অসমে বাঙালী নির্র্যতনের বিরুদ্ধে বাঙালী জনগোষ্ঠী রুখে দাঁড়াক

লেখক
প্রভাত খাঁ

 বর্তমানে ভারতের ভাগ্যবিধাতা হয়ে যাঁরা কেন্দ্রে বসেছে, তাঁদের চিন্তা ভাবনার মধ্যে দেখা যাচ্ছে প্রতি পদে পদে  অপরিণামদর্শিতার ছাপ৷ আশ্চর্য হতে হয় যখন  কানে আসে একটা কথা --- ‘‘যারা ওপার থেকে এসেছে তাদের ওপারে তাড়ানো হবে’’৷  ওপার মানে পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ)৷ এই পূর্ব পাকিস্তান কারা জন্ম দিয়েছিল? কেন্দ্রের বা প্রতিবেশী রাজ্যের শাসকগণ কি ভুলে গেছে যে ভারতবর্ষ ভাগ হয়েছিল  ন্যায়-নীতির ভিত্তিতে নয়, সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে , যেটার মূল নায়ক ছিল সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ  সরকার  ও তাঁদের দোসরগণ৷ যাঁরা প্রকৃত  স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন ভারতবর্ষে তাঁরা কোনদিনই  এই ভয়ংকর দেশ ভাগ করে স্বাধীনতা চাননি৷ গান্ধিজী এর প্রতিবাদ করেন  অনশন করার মনোবাসনা প্রকাশ করেন ---পরে কিন্তু ও কংগ্রেসী নেতাদের দেশভাগ-নীতির কাছে আত্মসমর্পণ করেন৷ এরপর তিনি কংগ্রেস থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যান৷ কিন্তু

দেশভাগে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত হয়ে লক্ষ লক্ষ পরিবার সাম্রাজ্যবাদের কবলে পড়ে নিহত হন৷ যারা উদ্বাস্তু হয়ে প্রাণের দায়ে ভারতের  সীমান্ত রাজ্যগুলিতে এসে হাজির হন তাদের কি অপরাধ ছিল ? সেদিনের পূর্বপাকিস্তান পরবর্তীকালে সেটি বাংলাদেশে পরিণত হয়েছিল৷ সেই বাংলাদেশ থেকেও অত্যাচারিত হয়ে প্রাণের দায়ে অত্যন্ত অসহায় অবস্থায় ভারতে আসতে বাধ্য হয় লক্ষ লক্ষ মানুষ৷

তাদের কী অপরাধটা ছিল? কেউ কি  তাঁর নিজস্ব মাতৃভূমি যা নিজেদের বেঁচে থাকর একমাত্র অবলম্বন তাকে সপরিবারে ত্যাগ করতে চায়?

কিন্তু তৎকালীন অত্যাচারে ফলে মূলতঃ বাধ্য হয়ে তাঁদের  সপরিবারে সেই স্থান ত্যাগ করতে হয়৷ তাদের যাতে অসুবিধে না হয় তাই তো তৎকালীন ভারত ও পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) সরকার চুক্তি করে যে, যারা যে কোনও সময় ভারত কিংবা পাকিস্তানে আশ্রয় নেবে দু’দেশই তাদের সেটা মেনে নেবে ও তাদের নাগরিকত্ব দেবে৷

সত্তর বছর পর এর হঠাৎ কেন পরিবর্তন হ’ল? পূর্ব পাকিস্তানের শ্রীহট্ট জেলা যেটা অসমের মধ্যে ছিল ইংরেজ  এটিকে মুসলমান অধ্যুষিত বলে জোর করে পাকিস্তানে ঢুকিয়ে দেয়৷ পাকিস্তান হওয়ার পরই পাকিস্তান সরকার শ্রীহট্টের লক্ষ লক্ষ হিন্দুদের হত্যা, নির্যাতন ও অকথ্য অত্যাচার করে বাকি হিন্দুদের দেশছাড়া করে৷ তাদের বিষয় সম্পত্তির সবকিছু লুটে পুটে নেয়৷ তাহলে কি করে বলা যায় যে, তারা বিদেশী? তারা তো অসমেরই অধিবাসী ছিল৷ তারা অধিকাংশই বাঙালী হিন্দু৷ তাছাড়া অসমের দক্ষিণ দিকের অধিকাংশের জমি জমা তো বৃহত্তর বাঙলার৷ ইংরেজ বাঙলাকে ছোট করে  বাঙলার জমি ও অধিবাসীদের অসমের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়৷ আজ অসমের সরকার আর অসমীয়ারা যদি তাদের বিদেশী বলে ঘোষণা করে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তাহলে সেটা কোন ধরণের ন্যায়নীতি ও গণতান্ত্রিক বিচার?

অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গেই বলতে হয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীই বাঙালী বিতাড়নের হিংসাশ্রয়ী মানসিকতাকে উসকে দেন৷ তাঁর মতে বাঙলাদেশীরা অসমের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে৷ এটা একটা  নোংরা রাজনৈতিক শ্লোগান৷

ধর্মমত নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে হিন্দু ও মুসলমান বিভেদাত্মককথাটা অত্যন্ত নিন্দনীয়৷ সকলকেই এদেশীয় বলে ধরা উচিত৷ বিশেষ করে যারা এদেশের মাটিতে জন্মেছেন তারা অবশ্যই ভারতীয়৷ তাছাড়া হিন্দু ও মুসলমান নির্বিশেষে যারা দেশভাগের পর ভারতে কিংবা বাঙলাদেশে বা পাকিস্তানে গেছেন তারা ভারত পাকিস্তানের রাষ্ট্র-নেতাদের চুক্তি অনুসারে যে কোনও দেশের নাগরিক হবার যোগ্যতা রাখেন৷

তাই অসম থেকে  বাঙালী বিতাড়ন, তারা হিন্দু বা মুসলিম যাই হোন, অত্যন্ত নিন্দনীয়৷ এটা গণতন্ত্র বিরোধী, সংবিধান বিরোধী ৷ এর বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসহ সব রাজ্যের বাঙালীদের তথা সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের ঐক্যবদ্ধভাবে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে এর সমাধান করতে হবে৷