বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হবে কী করে ?

লেখক
আচার্য্য সত্যশিবানন্দ অবধূত

আজ  আমরা দেখছি হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবী নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব’৷  পৃথিবী ধবংসকারী পারমাণবিক মারণাস্ত্রের পাহাড় তৈরী হচ্ছে৷

প্রথম মহাযুদ্ধের পর বিশ্বশান্তির উদ্দেশ্যে ‘লীগ অফ্ নেশনস’ বা ‘জাতিসংঘে’র সৃষ্টি করা হয়েছিল৷ তা ব্যর্থ হল৷ চোখের সামনে ঘটে গেল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ৷ তারপর আবার সৃষ্টি হয়েছে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বা সংক্ষেপে  ইয়ু-এন-ও৷ বর্তমানে  সাধারণভাবে  একে রাষ্ট্রসংঘ বা ‘রাষ্ট্রপুঞ্জ’ বলা হয়৷ এই রাষ্ট্রপুঞ্জও  আজ নিজের ব্যর্থতা প্রমাণ করছে৷ রাষ্ট্রপুঞ্জের শত মধ্যস্থতা সত্ত্বেও পারমাণবিক অস্ত্রের ভান্ডার বেড়েই চলেছে৷ দেশে দেশে লড়াইও অব্যাহত৷ ইরাণ-ইরাক যুদ্ধে, আরব-ইস্রায়েল  যুদ্ধ, দক্ষিণ আফ্রিকার  নামিবিয়ার ওপর আধিপত্য ও স্বদেশে  দঃ আফ্রিকার  বর্ণবিদ্বেষী নীতিকে  ভিত্তি করে অত্যাচারের স্টীম রোলার চালানো--- কোন সমস্যারই সমাধান করতে  পারল না রাষ্ট্রপুঞ্জ৷  আফগানিস্থানে সোবিয়েত  সামরিক হস্তক্ষেপ, কম্বোডিয়ায় বিয়েতনামী হস্তক্ষেপ বা চীন-ভিয়েতনাম সীমান্ত লড়াই রাষ্ট্রপুঞ্জের চোখের সামনেই ঘটল৷  মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে  ভিয়েত নামের  দীর্ঘস্থায়ী  রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের স্মৃতিও আমাদের মন থেকে মুছে যায়নি৷  অতদূর  যাওয়া  কেন,  লালচীনের ভারত আক্রমণ বা পাকিস্থানের ভারত আক্রমণ --- কোথাও রাষ্ট্রপুঞ্জ তার বাঞ্ছিত ভূমিকা  পালন করতে পারেনি৷ পাঁচ বৃহৎ শক্তির ‘বেটো’ প্রদান  ক্ষমতা সহ  আর অজস্র বন্ধনে  রাষ্ট্রপুঞ্জ নিজেই বন্দী৷ তাই  বিশ্বমানবের মুক্তির আকুতিতে বর্তমান  রাষ্ট্রপুঞ্জ উদ্বিগ্ণ, কিন্তু আজ সে কিছুই করতে পারছে না৷

তাই, বর্তমানে রাষ্ট্রপুঞ্জ  বিশ্বশান্তির  পক্ষে  নিশ্চিত ভরসাস্থল --- এমন আশা করার সামান্যতম আলোক রশ্মিরও সন্ধান  মিলছে না৷

তাহলে কঃ পন্থা--- পথ কী?  মানব সভ্যতা কি মানুষের হিংসা-দ্বেষ-জিঘাংসার কালাগ্ণিতে ভস্মীভূত হয়ে যাবে? বিশ্বের বিজ্ঞানীরা ও চিন্তাশীল মানুষেরা  সেই আশঙ্কায় কাল গুণছেন৷

ঠিক এই পরিস্থিতিতে এ যুগের  সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক ঋষি প্রভাতরঞ্জন  সরকার বলছেন---বিশ্বমানবকে তার অস্তিত্বের  প্রয়োজনে বিশ্বভ্রাতৃত্ব তথা  বিশ্বশান্তির  এক অভ্রান্ত পথ বেছে নিতে হবে,  আর মানব সভ্যতার অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে বিশ্বের মানুষকে এই পথ  গ্রহণ করতেই  হবে৷

কী সে পথ ? সংক্ষেপে  সেই পথের কথাই এখানে  আলোচনা করব৷

শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার বিশ্বমানবের  মহামানবের মহামিলনের  তথা বিশ্বৈকতাবাদ প্রতিষ্ঠার  ৪টি অত্যাবশ্যক উপাদানের কথা বলেছেন৷ এই চারটি হ’ল---

১৷ সাধারণ  আধ্যাত্মিক জীবনদর্শন৷

২৷ বিশ্বজুড়ে একই সাংবিধানিক কাঠামো৷

৩৷ বিশ্বজুড়ে এক সাধারণ দন্ডবিধি প্রণয়ন৷

৪৷  সকলের জীবনের নূ্যনতম চাহিদা পূরণ৷

মানুষের কাছে এই অমোঘ সত্য তুলে ধরতে হবে যে, সবাই এক পরমপুরুষের সন্তান৷ ‘মানুষে মানুষে নাইক বিভেদ নিখিল জগৎ ব্রহ্মময়’৷ জাত-পাত-সম্প্রদায় নিয়ে মাতামাতি বা বিশেষ ভূমিখন্ডের  মধ্যে  মনের  বিস্তারকে সীমাবদ্ধ করে রাখার প্রবণতা, এসবের ঊধের্ব উঠে  মানুষকে উপলদ্ধি করতে  হবে বিশ্বের  সমস্ত মানুষ-জীবজন্তু তরুলতা-চেতন-অচেতন সমস্ত  কিছু এক পরম চৈতন্যের  বিকাশ৷ সূক্ষ্ম মনস্তাত্ত্বিক ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে  মানুষকে বুঝিয়ে দিতে  হবে, সেই  এক ভূমা চৈতন্য থেকে ভূমা-মানস, তা থেকে বিশ্বের শক্তিরাশি--- তা থেকেই সমস্ত  জড় সত্তা সূর্য-তারা-নীহারিকাপুঞ্জ-গহ-উপগ্রহ সবকিছু   এসেছে ৷ এই জড় সত্তার মধ্যেই  প্রকৃতপক্ষে চৈতন্যসত্তা সুপ্তাবস্থায় রয়েছে৷ উপযুক্ত আবহাওয়া-তাপ-আলো প্রভৃতি পেয়ে জড়ের মধ্যে সেই সুপ্ত চেতনার প্রকাশ ঘটেছে৷ এমনি করে  সৃষ্টি হয়েছে এককোষী প্রাণী৷ তারপর ধীরে ধীরে চেতনার ক্রমবিকাশের ধারায় সৃষ্টি হয়েছে উদ্ভিদ, নানান্ ধরণের অনুন্নত, ও উন্নত প্রাণী, সবশেষে মানুষ৷ ক্রমবিকাশের এই ধারার  এখানেই পরিসমাপ্তি নয়, মানুষের  মধ্যেও শারীরিক  গ্ল্যাণ্ডের  ও মনের  বিভিন্ন কোষের  ক্রমবিকাশ ঘটতে ঘটতে প্রতিটি মানুষই  সেই পরমচৈতন্যসত্তায়--- সেই পরমপুরুষে মিলিত হবে--- যেমন করে সমস্ত ক্ষুদ্র-বৃহৎ নদী সমুদ্রে মিলিত হয়৷ মানুষকে বোঝাতে হবে--- সকলের জীবনের পরম লক্ষ্য সেই পরমপুরুষ৷ মানুষ মাত্রেরই কর্তব্য তার ত্রিমুখী বিকাশ ঘটিয়ে যাওয়া---

১৷ শারীরিক বিকাশ৷

২৷ মানসিক বিকাশ৷

৩৷ আধ্যাত্মিক বিকাশ৷

মানুষের  ক্ষুধা সীমাহীন৷ এই সীমাহীন ক্ষুধাকে কেবল যদি কেউ ভৌতিক Phsical) ক্ষেত্রে  ছুটিয়ে দেয়--- তাহলে মানুষে মানুষে সংঘর্ষ---স্বার্থের  প্রচন্ড সংঘাত বাধবেই৷ কেননা, এই ভৌতিক সম্পদ সীমিত---এখানে অবাধ প্রতিযোগিতা মানেই সংঘর্ষ৷ মানুষের মনকে  ছুটিয়ে দিতে হবে মানসিক সম্পদ ও আধ্যাত্মিক সম্পদ--- বিশ্বচৈতন্য -ধারা-এ ধারা অনন্ত--- তাই এই সূক্ষ্ম জগতেই কেবল মানুষ নিজের অনন্তের পিয়াসী মনকে তৃপ্ত করতে পারে৷ এই সম্পদ অনন্ত বলে --- তাই  এখানে দ্বন্দ্বের কোন অবকাশ নেই৷ বরং মানুষের  মন যত সূক্ষ্মত্বের পানে এগিয়ে যাবে--- ততই সে উপলব্দি করবে--- সকল সত্তার মধ্যে একটা আভ্যন্তরীণ ব্রাহ্মী যোগসূত্র রয়েছে এই উপলব্ধি মানুষকে যথার্থ বিশ্বভ্রাতৃত্বের ভাবনায় উদ্বুদ্ধ করবে৷

এই সাধারণ আধ্যাত্মিক দর্শনের ভিত্তিতেই  মানুষ গড়ে তুলবে  মানব সমাজের শিক্ষা-সাহিত্য-শিল্প-অর্থনীতি-রাষ্ট্রনীতি সবকিছু৷

এক্ষেত্রে বলে রাখা উচিত, যে সাধারণ  আধ্যাত্মিক জীবনদর্শনের  কথা এখানে বলা হচ্ছে--- তা অবশ্যই ‘রেলিজন্’ পদবাচ্য হবে না৷ ‘রেলিজনে’র মধ্যে দেশ-কাল-পাত্রের সীমাবদ্ধতা  আছে, কিন্তু পূর্র্বেল্লেখিত সাধারণ Common) আধ্যাত্মিক দর্শন বা আধ্যাত্মিক আদর্শ হবে সার্বজনীন-সাবভৌমিক ও  সার্বকালিক৷ কোন গোঁড়ামী নয়, যুক্তি-বিজ্ঞান-অনুভূতির দৃঢ় ভিত্তিতে হবে এর প্রতিষ্ঠা৷ জাত-পাত-সম্প্রদায় ভেদের কোন প্রশ্ণই এখানে উঠবে না---আমি অমূক দেশের--- উনি অমূক দেশের---আমার পবিত্র ভূমি---আমার দেশের নদী মুক্তি-প্রদায়িনী--- আর অন্যান্য দেশ বা সেসব দেশের নদনদী অপবিত্র--- এসব অযৌক্তিক অন্ধবিশ্বাসের স্থান এখানে থাকবে না৷ এই সার্বভৌম সাধারণ জীবনাদর্শে বিশ্বমানবকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে৷

দ্বিতীয় উপাদান হল---বিশ্বজুড়ে একই সাংবিধানক কাঠামো৷ একদিন মানুষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোষ্ঠীতে আবদ্ধ ছিল--- গোত্র--প্রবরের বেড়াজালে বন্দী ছিল৷ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনপদের সীমানা ডিঙ্গিয়ে আজ মানুষ গড়েছে নেশান৷ কিন্তু আজ নেশানও তার জৌলুষ হারিয়েছে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রণদামামা তো েেজ উঠেছিল--- এই  নেশনবোধ কেন্দ্র করে৷ তাই জগতের  মানুষ এবার ভাবছে--- বিশ্বরাষ্ট্রের কথা৷ ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড’--- তাই কবি গেয়েছেন, ‘জগৎ জুড়িয়া আছে এক জাতি, সে জাতির  নাম  মানব জাতি’৷ বিশ্বরাষ্ট্রের ভাবনা  জান্তে  বা অজানতে ---মানুষের চিন্তাজগতকে  ঘিরে রয়েছে বলেই ‘রাষ্ট্রপুঞ্জে’র দিকে  মানুষের  আশা-আকাঙ্ক্ষাকে  আদৌ পূর্ণ করতে পারছে না৷

বিভিন্ন ‘নেশান’ আজ যে ‘রাষ্ট্রপুঞ্জ’কে  যথার্থ বিশ্বরাষ্ট্রের মর্র্যদায় ধীরে ধীরেও উন্নীত হতে দিচ্ছে না---তা’ বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের আপন আপন স্বার্থের  কারণেই৷  যথেচ্ছভাবে মাতববরী করার  সুযোগ তারা সহজে ছাড়তে চাইছে না৷  ক্ষমতা-প্রিয়তা তার প্রধান কারণ৷ রাষ্ট্রপুঞ্জে বিশেষ কয়েকটি দেশের অযৌক্তিক বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগের  (‘বেটো’ ---Veto) সুযোগ গ্রহণের পেছনেও একই মনস্তত্ব কাজ করছে৷

যাঁরা বলেন, রাষ্ট্রপুঞ্জকে ‘বিশ্বরাষ্ট্রে’র মর্র্যদা দান করলে স্থানীয় বা রাষ্টীয় স্বার্থের প্রকৃতই হানি হবে৷ তার ভুল করেন৷ কারণ, বিশ্বরাষ্ট্র্র গড়লে--- তা গড়া হবে বিভিন্ন ‘স্বয়ং স্বশাসিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে’র autonomous body) সমবায়ে৷ তাতে  কেউ কারুর বার্থহানি করতে সুযোগ পাবে না৷ এই ‘স্বয়ং শাসিত’ অঞ্চলগুলির হাতে স্থানীয় প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা পুরোপুরি থাকবে৷ তবে আজকের প্রতিটি ‘নেশন’ই যে সেই স্বয়ংশাসিত অঞ্চলরূপে চিহ্ণিত হবে--- তার কোন মানে নেই৷ এইসব  ‘স্বশং শাসিত অঞ্চল’ গড়ে তোলার পেছনে ভৌগোলিক-অর্থনৈতিক- সাংসৃকতিক-নদী-সেচ প্রভৃতি দিকগুলির কথা যথাযথরূপে  বিবেচনা করতে হবে৷ আবার, যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্ধির  সঙ্গে সঙ্গে--- অর্থনৈতিক শোষণমুক্তির-পরে --- আর্থিক বিকাশের  সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন  স্বয়ংশাসিত  এলাকার মধ্যে সাংসৃকতিক আদান-প্রদানের অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে একাধিক ‘স্বয়ংশাসিত এলাকাকে’ যুক্ত করে একটি বৃহত্তর এলাকা গড়ে তুলতে হবে৷

বিশ্বরাষ্ট্রের হাতে থাকবে অত্যন্ত শক্তিশালী সামরিক বাহিনী--- যা একক স্বয়ংশাসিত  অঞ্চলগুলির  হাতে পৃথক পৃথক রাখা উচিত হবে না৷

এই বিশ্বরাষ্ট্রের হাতে প্রথম অবস্থায় কেবল আইন প্রণয়নের ক্ষমতাই থাকবে৷ --- এইসব আইন সমস্ত স্বয়ংশাসিত এলাকাগুলি আপন আপন এলাকায় রূপায়িত করবে৷ একই আইন সবাই মেনে চলবে৷ তখন  আর কোথাও অত্যাচারের ষ্টীম রোলার চালাবার (যেমন, আজকে হচ্ছে দঃ আফ্রিকায় বা পাকিস্তানে ) সুযোগ থাকবে না৷

এই বিশ্বরাষ্ট্রীয় কাঠামোর থাকবে দুটি কক্ষ৷

১৷ নিম্নতন কক্ষ ৷

২৷ ঊধর্বতন কক্ষ৷

নিম্নতন কক্ষ গড়া হবে  জনসংখ্যার  ভিত্তিতে পৃথিবীর সকল স্থান থেকে নির্বাচিত  প্রতিনিধিদের  নিয়ে আর উধর্বতন কক্ষ  গড়া হবে, প্রতিটি স্বয়ংশাসিত autonomous body)  এলাকা  থেকে  এক  এক জন করে প্রতিনিধি নিয়ে৷  দুটো কক্ষের সুবিধা হলো, কম জনসংখ্যার জন্যে  যে জনগোষ্ঠী নিম্নতন কক্ষে তাদের একেবারে নিজস্ব প্রতিনিধি সরাসরি পাঠাতে পারবে না, উধর্বতন কক্ষে তারা তা সরাসরি পাঠাতে পারবে ও সেই প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাদের বক্তব্য বিশ্বের দরবারে পৌছিয়ে দিতে পারবে ও প্রতিটি বিষয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারবে৷

নিম্নতন কক্ষে আগে কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে, তারপর,  উধর্বতন কক্ষে সেটাকে অনুমোদনের জন্যে পাঠানো হবে৷  সিদ্ধান্তটি নাকোচ করার অধিকারও উধর্বতন কক্ষের থাকবে৷

শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার ‘আজকের সমস্যা’ বইতে বলেছেন, গোঁড়ার দিকে এই বিশ্বরাষ্ট্র কেবলমাত্র আইন প্রণয়ণকারী সংস্থা হিসেবেই কাজে করে যেতে পারে৷  কোনও আইনের কোন বিশেষ অঞ্চলে সাময়িকভাবে প্রয়োগ বা অপপ্রয়োগ সম্বন্ধে সিদ্ধান্তে পৌঁছুবার অধিকার এই বিশ্বরাষ্ট্ররই থাকবে৷ বিশ্বরাষ্ট্র প্রতিষ্টিত হবার প্রথম পর্র্যয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রগুলির হাতে থাকবে কেবলমাত্র শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতা৷  আইন প্রণয়নের ক্ষমতা হাতে না থাকায়--- খেয়াল খুশী মত, ভাষাগত, রেলিজনগত বা রাজনীতিতে সংখ্যালঘুদের ওপর জুলুম চালানো তাদের পক্ষে  একটু অসুবিধাজনক হয়ে দাঁড়াবে’’৷

যান্ত্রিক প্রগতি, সাংস্কৃতিক ভাব বিনিময়, অপরপক্ষে মানবজাতি শতধাবিভক্ত থাকলে যুদ্ধ সহ নানান্ অতি জটিল সমস্যার উদ্ভূতির সম্ভাবনা--- এসবের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ বিশ্বরাষ্ট্রের প্রয়োজন মর্মে মর্মে অনুভব করবে৷ এ অবস্থায় সাধারণ Common) ভাষানীতি কি হবে--- তাও ঠিকভাবে বুঝে নেওয়া দরকার৷  আদর্শ ভাষানীতি হবে---

১৷ মাতৃভাষার বিকাশ সাধন৷

২৷ বিশ্বভাষার ওপর গুরুত্ব আরোপ৷

কোনো জনগোষ্ঠীরই মাতৃ-ভাষাকে আমরা অবহেলা করতে পারি না--- করা উচিতও হবে না৷ তা করলে প্রধানতঃ দুটো বিপদ দেখা দেবে---

১৷ বিপরীত প্রতিক্রিয়া--- তথা বিদ্রোহী মনোভাব সৃষ্টি

২৷ জনসাধারণের সাংসৃকতিক বিকাশে বাধাপ্রাপ্তি৷

তাই আঞ্চলিক ভাষাকে অবদমন করে--- অন্য ভাষাকে  কারুর ওপর চাপিয়ে দেওয়া মোটেই যুক্তিযুক্ত হবে না৷ জনসাধারণের মানসিক-বিকাশ তথা জনশিক্ষার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম৷

মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা তথা জনগোষ্ঠীর আপন ভাষা-সংসৃকতির বিকাশকে রুদ্ধ করে দেওয়াকে  বলা যায় মানসিক-শোষণ৷ মানব সংহতির নামে বা কোন বহু ভাষাভাষী দেশে জাতীয় সংহতির নামে  এ ধরণের  মানসিক শোষণকে চাপিয়ে  দিলে তার বীভৎস প্রতিক্রিয়া হতে বাধ্য , আর তাতে সংহতির ওপর বিরাট চোট  পড়ার ষোল আনা সম্ভাবনা থেকে যায়৷

প্রসঙ্গত বলা যায়, বর্তমানে ভারতবর্ষে জাতীয় সংহতির নামে যে হিন্দিকে অন্য ভাষাভাষীর ওপর জোর করে চাপিয়ে দেবার প্রয়াস চলছে--- এতে জাতীয় সংহতি বৃদ্ধি না পেয়ে  জাতীয় সংহতি বিপন্ন হয়ে উঠবে৷ চোখের সামনে এই জিনিসটা হচ্ছেও৷ তবু নেতাদের চৈতন্যোদয় হচ্ছে না--- এটা বড় দুঃখের বিষয়৷  উত্তরভারতের অনেকগুলি আঞ্চলিকভাষা--- যা সমস্ত ভাষা বিজ্ঞানীদের দ্বারা স্বীকৃত --- অথচ ওইসব ভাষাকে (ভোজপুরী,মৈথিলী, ? ছত্রিশগড়ী, নাগপুরিয়া, অঙ্গিকা প্রভৃতি) সম্পূর্ণভাবে অবদমিত  করে তাদের ওপর হিন্দিকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, এর ফল মোটেই ভাল নয়৷

আঞ্চলিক ভাষার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ভাব-বিনিময়ের সুবিধার জন্যে মানুষকে একটা সাধারণ ভাষা নির্র্বচন করে নিতে  হবে৷ খোলা মন নিয়ে যে ভাষাটি বিশ্বের সর্বত্র  প্রচার রয়েছে--- সেই ভাষাকে বিশ্বভাষারূপে প্রচার করতে হবে৷ এ ব্যাপারে কোনও সেন্টিমেন্টকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত হবে না৷ এই বিশ্বভাষার পঠনপাঠনে  কোথাও শৈথিল্য থাকা উচিত নয়৷ বর্তমানে  ইংরেজীকে  বিশ্বভাষা হিসেবে গ্রহণ করাই যুক্তিসম্মত৷ একটা ভাষা সাধারণত এক হাজার বছর বাঁচে, তারপর তা কালগর্ভে হারিয়ে যায়৷ বিশ্বের ইতিহাসে এটাই দেখা গেছে৷ তাই ইংরেজী যে চিরকাল বিশ্বভাষা থাকবে, এটা মনে করাও যুক্তিযুক্ত নয়৷

বিশ্বভাষার প্রয়োজনের  তুলনায় বিশ্বলিপির প্রয়োজন ততটা নয়৷ তবে অবিকশিত ভাষাগুলির বিকাশের ক্ষেত্রে একটা বিজ্ঞানসম্মত লিপির ব্যবহার করা যায়৷ বর্তমানে রোমাান লিপিকে ব্যবহার করা যায়৷ বর্তমানে  রোমান লিপিকে সবচেয়ে বিজ্ঞানসম্মত লিপি বলা যেতে পারে৷  বিভিন্ন অনুন্নত উপজাতির অনুন্নত ভাষার ক্ষেত্রে এই লিপি ব্যবহার করলে ক্ষতি নেই৷ বিশ্বপোষাকের কথাও কেউ কেউ বলেন৷ কিন্তু তাদের এই অভিমতের কোন যৌক্তিক ভিত্তি নেই৷ কারণ  জলবায়ূর  বিভিন্নতা অনুসারে পোষাক ও আহার্যের ভিন্নতার প্রয়োজন হয়৷ এই সমস্ত বৈচিত্র্য তথা আঞ্চলিক আচার-ব্যবহার তথা সাংসৃকতিক বৈচিত্র্যকে নিরুৎসাহ না করে উৎসাহই দেওয়া উচিত৷ বাগানে একধরণের  ফুলের চেয়ে নানান্ রঙবেরঙের ফুল থাকলে তাতে বাগানের সৌন্দর্যই বাড়ে৷ তাই ‘মানব-সংহতি’র বা বিশ্ব-ঐক্যের  দোহাই দিয়ে এই সব বৈচিত্র্যকে গুড়িয়ে দেওয়াটা মোটেই কল্যাণকর নয়৷

এবারে আসি সাধারণ দন্ডবিধি বা দন্ডসংহিতার প্রসঙ্গে৷  বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন  ধরণের অনেক সময়ই  পরস্পর বিরোধী আইন রয়েছে৷  কোনও দেশের শাসকের স্বেচ্ছাচারিতা আইনে পরিণত হবে--- তা চলতে দেওয়া উচিত নয়৷ দঃ আফ্রিকার মুক্তি সংগ্রামী ম্যান্ডেলা তথাকার স্বেচ্ছাচারী ােথা সরকারের আইনে দেশদ্রোহী ও জঘন্য অপরাধী৷ আফগানিস্তানে সোবিয়েত সৈন্য পাঠানোর বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখতে  গিয়ে স্বাধীনচেতা বিজ্ঞানী শাখারভ হয়ে গেলেন বিরাট অপরাধী৷ তাই তাঁর ওপর শাস্তির খড়্গ নেমে  এল৷ এসব আইন যে স্বৈরাচারের নামান্তর  তাতে সন্দেহ কী?  আর এই  ব্যবস্থা বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধের বিকাশের ক্ষেত্রে--- বিশ্বৈকতাবাদের প্রতিষ্ঠার পথে ভয়ানক বাধা৷

বিভিন্ন দেশে তথাকার সামাজিক চিন্তাধারা, ধর্মমত (রেলিজান) সম্পর্কীয় বিশ্বাস--- এসবের  ভিত্তিতে গড়ে ওঠে সে সব দেশের পাপ-পুণ্য সম্পর্কিত ধ্যাণধারণা৷ আর এই পাপ-পূণ্যের  ধ্যানধারণার ওপর ভিত্তি করে  রচিত  হয় সেই দেশের  আইন যেমন, ইসলামী শবিয়ত অনুসারে স্বামী পরিত্যক্তা৷ মহিলাদের স্বামীর কাছ থেকে খরপোষ  পাওয়ারও  অধিকার নেই৷  এটাকেই যদি কোনো দেশের আইন হিসেবে দাঁড় করানো যায়--- তাহলে তা মানবতা-বিরোধী হয়ে দাঁড়াবে--- নীতিবিরোধী হয়ে দাঁড়াবে৷ তাই বিশ্বৈকতাবাদের প্রতিষ্ঠা কল্পে সব দেশের আইনকে নীতি ও মানবতার ওপর দাঁড় করাতে হবে, তথাকার পাপ-পূণ্যের ধারণা যখন নীতি--মানবতার পথকে অস্বীকার করে  সেই পাপ-পুণ্যের ধারণা যে মানসিক বিকৃত-সঞ্জাত এতে কোনমাত্র সন্দেহ নেই৷

সর্বজন স্বীকৃত দন্ডসংহিতায় কেবলমাত্র সেটাই অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে যেখানে ব্যষ্টি Individual)  বা দলগত  স্বার্থের প্ররোচনায়  অন্য কোন ব্যষ্টি বা দল অবশিষ্ট সমাজকে শোষণ করতে চায়, বা তা’দিকে অস্তিত্ব রক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায়৷ এই ধরণের  অপরাধের জন্যেই সর্বত্র দণ্ড-বিধানের ব্যবস্থা থাকা উচিত৷ নীতি--মানবতার কষ্টিপাথরে বিচার না করে  আঞ্চলিক  ট্র্যাডিশন বা বিশ্বাসের ভিত্তিতে দন্ডদান ব্যবস্থা বিশ্বৈকতাবাদের পথে মস্ত বাধা৷ এই বাধার নুড়ি-পাথরকে পথ থেকে সরিয়ে ফেলতে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে৷ 

বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চতুর্থ মৌলিক উপাদান হল--- সবার জীবনের নূ্যনতম  চাহিদা   পূর্তির  ব্যবস্থা  করা৷

 একপরমব্রহ্মর সৃষ্ট এক দুনিয়া৷ বিশ্বের প্রতিটি জীব--- প্রতিটি মানুষ  তাঁর সন্তান ৷  তাই নীতিগত বিচারে  এ বিশ্বের সব সম্পদ  সকলেরই  পৈত্রিক-সম্পত্তি৷ তাই মানুষের  উচিত, দায়ভাগ  ব্যবস্থায় পিতৃশাসিত একান্নবর্ত্তী পরিবারের মত এই সম্পত্তি সবাই মিলেমিশে ভোগ করুক৷ না হলে কারুর ঘরে  প্রাচুর্যের স্রোত বয়ে যাবে আর কেউ অনাহারে তিলে তিলে শুকিয়ে মরবে--- এ ব্যবস্থাটাকে মোটেই মেনে নেওয়া যায় না৷ এই ব্যবস্থা বজায় থাকলে  কোনওকালে বিশ্বভ্রাতৃত্বের প্রতিষ্ঠা হবে না৷ শোষক ও শোষিতের মধ্যে মৈত্রীর ভাব থাকতে  পারে না৷  তাই সকল সমাজের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার  মূলনীতি হবে---

১৷ প্রথমে প্রতিটি  মানুষের নূ্যনতম চাহিদার পূূরণ

২৷ বিশেষ দক্ষতার  জন্যে বিশেষ দক্ষতার জন্যে বিশেষ সুবিধা প্রদান

৩৷ নূ্যনতম মানের  উন্নয়ন ও উচ্চতম আয়ের মধ্যে পার্থক্য কমিয়ে আনা৷

একে বলব যুক্তি সঙ্গত বন্টন ব্যবস্থা৷ ‘সমবন্টন’ একটি  অবাস্তব  ও ত্রুটিপূর্ণ ভাবনা৷ এই অবাস্তব  তত্ত্বের নাম দিয়ে  মানুষের মানসিকতা-রুচি-আচার-আচরণের ওপর অনাবশ্যক চাপ সৃষ্টি করা হয়--- যা একপ্রকার  মানসিক শোষনের নামান্তর৷ কোনপ্রকার শোষণই কাম্য নয়--- না অর্থনৈতিক শোষণ, ---না মানসিক শোষণ৷

এ বিশ্বে জাগতিক সম্পদ সীমিত৷ তাই  এই  জাগতিক সম্পদ সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে মানুষকে অবাধ সুযোগ দেওয়া মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়৷  অবাধ সঞ্চয়ের ফলে সৃষ্টি হয় কৃত্রিম অভাব তখন সাধারণ মানুষের নূ্যনতম চাহিদা মেটানোর পথ রুদ্ধ হয়ে যায়৷

বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে অর্থসম্পদের বহিঃস্রোত ঘটিয়ে পঁুজিপতিরা ঔপনিবেশিক বা ঔপনিবেশিক ধাঁচের শোষণ চালায়, তাও চলতে দেওয়া উচিত নয়৷ তাহলে ওই এলাকার অর্থনৈতিক বিকাশ রুদ্ধ হয়ে যাবে --- ক্রমবর্ধমান  বেকার সমস্যার  ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সমস্যার সমাধান হবে না৷  আর  কৃষি-শিল্প প্রভৃতি যে কোন অর্থনৈতিক উদ্যোগে  স্থানীয় মানুষকে আগে কর্মসংস্থানের  পূর্ণ  সুযোগ দিতে হবে৷ সকল মানুষের  অর্থৈৈনতিক চাহিদা  পূরণ করে  এক সুস্থ সমাজ গড়তে গেলে অর্থনৈতিক উদ্যোগগুলিতে তিনভাগে ভাগ করতে হবে৷

১৷ মূলশিল্প Key Industry)

২৷ বৃহৎ ও মাঝারি শিল্প

৩৷ অতি ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক উদ্যোগ

এদের প্রথমটি--- যা মূলতঃ অন্যান্য শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ করবে (যেমন-লৌহ-ইস্পাত শিল্প) স্থানীয়  সরকারের হাতে  থাকা উচিত৷ দ্বিতীয় প্রকারের সমূহ শিল্প সমবায়ের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া দরকার৷  যেখানে শ্রমিকই সমষ্টিগতভাবে হবে মালিক৷ তৃতীয় পর্র্যয়ে অতিক্ষুদ্র অর্থনৈতিক উদ্যোগ (যেমন-পান দোকান) ব্যষ্টির হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে৷

এ ব্যবস্থায় কারুর প্রকৃত ব্যষ্টি-স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হবে না, ব্যষ্টিগত প্রতিভার বিকাশেরও সুযোগ থাকবে--- যা সম্পূর্ণ সামূহিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যেখানে সবকিছুই রাষ্ট্রীয়করণ করা হয় সেখানে থাকে না৷

হ্যাঁ এখানে এও বলে রাখা দরকার যে, বর্তমানে সমবায় ব্যবস্থায় ব্যর্থতা দেখে যাঁরা সমবায়ের ওপর আস্থা হারাচ্ছেন, তাঁদের মনে রাখা উচিত, সমবায়কে সফল করার জন্যে যা একান্ত প্রয়োজনীয় সেগুলির  দিকে নজর না দিলে সমবায় সফল হতে পারে না৷ সমবায়কে যদি ব্যষ্টি মালিকানায় পরিচালিত ব্যবসায়িক উদ্যোগের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়, তাহলে সেখানে সমবায় মার খাবেই, তাই ব্যষ্টি মালিকানার সঙ্গে সংঘাতে  সমবায়কে যাতে না আসতে হয়--- তার জন্যে রাষ্ট্রকে বিশেষ ব্যবস্থা কঠোরভাবে বলবৎ করতে হবে৷ সমবায়ের হাতের কাছে কাঁচামাল পৌঁছিয়ে দেবার দায়িত্ব সরকারের, সমবায় ব্যবস্থায় উৎপাদিত দ্রব্যের বাজার সৃষ্টি করার জন্যেও সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে৷ এরপরে যা চাই  তা হল--- নীতিবাদীদের সরকার, কঠোর সরকারী তত্ত্বাবধানে, জনগণের নৈতিকমানের উন্নয়ন, জনগণের মধ্যে সমবায়ী মনস্তত্ত্ব সৃষ্টি করা৷ --- এসব করা কিছুটা কঠিন ও সময়-সাপেক্ষ বলে যারা এড়িয়ে যেতে চান--- তাঁদের বলব, এছাড়া যখন অন্য কোন পথ নেই, তাহলে  একটু কঠিন হলেও স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এই মহৎ কর্মযজ্ঞে হাত লাগাতেই হবে৷

পরিশেষে বলি, মানুষ সহজে যদি সত্যের পথে পা না বাড়ায় তাহলে পরিস্থিতির কাছে ঠোকর খেয়ে হলেও  মানুষকে সত্যের পথে আসতেই হবে৷

এই বিশ্বৈকতাবাদ তথা বিশ্বভ্রাতৃত্বের  প্রতিষ্ঠাকল্পে মহান্ দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বিশ্বজুড়ে সুবিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন৷ বিশ্বের সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে এই মহাযজ্ঞে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাই৷