ব্রিকস সম্মেলনে মোদিজী মানবতার পূজারী কিন্তু ভারতে ধণতন্ত্রের সেবক

লেখক
প্রভাত খাঁ

বিশ্বের ইতিবৃত্তের নিরীখেই বলতে বাধ্য হচ্ছি বিরাট জনবহুল দেশ ভারতযুক্তরাষ্ট্রের যেটুকু গুরুত্ব সেইটুকু হলো এই চির গরিব দেশটা আপেক্ষিক জগতে অন্য উন্নত দেশগুলো এই দেশটিকে ব্যবসায় ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়৷ তাই এই দেশের শাসকরা সারা পৃথিবীর অধিকাংশের কাছে কিছুটা গুরত্বপূর্ণ হয়ে গেছেন৷ এই দেশের বাজারটা পেতে এর গুরুত্বটা অনেক বছর আগেই পাওয়া গেছে৷ দুটি কি তিনটি শক্তিশালী দেশ যেমন আমেরিকা, চীন, ও রাশিয়ার নজর এই দেশের দিকে বেশী আছে, আর অতীতের সাম্রাজ্যবাদী দেশ সেই ইংরেজ জাতি বর্তমানে দুর্বল হলেও কূটনীতিতে এই দেশটি খুবই পটু তাই নজরটা আগা গোড়াই আছে এর উপর৷ সেই ইংরেজের দেওয়া স্বাধীন দেশ ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মূলতঃ এই শক্তিগুলিই আজও পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করছে৷ দেখা যাচ্ছে ভারতের মোদিজী ঘন ঘন রাশিয়ার শাসকদের সঙ্গে দেখা করছেন কেন? কারণ রাশিয়া নাকি আমেরিকার কম দামে খনিজ তেল ভারতকে দিচ্ছে বলেই৷ সেই খনিজ তেল নিয়ে দেশে ভারত সরকার অতি উচ্চ দামে জনগণকে বিক্রি করে মুনাফা বাড়াচ্ছে৷ এক সময়ে যে সব দেশগুলি রাশিয়ার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত ছিল সেইগুলি রাশিয়া থেকে বেরিয়ে যায়৷ তাতে রাশিয়া আর্থিক দিক থেকে বিশেষ করে খাদ্য এর দিক থেকে অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে৷ তাই প্রতিবেশী রাজ্যগুলিকে কব্জায় আনতে কৌশল করে সীমান্তে পুতিন আক্রমন চালায়৷ যেমন রাশিয়ার এককালে শস্য ভাণ্ডার ছিল ইউক্রেন৷ সেই ইউক্রেনকে আক্রমণ করে ও চরম ক্ষতি করে দেয় কিন্তু ইউক্রেনের জনগণও সেই দেশের রাষ্ট্র নেতা জেলেনিস্কি জীবনমরণ লড়াই করে চরম আঘাত করে ইউক্রেনের জনগণ রাশিয়াকে পর্যদস্তু করে ফেলে ইউরোপের বন্ধু রাষ্ট্রগুলির সাহায্যে অন্যদিকে রাশিয়ার জনগণের মনে পুতিন সম্বন্ধে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়৷

তাই অনেক ক্ষেত্রে ইউ.এনওএর রাশিয়ার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তকে ভারত অগ্রাহ্য করে নিরপেক্ষ থেকে যায়৷ তাতে রাশিয়া মোদিজীর প্রতি আকৃষ্ট হন৷ তাই প্রায় তিনি পুতিন এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ও নানান বিষয়ে কূটনৈতিক দিক এর বিষয় মত বিনিময় হয়৷ এটাই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এক ধরণের কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা৷ যেমন মোদিজীর সঙ্গে আমেরিকার অনেক বিষয়ে মুসলীম নীতি বিষয়ে বেশ মতো বিরোধ হয়৷ তাই মোদিজী আমেরিকার পিষ্ট দেশের সঙ্গে স্বাভাবিক কারণেই নিজের গুরুত্ব বাড়াতে এই কমিউনিষ্ট দেশের সঙ্গে মিলমিশ৷ মনে হয় রাশিয়ার বন্ধু হিসাবেই রাশিয়ার প্রতিবেশী ছোট রাজ্য এর সঙ্গে লড়াই ইউক্রেনের সেটা যাতে মেটে তিনি সেখানে গিয়ে ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের জন্য আলোচনায় বসতে বলেন৷ কিন্তু চরম ক্ষতি রাশিয়ার পুতিন সরকার ইউক্রেনের করে সেটা মর্মান্তিক ও বহু শিশু নরনারী প্রাণও হারাতে হয়৷ তাছাড়া কয়েকটি এলাকা ইউক্রেণের অধিকার করে নেয় নিছক কূটনৈতিক চালে!

সম্প্রতি মোদিজী রাশিয়ার আমন্ত্রণে পুনরায় রাশিয়ায় গমন করেন দু’দিনের জন্য সেখানে আন্তর্জাতিক ব্রিক্স সম্মেলন হচ্ছে বিখ্যাত শহর কাজানে৷ সেই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন রাশিয়া ও ভারত ছাড়া চীন, দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলি নোতুন সদস্য হয়েছেন মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরানে ও সংযুক্ত আরব এমিরেটাস্‌৷ মোদিজী এখানে ইউক্রেনে শান্তির দাবী করেন৷ তিনি আগেই ঘোষণা করেন ইউক্রেনকে ভারত সর্বপ্রকার সাহায্য করবেন৷ তিনি সম্মেলনে বলেন যে তিনি মানবতায় আস্থাশীল, শান্তি আন্তরিকতাভাবে কামনা করেন৷

বিশ্ব সম্মেলনে মোদিজী চিনের প্রধানমন্ত্রী জিনপিংয়ের সঙ্গেও আলোচনা করেন৷ মোদিজী বলেন সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় দ্বিচারিতার কোন স্থান নেই৷ এখানে কিন্তু একটা প্রশ্ণ উঠে আসে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করতে হলে শুধু সন্ত্রাসবাদীদের দমন করলেই হবে না, ধনিক শ্রেণী ও মধ্যবিত্তের আর্থিক বৈষম্য কমাতে হবে৷ কারণ আর্থিক অসচ্ছলতার কারণেই মধ্যবিত্তের ঘরের ছেলেরা বিপথে চলে যায়৷ ভারতেও আজ চরম আর্থিক বৈষম্য৷ এই আর্থিক বৈষম্য দূর করতে যে বিকেন্দ্রিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা রূপায়ণের প্রয়োজন মোদিজী কি সেই পথে হাঁটবেন৷ ব্রিকস সম্মেলনে মোদিজী মানবতার পূজারী হলেও ভারতবর্ষের শাসক মোদিজী কিন্তু ধনকুবেরদের সেবক৷