আমরা বাঙালী দলের অসম রাজ্য সচিব শ্রী সাধন পুরকায়স্থ এক প্রেস বার্র্তয় বলেন--- যে ভারতের নির্বাচন কমিশন একটি নিরপেক্ষ সংস্থা হওয়া সত্ত্বেও অসমের ‘রিপ্রেজেন্টেশন অফ পিপলস্ অ্যাক্ট, ১৯৫০ ও ডিলিমিটেশন অ্যাক্ট,২০০২ এর ধারাগুলোকে উলঙ্ঘন করেছে৷ ভারতের স্বাধীনতার পর ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত সংবিধানের খসড়ার ৬৭(৮) ধারা মতে ১৪ জানুয়ারি ১৯৪৯ সালে দেশের লোক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে প্রতিটি লোকগণনার পর ডিলিমিটেশন করার আইন তৈরি হয়৷ অসমে সর্বশেষ ১৯৭৬ সালে ১৯৭১ সনের লোকগণনার ভিত্তিতে বিধানসভা ও লোকসভার আসন সংখ্যা নির্ধারন ও সীমানা তৈরি করা হয়েছিল৷ ২০০২ সালে সংসদে গৃহীত ডিলিমিটেশন আইনে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ও ভারতের নির্বাচন কমিশনার দিয়ে গঠিত কমিটিকে সর্বশেষ লোকগণনার ভিত্তিতে দেশের বিধানসভা ও লোকসভার সীমানা তৈরির দায়িত্ব প্রদান করা হয়৷ সেই আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে কোনো জেলা, গাঁও পঞ্চায়েত ও পৌরসভার ওয়ার্ড ভেঙ্গে দুটো আলাদা বিধানসভার সাথে জুড়ে দেওয়া যাবে না৷ এছাড়াও বিধানসভা ও লোকসভার সীমানা তৈরির ক্ষেত্রে ভৌগোলিক সামঞ্জস্যপূর্ণ এলাকা, প্রশাসনিক কাজের ও যাতায়াতের সুবিধা ইত্যাদিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে৷ সীমানা তৈরির ক্ষেত্রে প্রতিটি জনগোষ্ঠীর মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের সাংবিধানিক অধিকারকে সুরক্ষিত রাখার সর্বশেষ প্রচেষ্টা করতে হবে৷ গোটা ভারতবর্ষে ডিলিমিটেশন আইন,২০০২ মেনে ২০০৮ সাল থেকে ২০০১ সনের লোকগণার ভিত্তিতে বিভিন্ন রাজ্যের লোকসভা ও বিধানসভার সীমানার নির্ধারণ প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিধানসভা ও লোকসভার সীমানা তৈরির ফলে কোথাও কোনও অসন্তোষের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি৷ ২০০৭ সালে অসমেও বিধানসভা ও লোকসভার সীমানা পুনঃনির্ধারণের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিধানসভায় বিধায়ক থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যদের দিয়ে একটি কমিটি ঘটন করে ডিলিমিটেশন কমিশনের নিকট নতুন খসড়া তৈরির প্রস্তাব পাঠানো হয়৷ কিন্তু তখন রাজ্যের উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী সংঘটন এন.আর.সি করে ডিলিমিটেশন করা যাবে না বলে বারবার বাধা দান করে৷ তাদের আপত্তিতে দেশের অন্যান্য রাজ্যে ডিলিমিটেশন করা হলেও অসমে তা আটকে রাখা হয়৷ ডিলিমিটেশন আইন মতে আগামী ২০২৬ সালে গোটা দেশে পুনরায় সর্বশেষ লোকগণনার ভিত্তিতে বিধানসভা ও লোকসভার সীমানা নতুন করে তৈরি ও জনসংখ্যার ঘনত্ব বিচার করে বৃদ্ধি করা হবে৷ ভারতের আইন মন্ত্রী কিরণ রিজিজু গত মার্চ মাসে রাজ্যসভায় এক প্রশ্ণের উত্তর বলেছিলেন যে দেশের কোথাও ২০২৬ সালের আগে ডিলিমিটেশন করা হবে না৷ কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম যে নূন্যতম গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব না দিয়ে অসম সরকার রাজ্যের কেবিনেট পর্যায়ের এক মন্ত্রী ও শাসক দলের কিছু বিধায়কদের দিয়ে এক টি কমিটি ঘটন করে অসমে ডিলিমিটেশন সম্পন্ন করতে তৎপর হয়ে উঠে৷ যে সব উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী সংঘটন অতীতে এন.আর.সি না করে ডিলিমিচেশন করা যাবে না বলে প্রবল আপত্তি জানিয়েছিল তারাও আশ্চর্যজনকভাবে নীরব হয়ে যায়৷ গত মার্চ মাসে সংসদে দাঁড়িয়ে আইনমন্ত্রী যেখানে ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়া ২০২৬ সালের আগে শুরু হবে না বলে ঘোষণা করছেন ঠিক তখনই অসমে নির্বাচন কমিশনের এক প্রতিনিধি দল উপস্থিত হয়ে ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়৷ রাজ্যের বেশির ভাগ সংঘটনের মতামত গ্রহণ না করে সরকারের মনোনীত কমিটি ও উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী সংঘটনগুলির মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে গত ২০জুন নির্বাচন কমিশন একটি খসড়া প্রকাশ করে৷ নিরপেক্ষ সংস্থা হিসেবে বিবেচিত নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত খসড়ার সমর্থনে তড়িঘড়ি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর খিলঞ্জীয়ার রাজনৈতিক স্বার্থে তা তৈরি হয়েছে বলায় প্রথমেই খসড়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে জনগণের মনে প্রশ্ণ জাগে!
গত ২৬ জুন শিলচরে বরাক উপতক্যার তিনজেলার বিশিষ্ট নাগরিকদের উপস্থিতিতে নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি গণ সম্মেলনের আয়োজন করে৷ গণসম্মেলনে উপস্থিত সবার মতামতের ভিত্তিতে অসাংবিধানিক এই খসড়া বাতিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়৷ আমরা বাঙালী রাজ্য সচিব সাধন পুরকায়স্থ বলেন যে ভাষিক সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব, জমির অধিকার ও সর্বশেষ নিজেদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার কেড়ে নেওয়ার ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র হিসেবে এই খসড়া তৈরি হয়েছে৷ বরাক উপতক্যার প্রাণ কেন্দ্র বলে চিহ্ণিত, উগ্র-প্রাদেশিকবাদী শক্তির কুচক্রান্তের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণ আন্দোলনের অন্যতম পীঠস্থান ও মাতৃভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মবলিদানের রক্তে রঞ্জিত শিলচর শহরের শতাব্দী ঐতিহ্যপূর্ণ পৌর এলাকার ৬টি ওয়ার্ডকে নতুন খসড়ায় শিলচর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে৷ ঠিক একইভাবে করিমগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দাদের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে নবগঠিত বদরপুর বিধানসভা কেন্দ্রের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে৷ রেলশহর বলে পরিচিত বদরপুর টাউন কমিটির এলাকাকে কাছাড় জেলার কাটিগড়া বিধানসভার সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে৷ তাছাড়াও বরাক উপতক্যার দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা আসন কাঠলিছড়া ও পাথারকান্দিকে বিলুপ্ত করে জনগণের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষমতা হ্রাস করা হয়েছে৷ ফলে দুটো বিধানসভা সমষ্টির বিধায়ক উন্নয়ন তহবিলের টাকা খরচের পথও বন্ধ করে সে সব এলাকার উন্নয়নের গতিরোধ করা হয়েছে৷ ডিলিমিটেশন আইনে জন ঘনত্বের সাথে সঙ্গতি রেখে আসন সংখ্যা বৃদ্ধির যে ধারা রয়েছে তা সম্পূর্ণ উলঙ্ঘন করে জন ঘনত্বের দিক থেকে রাজ্যে প্রথম সারিতে থাকা দু’টো জেলা যথাক্রমে করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দির আসন সংখ্যা হ্রাস করা হয়েছে৷ নতুন খসড়ায় কাটিগড়ার লেভারপুতা গাঁও পঞ্চায়েতকে ভৌগোলিক দিক থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করিমগঞ্জ জেলার একটি বিধানসভার সাথে, লক্ষ্মীপুর ও বড়খলা সমষ্টির বেশ কিছু গাঁও পঞ্চায়েত এলাকাকে টুকরো করে কেটে নিয়ে ভৌগোলিক ও প্রশাসনিক দিক থেকে দুরে থাকা অন্য বিধানসভার সাথে, ধোয়ারবন্দ, বড়জালেঙ্গা এলাকাকে ৬০-৭০ কিলোমিটার দুরের বড়খলা বিধানসভার সাথে জুড়ে হয়েছে৷ এইসব ঘটনা মানুষের মনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে৷
শ্রী পুরকায়স্থ বলেন বরাক বাসীর বিরুদ্ধে এ এক গভীর ষড়যন্ত্র৷ তিনি প্রতিটি বরাক বাসীকে এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানান৷
- Log in to post comments