যের উৎপাদন শিল্প) ব্যাপক বিকাশ ঘটাতে হবে৷ ‘প্রাউট’ বলছে দেশের প্রায় ২০ শতাংশ ২০ শতাংশ অর্থাৎ ৪০ শতাংশ মানুষের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা এই দুই ধরণের শিল্পের মাধ্যমে করতে হবে৷ জনসাধারণের যৌথ মালিকানা তথা সমবায়ের মাধ্যমেই এই দুই প্রকার শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটানো সম্ভব৷ এ ব্যাপারে সরকারকে ব্যাপকভাবে উদ্যোগ নিতে হবে৷ দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের জন্যে এই পরিকল্পনার ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে৷
অথচ এর ওপর সরকার বাস্তবিক পক্ষে তেমন কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না৷ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে–বহিরাগত দেশী বা বিদেশী পুঁজিপতিদের এরাজ্যে অর্থ বিনিয়োগ করে বৃহৎশিল্প গড়ার ওপর৷ এধরণের বৃহৎ শিল্পের মাধ্যমে খুবই সীমিত সংখ্যক মানুষের কর্ম সংস্থান হবে৷ এই সমস্ত বৃহৎ শিল্প আসলে রাজ্যের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা তথা অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের পক্ষে বিরাট অন্তরায়৷
কেবল শাসক বদলালে দেশের যথার্থ পরিবর্তন হয় না৷ মূলনীতির পরিবর্তন চাই৷ স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত এদেশে ক্যাপিট্যালিজমের নীতিকেই আঁকড়ে রাখা হয়েছে৷ কম্যুনিষ্টরা–যারা আসলে ষ্টেট্ ক্যাপিট্যালিষ্ট–তাঁরা সেই ক্যাপিট্যালিজমের নীতি নিয়েই চলছিল৷ আজ দেশের বা রাজ্যের যথার্থ পরিবর্তন ঘটাতে গেলে মূলনীতির পরিবর্তন ঘটাতে হবে৷ আর ক্যাপিট্যালিজমের পরিবর্তে প্রগতিশীল সমাজতন্ত্রের নীতি গ্রহণ করতে হবে৷ ক্যাপিট্যালিজ্ম ভিত্তিক প্রচলিত রাজনৈতিক গণতন্ত্রের পরিবর্তে–অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের পথ ধরেই দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা রচনা করতে হবে৷
আমেরিকায় দ্বিতীয় বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হলেন ট্রাম্প
পি.এন.এ ঃ আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগণনা এখনও শেষ হয়নি৷ কমলা হ্যারিসের তুলনায় বেশ খানিকটা এগিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ চার বছর পর তিনিই ফের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন৷ এই আবহেই যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভার উচ্চকক্ষ সেনেটের দখল নিল ট্রাম্পের দল৷ নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেন্টিটিভসেও লাল (ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টিকে যে রং দিয়ে চিহ্ণিত করা হয়) ঝড়ের ইঙ্গিত মিলেছে৷
২০২০ সাল থেকে ১০০ আসনবিশিষ্ট সেনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি৷ চার জন নির্দল সেনেটরের সমর্থনে ৫১টি আসন নিয়ে এত দিন কমলার দলের দখলে ছিল সেনেটের নিয়ন্ত্রণ৷ অন্য দিকে, ট্রাম্পের দলের ছিল ৪৯টি আসন৷ কিন্তু মাত্র দুই আসনের ব্যবধান মুছে ফেললেন রিপাবলিকানরা৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গেই সেনেটের ৩৪টি আসনে নির্বাচন হয়৷ ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া এবং ওহিয়ো আসনে রিপাবলিকান প্রার্থী জয়ী হওযার পরেই স্পষ্ট হয়, সেনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাচ্ছেন ডেমোক্র্যাটরা৷
এত দিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেন্টিটভসে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল রিপাবলিকানরা৷ প্রাথমিক গণনায় ইঙ্গিত, এ বারেও সেখানে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে চলেছে তারা৷ হাউসের ৪৩৫ আসনের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ১৮৪টিতে জয়ী হয়েছে ট্রাম্পের দল৷ অন্য দিকে, ১৫৮টিতে জয় পেয়েছে কমলার ডেমোক্র্যাট দল৷ বহু আসনে এখনও গণনা বাকি৷ হাউসে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে অবশ্যই ২১৮টি আসন পেতে হবে৷
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে প্রার্থীই জিতুন না কেন, নতুন কোনও আইন পাশ করাতে গেলে এই দু’টি কক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন৷ তবে এ ক্ষেত্রে সেনেটের গুরুত্ব খানিকটা হলেও বেশি৷ বিভিন্ন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট-সহ গুরুত্বপূর্ণ পদে জয়ী প্রার্থীদের নিয়োগপত্র সুপ্রিম কোর্ট পেশ করে সেনেটই৷ তাই হাউস ও সেনেটের ভোট সাধারণ নির্বাচনের থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ তাই চার বছর পরে সেনেটের দখল নিয়ে রিপাবলিকানরা অনেকটা স্বস্তিতে রইলেন বলে মনে করা হচ্ছে৷
আমেরিকার সংসদের নিম্নকক্ষে প্রতিটি আসনে দু’বছর অন্তর ভোট হয়৷ এত দিন ট্রাম্পের দলের হাতে ছিল ২২০টি আসন৷ কমলার দলের দখলে ২১২টি৷ তিনটি আসন শূন্য৷ সেনেটের ভোট প্রক্রিয়া হাউসের থেকে কিছুটা আলাদা৷ এখানে এক বার ভোটে জিতলে ছ’বছরের মেয়াদ থাকে৷ সেনেটের মোট আসনসংখ্যা ১০০টি৷ আমেরিকার প্রতিটি প্রদেশে দু’জন করে সেনেটর নিযুক্ত থাকেন৷ সেই হিসেবে মোট ৫০টি প্রদেশে ১০০টি আসনের সবগুলিতে অবশ্য একসঙ্গে ভোট হয় না৷ প্রতি দু’বছর অন্তর এক তৃতীয়াংশ আসনে ভোট হয়৷ এ বার ভোট হয়েছিল ৩৪টি আসনে৷
- Log in to post comments