বিজেপি বিপুল সংখ্যায় এমপি নিয়ে দিল্লির শাসন ক্ষমতা লাভ করে৷ কিন্তু নরেন্দ্রমোদী সরকার জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষাকে নির্মমভাবে পদদলিত করে ধনীদেরই স্বার্থ সিদ্ধি করে চলেছেন৷ ব্যাঙ্কের সুদের হার একেবারে কমিয়ে দিয়ে কোটি কোটি নিম্নমধ্যবিত্তশ্রেণী নাগরিকদের আর্থিক দিক থেকে শোষণ করে চলেছেন৷ টাকার মূল্য যখন দ্রুত কমে যাচ্ছে তখন গরিবদের কথা চিন্তা না করে ধনীদের কথা ভাবছেন ৷ কোটি কোটি টাকায় আমানত যাঁদের ব্যাঙ্কে জমা তাঁরা শতকরা ৪ শতাংশ সুদ পাবেন আর সাধারণ আমানতকারীরা সুদ পাবেন শতকরা ৩ শতাংশ কি ৩.৫০ শতাংশ ৷ আগে যখন টাকার ভাল মূল্য ছিল তখন ব্যাঙ্কে সাধারণ আমানতকারীরা ১৩ শতাংশ হারে ৫ বছরে দ্বিগুণ সুদ পেতেন৷ বর্তমানে সেই সুদ কমে ৭ শতাংশ কিংবা ৬.৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে ৷ গরিব ও বৃদ্ধবৃদ্ধাদের মাথায় হাত৷ হঠাৎ কেন্দ্র ঘোষণা করেছেন রান্নার গ্যাসের দাম ক্ষেপে ক্ষেপে ৪ টাকা করে বাড়ানো হবে ও ধীরে ধীরে ভর্তুকী বন্ধ করা হবে৷ এতে দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের সংসারে রান্নার সমস্যা দারুণ বাড়বে৷
রেশনিং ব্যবস্থা দিন দিন অচল হয়ে পড়ছে৷ কার্ড প্রতি সপ্তাহে ৫০০ গ্রাম চাল আর ৭৫০ গ্রাম গম দেওয়া হয় ৷ চিনি উঠে গেছে৷ এতে কি একজন বয়ষ্ক ব্যষ্টির সাতদিন চলে ? যে মাসে ৫ সপ্তাহ সেই মাসে এক সপ্তাহের রেশন বন্ধ থাকে৷ ডিজিটাল কার্ড এমনভাবে করা হচ্ছে যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে কার্ডধারীর নামের ও পরিবারের কর্র্ত্তর ইংরেজী নামের বানান ভুল ছাপানো হচ্ছে৷ শুধু তাই নয়, বয়স ও তারিখ ভুল করে দেওয়া হচ্ছে৷ এমনকি ঠিকানা ভুল করায় অনেকেই অত্যন্ত সংকটের মধ্যে আছে৷
বহু গরিব মানুষ আজও কার্ড পায়নি৷ কিন্তু তার আগে যে পুরাতন কার্ড ছিল সেই কার্ড তাদের থাকা সত্ত্বেও রেশন পায় না৷ রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী তাদের রেশন দেওয়ার ঘোষণা করলেও তারা রেশন পায় না৷ নানা ধরণের কার্ড হয়েছে ৷ যেমন একধরণের বড় কার্ড হয়েছে সেই কার্ডধারীরা মাসে মাত্র ১ কেজি চাল পায় ১২ টাকায়, কেউ কেউ গম পায় ১ কেজি ৯টাকায়৷ এই ধরণের রেশন ব্যবস্থায় জনগণের কতটুকু সুবিধা হয়? যতো দিন যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায়কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার নানাধরনের নিয়ম চালু করে মানুষকে হয়রানিই করে যাচ্ছেন৷ আধার কার্ডে যেভাবে ইচ্ছাকৃত ভুল থাকছে তাতে জনগণ নানাভাবে হেনস্থা হচ্ছে৷ মাননীয় সুপ্রিমকোর্টে আধার কার্ড নিয়ে মামলা রুজু হয়েছে৷ মাননীয় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে তীব্র প্রতিবাদ করেছেন৷ রাজ্যে সরকারের তরফে মহামান্য সুপ্রিমকোর্টেও তার প্রতিবাদ করা হয়েছে ন্যায় বিচারের জন্য৷ বিজেপি সরকার আধার কার্ডকে নিয়ে এমন নিয়ম চালু করেছেন যাতে জনগণ প্রতিক্ষেত্রেই নানা অসুবিধায় পড়ছে৷
হঠাৎ ভারতের মতো বিরাট রাষ্ট্রে এক কর ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে ১লা জুলাই থেকে৷ তার ফলে সাধারণ গরিব মানুষের দারুণভাবে আর্থিক সমস্যা হচ্ছে৷ ওষুধের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ছাড় ছিল সেটা উঠে গেছে৷ আর ওষুধের দামও অনেক ক্ষেত্রে বাড়ানো হয়েছে৷ বলা হয়েছিল জনগণ অনেক ব্যাপারে সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন বিশেষ ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে৷ বাস্তবে তার কোন হদিশই নেই৷ অদ্যাবধি কোন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নির্র্ধরণই করা হয়নি৷ এর ফলে অসাধু ব্যবসাদারগণ জনগণকে নিমর্মভাবে আর্থিক শোষণ করছে৷ এ কেমন সরকার ! এ কেমন গণতন্ত্র! বিজেপির আগমনে মানুষ মনে করেছিল হয়তো সমস্যার কিছুটা সুরাহা হবে কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই সরকার যেটা করতে যাচ্ছে সেটাতেই দারুণ অব্যবস্থা ও জনগণের দারুণ হেনস্থা ও পকেটে টান পড়েছে৷ এটা এক ধরণের নির্মমভাবে আর্থিক শোষণ নয় কি?
এই নরেন্দ্র মোদী সরকার গত বছরের শেষের দিকে ১০০০, ৫০০ টাকা নিয়ে যে কাণ্ড করে বসলেন সেই বিমুদ্রাকরণে সারা রাষ্ট্র নাজেহাল হলো বিশেষ করে সাধারণ নিম্নমধ্যবিত্তের পবিবারগুলি৷ রাত ১২ টায় নোট বাতিলের নির্দেশ ! কি ভয়ঙ্কর অবস্থা! কতো লোক মারা গেলেন ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে৷ কত লোকে নিঃস্ব হলেন৷ কত রোগী চিকিৎসা সংকটে পড়ল, কত পরিবারের শুভ বিবাহ বন্ধ হয়ে গেল, কত পরিবার কত ধরণের দুর্ভোগে পড়লেন কয়েক মাস ধরে তার কোন হিসাব নেই৷ নোট বাতিলের সুফল কিন্তু মানুষ পায়নি তিলমাত্র কিন্তু চোরাকারবারীরা কালো টাকা নানাভাবে শাদা করে নিল৷ তার কয়েক দিনের মধ্যে, বাজারে নোতুন টাকা জাল হয়ে বেরিয়ে গেল ৷ তখন খুচরোর কি অভাব ! বর্ত্তমানেও খুচরে নিয়ে বাজারে অশান্তি৷ হাটে বাজরে ছোট ১/২ টাকা অনেকেই না নেওয়াতে হাটে বাজারে এক ভয়ঙ্কর অবস্থা! হতভাগ্য জনগণ দারুণ অসুবিধাভোগ করে চলেছেন ৷ বাজারে প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দারুণভাবে মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে৷ সেদিকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কোন নজরই নেই৷
বর্তমানে হাওয়া উঠেছে রেশনিং ব্যবস্থা উঠে যাবে কয়েক মাসের মধ্যে৷ রেশনিং ডিলাররাই এ ব্যাপারে নানা মন্তব্য করছেন৷ তাঁদের নাকি কারবার চালানোটাই আর্থিক দিক থেকে দারুণ ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তারা রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হচ্ছেন৷ জনগণ কি বিপাকে ! কেরোসিন নিয়ে যা হচ্ছে সেটাও এক অব্যবস্থা৷ প্রতিমাসে লিটার পিছু একটাকা করে বেড়ে যাচ্ছে৷ সাধারণের আয়ের পথ সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে৷ বাঁচার পথ চারিদিকেই রুদ্ধ হয়ে পড়ছে৷
এ ধরণের শাসন জনগণ তো আশা করেনি৷ আশ্চর্যের কথা কেন্দ্রীয় সরকার কিন্তু সরকারী কর্মচারী ও এম.পি.দের বেতন বাড়িয়ে যাচ্ছেন৷ এতে তো লোকসভাতেও প্রশ্ণ উঠছে৷ তাই সরকার জনগণের কথা ভাবুন৷ এইভাবে আর্থিক শোষণ মোটেই কাম্য নয়৷
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, খোদ লোকসভায় মাননীয় বিজেপি সদস্য বরুণ গান্ধী প্রশ্ণ তোলেন, গণতন্ত্রের সাধনপীঠ সংসদের ভিতরে সাংসাদরা কেন নিজেদের বেতন নিজেরাই বৃদ্ধি করেন৷ তাছাড়া বিস্তারিত আলোচনা ছাড়াই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করানো হয়৷ সরকারের এক সাংসদই সরকারের সমালোচনা করেন৷ তাঁকে সমর্থন করেন তৃণমূলের সৌগত রায়৷ তাঁর মতে অনেক ঘটনাই লজ্জাজনক৷ তাঁর মতে গত ১৯৫২ সালে লোকসভা বসেছিল ১২৩ দিন৷ ২০১৬ সালে সেটা কমে ৭৫-এ দাঁড়ায় সংসদের বেতন বেড়েছে ৪০০ শতাংশ৷ বরুণ গান্ধি বলেন, ব্রিটেনে বৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশ৷ তার মতে সংসদ তৈরী হয়েছে আলাপ ও আলোচনার জন্য৷ যেভাবে জোর করে হাততালি দিয়ে সংখ্যাধিক্য দেখিয়ে বিল পাশ হয় যেটা কাম্য নয়৷ এতে নীতিকে অগ্রাহ্যই করা হয়৷ এতে দেখা যায় প্রায় ৪১ শতাংশ বিল পাশ হয়েছে কোন আলোচনা ছাড়াই ৷ মাননীয় সদস্যের বক্তব্য গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ এতেই বোঝা যায় ভারতের গণতন্ত্র কতখানি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ৷ আর সত্য বলতে কি জনগণের কল্যাণের চেয়ে এখানে দলীয় স্বার্থকে অধিকাংশ সময় প্রাধান্য দেওয়া হয়৷
১৯৭৫ সালে অভ্যন্তরীণ জরুরী অবস্থা জারি করা হয় মহামান্য লোকসভাকে না জানিয়ে৷ সেটা ছিল স্বৈরাচারিতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত৷ বর্তমানে কতকটা সেই পথেই চলছে শাসকবৃন্দ৷ জনগণ সতর্ক হোন!
- Log in to post comments