বুদ্ধিজীবীদের ভাবনায় প্রাউট

লেখক
একর্ষি

বর্তমানে সমগ্র বিশ্বই মন্দার শিকার৷ কম–বেশী সব দেশেই তার প্রভাব পড়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে সকল রোগের মকরধ্বজ রূপে প্রাউট বুদ্ধিজীবীদের আকর্ষণ করেছে৷ তাঁদের দৃষ্টিতে প্রাউটের অভিনবত্ব ও বিশেষত্ব নির্ণীত হয়েছে৷ অর্থনীতি সচেতন প্রতিটি মানুষই জানেন যে অর্থনীতি বিষয়টাই দাঁড়িয়ে আছে উৎপাদন–বণ্ঢন–ভো ব্যবস্থার ওপর৷ বুদ্ধিজীবীরা লক্ষ্য করেছেন প্রাউট অর্থনীতিতে গোটা ব্যবস্থাপনার নিয়ামক ও সঞ্চালক সমবায় পদ্ধতি৷ প্রাউটের সমবায় পদ্ধতি প্রথাগত সমবায় থেকে স্বতন্ত্র৷ তাঁরা বলেছেন, সমবায় প্রাউট অর্থনীতির একটি উল্লেখযোগ্য দিক৷ আরো লক্ষ্য করেছেন সমবায় অর্থনীতির মূল লক্ষ্য সর্বাধিক উপযোগ বা ভোগ ও সামূহিক কল্যাণ৷ অন্যদিকে প্রচলিত অর্থনীতির লক্ষ্য সর্বাধিক মুনাফা৷ এক সময় একজন অর্থনীতিবিদের কাছে প্রাউট সম্পর্কে তাঁর মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি একটি কথাই বলেছিলেন–প্রাউটে শোষণ বা সামাজিক–র্থনৈতিক অবিচারের সামান্যতম কোন স্থান নেই৷

অর্থনীতিবিদরা বলছেন–প্রাউটের অর্থনীতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হ’ল–অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা–যা দাঁড়িয়ে আছে ক য়েকটি সূত্রের ওপর৷ এগুলি হ’ল ঃ–

(১) মানুষের  নূ্যনতম প্রয়োজন (খ্যাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা)–র গ্যারাণ্ঢি দিতে হবে৷ নূ্যনতম প্রয়োজনের স্তর বা মান ক্রমশঃ ঊর্ধ্বমুখী হবে৷

(২) যুগের নূ্যনতম প্রয়োজন পূরণ করে অবশিষ্ট সম্পদ গুণী ব্যষ্টিদের মধ্যে গুণানুপাতে ভাগ করে দিতে হবে৷

(৩) সাধারণ মানুষের সর্বনিম্ন প্রয়োজনের তুলনায় কিঞ্চিৎ বেশী পাবে গুণীরা৷ কিন্তু সর্বনিম্ন মানটি ওপরে তোলার প্রয়াস যথাসাধ্য চালাতে হবে৷ এজন্যে উত্তরোত্তর মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে৷

(৪) বহিরাগতের দ্বারা নয়, স্থানীয় মানুষের দ্বারা স্থানীয় উপাদানে বা সম্পদে স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়ন৷ সঙ্গে সঙ্গে এসব আধ্যাত্মিক চেতনাদীপ্ত সামূহিক সমাজবোধ ও নীতিবাদী মানুষের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনায় থাকবে৷

বুদ্ধিজীবীরা প্রাউট অর্থনীতির দুটো দিকের ওপর আলোকপাত করেছেন৷

(১) প্রাউট অর্থনীতির একটা দিক হ’ল নিয়ন্ত্রক দর্শন৷

(২) দ্বিতীয়টা হ’ল অর্থনৈতিক পরিকল্পনা৷

প্রাউটের নিয়ন্ত্রক দর্শন ইউনিভার্সাল হিউমানিজমের ওপর প্রতিষ্ঠিত৷ এ প্রসঙ্গে তাঁরা মনুষ্যজীবনের দুটি দৃষ্টিকোণ লক্ষ্য করেছেন৷

(১) ডারউইনবাদ অর্থাৎ অবাধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিকাশ৷ প্রাউট এ বিষয়ে একমত নয়৷

(২) সিমবায়োটিক ভিউ৷ অর্থাৎ পারস্পরিক সহমর্মিতা, সাহায্য ও সহযোগিতার মাধ্যমে সবাইকে নিয়ে সমাজের সার্বিক কল্যাণ৷ প্রাউটের  মতে এটাই সমাজের বাঁচার পথ, সমাজের প্রকৃত উন্নয়নের পথ৷

প্রাউটের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তাঁরা লক্ষ্য করেছেন যে প্রাউট বলছে সুসামঞ্জস্য অর্থনীতির চ্ত্রপ্ত্ত্রুন্তুন্দ্বস্তু ন্দ্বন্তুপ্সুপ্সপ্পম্ভগ্ কথা৷ এটির মধ্যে আছে দুটি ইস্যু–(১) অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনা ও (২) অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ৷ বস্তুত অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সামগ্রিক বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্যে প্রাউট একটি অভিনব আবশ্যিক বিষয়কে যুক্ত করেছে৷ এর নাম ত্রপ্সন্তুন্প্স–ন্দ্বন্ত্ ন্ধব্জপ্সব্ভহ্মন্ন্দ্র অর্থাৎ সামাজিক–র্থনৈতিক একটা গোষ্ঠীবদ্ধতা৷ এর ভিত্তি হবে সাধারণ প্রাকৃতিক সম্পদ৷ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, সাধারণ সামাজিক–র্থনৈতিক সমস্যায় নৃতাত্ত্বিক পৃষ্ঠভূমি ও সাধারণ সাংসৃক্তিক ঐতিহ্য৷ এই ভাবে বিশ্বজুড়েই থাকবে ত্রপ্সন্তুন্প্স–ন্দ্বন্ত্ ন্ধব্জপ্সব্ভহ্মন্ন্দ্র. প্রতিটি জনগোষ্ঠীর অধীনেই থাকবে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল৷ আধ্যাত্মিকতা প্রেষিত বিশ্বৈকতাবাদের ছত্রতলে প্রত্যেক গ্রুপ বিকশিত হবে৷ তারপর আত্মমর্যাদার ভিত্তিতে, পারস্পরিক মর্যাদার ভিত্তিতে ও আদানপ্রদানের মাধ্যমে এগিয়ে চলবে৷ সমগ্র বিশ্ব জুড়ে এক জাতি এক প্রাণ এক রাষ্ট্র তৈরী হবে৷ এ্যাপ্রোচটা রিজিয়নাল, লক্ষ্যটা ইউনিভার্সাল৷ অধ্যাত্মমুখীনতা ত্রহ্মন্ব্জন্ব্ধব্ভ্ত্রপ্ ত্থব্জন্ন্দ্বুব্ধ্ত্রব্ধন্ প্রাউটের সঞ্চালক তথা ভিত্তিভূমি৷

প্রাউট কন্ভেন্সনাল (প্রচলিত) ইকোনমিক –এর ত্রন্তুপ্সহ্মন্দ্ব)পরিধিটাই  পালটে দিয়েছে৷ অর্থনীতির পটভূমিতে নোতুন ক্ষেত্র যোজনা করেছে৷ প্রচলিত ধ্যান–ধারণার মূলটাকে নাড়িয়ে দিয়েছে৷ এটা অর্থনীতিবিদ্দের খুবই আকৃষ্ট করেছে৷ বিষয়টা হ’ল মানস অর্থনীতি ড্রপ্সুন্তুন্দ্বহ্মব্ধ প্সন্দ্র হ্মব্দম্ভন্তুড়প্স–ন্দ্৷ এভাবে প্রাউটের ধারণার মধ্যে নোতুন মাত্রা যোগ হলেও  হ্মন্দ্বপ্সহ্মপ্তন্দ্ব ন্দ্বন্তুপ্সুপ্সপ্পম্ভ আছেই৷ গণ অর্থনীতি মানুষের নূ্যনতম প্রয়োজনের গ্যারাণ্ঢি দেবে, আর মানস অর্থনাতি ব্যাষ্টি ও সমষ্টির মানসিক আভোগরপুর্ত্তির জন্যে কাজ করবে৷ মানুষের দুর্দশা যেমন  জাগতিক বস্তু সম্ভারের অভাব জনিত, তেমনি মানসিক দুর্বলতা, অস্থিরতা, গ্রহণ–বোধ ক্ষমতার অভাবও মানুষের দুর্দশার কারণ৷ প্রউটের মানস অর্থনীতি মানুষের মানসিক গঠন মজবুত করে গ্রহণ ক্ষমতা বাড়াবে৷ ফলে শোষণ, অবিচার ও অবিবেচনা প্রসূত অর্থনৈতিক অপকর্মগুলো মোকাবিলা করবে৷ মানুষ বিভিন্ন ধরনের শোষণ–বঞ্চনার ধরণ–ধারণ বুঝতে পারবে৷ শোষকদের চিনতে পারবে৷ আবার এই মানস অর্থনীতির সাহায্যে মানুষ শোষণের বিরুদ্ধে বিরামহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাবে৷

পরিশেষে বুদ্ধিজীবীরা লক্ষ্য করেছেন–অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা তথা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে সর্বপ্রকার শোষণ মুক্ত এক আদর্শ মানব সমাজ গঠনই প্রাউটের লক্ষ্য৷

সূত্র ঃ ডঃ এ.টি.এস জহিরুল হক, ডঃ প্রণব কুমার চট্টোপাধ্যায়, ডঃ গোবিন্দ সরকার, ডঃ দিলীপ কুমার হালদার প্রমুখ বুদ্ধিজীবীদের প্রবন্ধাবলী৷