‘‘যত্র বিদ্বজনো নাস্তি শ্লাঘ্যস্তত্রাল্পধীরপ্৷
নিরস্তে পাদপে দেশে এরণ্ডহপি দ্রুমায়তে৷৷’’
যেখানে সত্যিকারের বিদ্বান নেই সেখানে অল্পজ্ঞ ব্যষ্টিও শ্লাঘ্য অর্থাৎ বরণীয় রূপে গণ্য হন৷ যেমন যে দেশে বৃক্ষ নেই সে দেশে এরণ্ড (রেড়ির গাছ) বৃক্ষরূপে সম্বোধিত হয়ে থাকে৷ ওপরের কথাটির কী জুৎসই বাংলা হবে একদিন আমি তা ভাবছিলুম৷ ভাবতে ভাবতে চলেছি হুগলী জেলার বেলুন গ্রামের পাশ দিয়ে৷ সবে সন্ধ্যে হয়েছে৷ হঠাৎ দেখি দীর্ঘকায় দুই নারী নাকি সুরে চিৎকার করছে---একজনের হাতে আঁশবটি৷ অন্যের হাতে মুড়ো ঝাঁটা৷ তাদের নাকি সুরে বুঝলুম তারা মানবী নয়---পেত্নী৷ কথা শুণে মনে হ’ল তারা দুই জা৷
ছোট জা বলছে আমার সোঁয়ামীর মাস যেঁতে আয় তিন হাজার টাকা৷ আর ভাঁসুর ঠাঁকুরের মাত্তর দু হাজার টাকা৷ অথচ একবেঁলা আঁমাকে রান্না ঘরে বসে কাঁঠের উনুনে তাঁত সঁইতে হয়৷ তাঁ আঁমি কেঁন কঁরব? আঁমি আঁর হেঁসেল ঠেলতে পাঁরব না৷ ওঁই সঁময়টা হঁয় সিনেমা দেঁখতে যাঁব না হঁয় কোন শ্যাঁওড়া গাঁছে চঁড়ে খানিকটা হাঁওয়া খেয়ে আসব৷ তোঁর সোঁয়ামির আঁয় কঁম৷ তুই দু’বেলা হাঁড়ি ঠেঁলবি৷
বড় জা বলছে---‘কঁথায় বঁলে, যেঁখানে বড় গাঁছ নেই সেখানে বেঁগুণ গাঁছ ও বিরিক্ষি৷ (কথাটা আমি সঙ্গে সঙ্গে নোট বুকে টুকে নিলুম৷ বুঝলুম---এইটাই ‘এরণ্ডহপি দ্রুমায়তে’ কথাটার জুৎসই বাংলা)৷ তুঁই হাঁ-ঘরে হাঁ-ভাতে ছোঁট ঘঁরের মেঁয়ে---বাঁপের জঁন্মে এঁকসঙ্গে তিঁন হাঁজার টাঁকা দেঁখিসনি৷ এঁখানে এঁসে তাঁই দেঁখে ধঁরাকে সঁরা জ্ঞাঁন কঁরছিস৷ আঁজ থেঁকে আঁর পেঁত্নী বঁলে পঁরিচয় দিঁয়ে লোঁক হাঁসাসনি৷ তঁবুও যঁদি তিঁন হাঁজার টাঁকা সঁত্যিকারের আঁয় হোঁত! মাঁইনে তোঁ পাঁয় এঁক হাঁজার টাঁকা আঁর বাঁকীটা পাঁয় চোঁরাবাজারে হাঁসপাতালেঁর চাঁদর, তোঁয়ালে, ওঁষুধ, ফিঁনাইল বাঁইরে পাঁচার করে’৷ আঁজ তোঁর তিঁন হাঁজার টাঁকার শ্রাঁদ্ধ কঁরছি৷ এঁইসব চুঁরি আঁর পঁাঁচারের কঁথা টিঁকটিঁকি বাঁবুদের (ডিটেক্টিব্ মানে ইনটেলিজেন্স৷ ডিটেকটিব শব্দ থেকেই টিকটিকি শব্দ এসেছে) বঁলে দোঁবে৷ তাঁরা গঁলায় গাঁমছা বেঁধে তোঁর মুঁখপোড়া সোঁয়ামীকে জেঁলে ঠেঁলে দেঁবে’৷
পেত্নীর ছোট জা তখন বললে---‘তোঁর যাঁ ইঁচ্ছে কঁরগেঁ যাঁ৷ আঁমি আঁশ বঁটি দিঁয়ে টিকটিকির ন্যাঁজ কেঁটে দোঁব৷ আঁমার সোঁনার চাঁদ বাঁছাটা এঁকদিনও মাঁছের মুঁড়ো চোঁখে দেঁখতে পাঁয় নাঁ, আঁর তোঁর ভুঁতুম পেঁচা উনুন মুঁখোটা রোঁজ রোঁজ রুঁই মাঁছের মুঁড়ো চিঁবোচ্ছে৷ এঁ আঁর আঁমার সঁহ্য হঁয় নাঁ৷ নাঁরায়ণ! আঁজই এঁর এঁকটা হেঁস্তনেস্ত কঁরে দাঁও৷’
পেত্নী দু’জন এতক্ষণ দেখতে পায়নি৷ আমি আরও কাছে আসায় আমার জুতোর শব্দে তাদের হুঁশ হলো৷ তারা আমার দিকে তাকিয়ে দেখে তাদের দশ হাত লম্বা জিভ দাঁতে করে কেটে তাদের লজ্জানুভুতি জানাল৷ আমি বললুম---‘অত বেশী দাঁতে চাপ দিসনি৷ জিভ কেটে খসে যাবে৷ তখন ঝগড়া করা জন্মের মত বন্ধ হয়ে যাবে---বোবা হয়ে যাবি’৷ তখন তারা জিভ ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে মাথায় প্রকাণ্ড ঘোমটা টেনে দিল৷ ঘোমটা এত লম্বা করে টানলে যে ঘোমটার জেরে পিঠ হয়ে গেল একেবারে ফাঁকা গড়ের মাঠ৷
আমি আবার বললুম---তোদের এত লজ্জার কি আছে রে! এত লম্বা ঘোমটা টানলে যে দেখতে পাবি না৷’
তারা তখন ঘোমটা সরিয়ে ফেললে আর বললে---‘পেত্নী হঁলেও আঁমরা তোঁ মাঁনুষ---আঁমরাও তোঁ তোঁমার মেঁয়ে৷ তাঁই ঘোঁমটা আঁর দিঁলুম নাঁ’৷
আমি বললুম---‘পিঠটা বরং ভালো করে ঢাক৷ শীত কম লাগবে৷
আমি বললুম---‘এই ভর সন্ধ্যেয় তোরা ঝগড়াঝাঁটি করছিস, তোদের বাড়ীর পুরুষ মানুষেরা গেল কোথায়’?
ওরা বললে---‘আঁমরা যঁখন ঝঁগড়াঝাঁটি কঁরি তঁখন ওঁরা এঁকটু তঁফাতে থাঁকে, ধাঁরে কাঁছে আঁসে না৷ লঁড়াই থেঁমে যাঁওয়ার পঁর তাঁরা লাঁঠিসোঁটা নিঁয়ে ইঁউনিফরম্ পঁড়ে আঁমাদের কাঁছে এঁসে হঁম্বিতঁম্বি কঁরে বঁলে---আঁগে খঁবর কাঁহে নেঁহি দিঁয়া হ্যাঁয়? ক্যাঁ হুঁয়া? সেঁই জঁন্যেই তুঁমি বাঁড়ির পুঁরুষদের কাঁউকেই দেঁখতেও পঁচ্ছো না’৷ আমি বললুম---‘অনেকক্ষর ধরে চিৎকার করে তোদের গলা শুকিয়ে গেছে৷ খানিকক্ষণ গাছে চড়ে একটু জিরিয়ে নে৷’
ওরা দুজনেই সামনে তালগাছটাতে তরতরিয়ে উঠতে গেল৷ আমি বললুম---‘‘দুজনেই একটা তালগাছে উঠিসনি৷ তাহলে গাছে উঠে ধস্তাধস্তি করে ধাক্কাধাক্কি করে দুজনেই নীচে পড়ে হাড়গোড় ভেঙ্গে প্রাণ হারাবি৷ মানুষ ছিলি---একবার ম’রে পেত্নী হয়েছিস আর একবার যদি মরিস তোদের কী গতি হবে আমি ভেবে কুল-কিনারা পাচ্ছি না৷
তাই শান্তিতে যদি জিরিয়ে নিতে চাস তবে তোরা দুজনেই দুটো আলাদা আলাদা গাছে উঠে বস’৷ ওরা তখন দুটো আলাদা গাছে উঠে বসল৷ আমার জরুরী কাজ ছিল৷ ট্রেন ধরবার জন্যে তাড়াতাড়ি পাণ্ডুয়া স্টেশনের দিকে চলে চলেছি৷ পথ চলতে চলতে অনেক দূর থেকে কাণে ভেসে আসছিল তালগাছের ওপর থেকে পেত্নী গাওয়া রাশব রাগীনিতে ‘ফিল্মী গানেঁ’
যাইহোক, শিখলুম নোতুন কথা ঃ যেখানে বড় গাছ নেই সেখানে বেগুণ গাছও বিরিক্ষি৷