বাংলাদেশে গোঁড়া ইসলাম পন্থীরা আওয়ামী লীগে ঢুকছে যেটা জোটের বামেরা মানতে পারছে না

লেখক
মুশাফির

এই  প্রতিবেদনটি লিখতে গিয়ে প্রথমেই মুসাফিরের স্মরণে এলো মহান বিপ্লবী ও বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিক নেতাজী সুভাষচন্দ্রের ধর্মমত ও রাজনীতি সম্বন্ধে মতামত৷ তিনি জাপানে পাড়ি দেবার সময় একজন মুসলমান সঙ্গীকে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন যে, ধর্মমতকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে ফেলাটা ঠিক নয়৷

হঠাৎ সংবাদপত্রে সংবাদ এলো বাংলাদেশের মাননীয়া শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগে নেতৃত্বাধীন  ১৪ দলের সরকার গোঁড়া ইসলাম সংঘটনগুলির সঙ্গে আঁতাত করার দিকে  এগুচ্ছে এতে বামদলগুলির আপত্তি রয়েছে৷  বাংলাদেশের জন্ম হয় বাংলা ভাষা ভিত্তিক  আন্দোলনের মধ্য দিয়ে৷ পাকিস্তানের জনসংখ্যায় বাংলাদেশের অর্র্থৎ পূর্বপাকিস্তানের  জনসংখ্যা বেশি ছিল৷ আর বাংলা ভাষাভাষীর লোকজন বেশি তাই ঢাকা রাজধানী হোক এটা অনেকেই আশা করেছিল, তাদের কাম্য ছিল কিন্তু  মি:জিন্না ও তাঁর সমর্থকগণ উর্দ্দুভাষাকে রাষ্ট্রভাষাহিসাবে গ্রহণ করেন৷ এমনকি পূর্ব পাকিস্তান  ---অধুনা বাংলাদেশ-এর রাষ্ট্রভাষা হয় উর্দ্দু ফলে ২১শে ফ্রেব্রুয়ারী ১৯৫২ সালে টাকায় তীব্র ছাত্র আন্দোলন হয় রাষ্ট্রভাষা বাংলাভাষার দাবীতে ৷

এতে পাঁচজন তরতাজা ছাত্র পাকিস্তানী পুলিশের গুলিতে প্রাণ দেন৷ সেই আন্দোলনের পরিণতিতে বাংলাদেশ পরবর্ত্তীকালে এর স্বাধীন রাষ্ট্রহিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে৷ ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে হিন্দু মুসলমান জাতিভিত্তিক  দ্বিজাতিতত্বের ভিত্তিতে৷ অত্যন্ত বেদনা ও  দুঃখের কথা পূর্ব বাংলা থেকে দেশভাগ হওয়ার কিছুমাস আগে থেকেই  হিন্দু বিতাড়ণ শুরু করে ওপার বাংলার কট্টর মুসলীমপন্থীরা দাঙ্গা বাঁধিয়ে, এমনকি দেশভাগ হওয়ার পর এক নাগাড়ে অসহায়ে হিন্দু পরিবার ও অমুসলমান সম্প্রদায়ের নরনারী---সকলকে  দেশছাড়া করে তাদের বিষয় সম্পত্তি গ্রাস করে প্রতিবেশী মুসলমানরা৷  আজও সেই ধারা একনাগাড়ে চলছে! প্রায় শতকরা ২% হিন্দুর বাস ছিল  পূর্ববাংলায় বর্তমানে সেটা কমতে কমতে % এসে দাঁড়িয়েছে৷ তবু হিন্দু অমুসলমান বিতারন কমেনি৷ ‘শত্রুর সম্পত্তি’ ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা স্বাধীন হওয়ার পর হয়৷ যেটা নিছক কাগজে কলমে৷  যে দেশের স্থানীয় কার্র্যলয়গুলি সম্পত্তি  হস্তান্তর বিষয়টিকে প্রায় ধামা চাপা  দিয়েই রেখেছে৷ এ ব্যাপারে প্রচন্ড কালোটাকার খেলাটাই চলছে৷  এমনকি আওয়ামী লীগের  অনেক সদস্য নাকি এই কাজে লিপ্ত৷  এই অভিযোগও উঠছে৷

আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা এটাকে নির্র্বচনী কৌশল বলে ধারণা করেছেন৷  বাম দলগুলিকে এই বলে আশ্বস্ত করেছেন৷ তবে বামদলগুলির মধ্যে একটা অস্বস্তি তৈরী হয়েছে৷ বর্তমানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বইগুলিতে হিন্দু লেখকদের অধিকাংশ লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে৷  এমনকি রবীন্দ্রনাথের লেখাও  কমিয়ে দেওয়া হয়েছে৷  জোটে এ ব্যাপারে প্রতিবাদ দেখা দিচ্ছে৷

এদিকে জাতীয় পার্টির নেতা মি: এরশাদ শাহের সম্প্রতি নামসর্বস্ব ইসলামী দলগুলি নিয়ে এক বিরাট আকৃতি জোট তৈরী করেছেন৷ এই দলে ৪৮ দলের নাম জোটের আছে৷ কিন্তু মাত্র দু’তিনটি দলছাড়া বাকিগুলোর অস্তিত্ব নেই৷ তাদের কার্র্যলয়ও নেই৷ এই এরশাদের জোটের সমাবেশে মাত্র ১২টি দলের নেতাদের  উপস্থিতি দেখা গেছে৷

না তবে যেটা বাস্তব তা হলো স্বাধীন বাংলাদেশে গোঁড়া কট্টর পাকিস্তানপন্থীদের সংখ্যাটা নেহাতই কম নয়৷  তারা গত নির্র্বচনে অংশ নেয়নি৷ বিশেষ করে বি এম পি দল৷ তাদের চেয়ার পার্শন খালোদাজিয়া৷ তিনি খুবই উঠে পড়ে লেগেছেন  এবারে শেখ হাসিনা কে হারাতে৷ বিশেষ করে কয়েকদিন আগে তাঁর কার্র্যলয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তল্লাশী চালানো হয়৷ এতে তিনি খবই ক্ষুদ্ধ৷

এদিকে ওয়ার্র্কস দলের রাশেদ খাঁ মেনন বলেন যে  দল বাড়ানোর কথা যাদের নিয়ে হচ্ছে যদি তাদের দলে টানা হয় তাহলে কি হবে সেটা ভাববার কথা৷  সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া বলেন যে দলগুলোর কথা আসছে তারা এল জোটের মূল চেতনা হারিয়ে যাবে৷  বামেদের সাধারণ সম্পাদক শিরীণ আকতার বলে যে ১৪ দল একটা আদর্শবাদ দলের জোট৷ সেটা থেকে সরে আসার কোন সুযোগ নেই৷ যদি অন্য কিছু হয় তাহলে জোটই হারিয়ে যাবে৷ তাছাড়া গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাশান্যাল আওয়ামী পার্টি(ন্যাপ), জাতীয় দল, কমিউনিষ্ট কেন্দ্রের নেতারা বলেন যে তাঁরা অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল রাজনীতির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এ থেকে সরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই৷

পরিশেষে অদ্যবধি যেটা দেখা যাচ্ছে তা হলো সরকারের ১৪ দলের জোটে  অনেক  চুনোজল ঢুকেছে যা সচরাচর হয়ে থাকে রাজনৈতিক জোটগুলিতে তাই হয়েছে৷  অনেকক্ষেত্রে এমনই ঘটনা ঘটছে যা সরকারের কাম্য নয়৷

এইসব অনৈতিক কান্ডগুলিতে সরকার অনেকক্ষেত্রেই  অপদস্ত হয়ে পড়েছেন৷ তাতে সরকারের বদনামটাই বাড়ছে৷ এগুলি ঘটাচ্ছে  ইচ্ছাকৃতভাবে গোঁড়া ইসলামপন্থীর লোকেরা, বিশেষ করে হিন্দু ও অমুসলমানদের উপর নানা ধরণের অত্যাচার, জুলুম করে৷ এদিকে নিরাপত্তাহীনতায় অমুসলমান ভুগছে নানাদিক থেকে৷

অত্যন্ত  আশাম্বিত হয়েই বলতে সেই বিপ্লবী কবি নজরুলের কথা৷

---হিন্দু না ওরা মুসলমান, ঐ জিজ্ঞাসে কোন জন?

কান্ডারী বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার!

যদি সরকার মানুষকে মানুষ না ভাবেন, যদি শুধু গদীর স্বার্থে দলবাজিতেই পোক্ত হয় তাহলে ভরাডুবি হতে বাধ্য৷ সরকারকে মানবতা রক্ষায়  ন্যায়  সত্যের পথে এগুতে হবে৷ এটাই মহান আল্লার নির্দেশ৷ ধর্মমতান্ধতায় আল্লা চরম অসন্তুষ্টই হন৷ একথা যেন শাসকদলের স্মরণে থাকে৷