য ঃ (১) ‘যা’ ধাতু সাধারণতঃ তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়---যাওয়া বা চলা, নড়াচড়া করা, শান্তিপূর্ণভাবে সঙ্গে থাকা৷ ‘যা’ ধাতু+ ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘য’ শব্দ পাচ্ছি তার একটি অর্থ হচ্ছে ‘যে চলে’ goer)৷
(২) এই ‘যা’ ধাতু+ ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘য’ শব্দ পাই তার আর একটি অর্থ হচ্ছে ‘যে নড়াচড়া করে’৷ মনে করো, তুমি চলছ৷ সেক্ষেত্রে তোমাকে ‘য’ ৰলা চলৰে৷ আর তুমি চলছ না কিন্তু হাতে পেন্সিল নিয়ে কিছু লিখছ, তোমার হাত নড়াচড়া করছে, সেক্ষেত্রেও তোমাকে ‘য’ ৰলা চলৰে৷
(৩) ‘নীল’ শব্দের মানে তো তোমরা জানই৷ নীল একটি রঙের নাম৷ আর ‘নিল’ শব্দের মানে যা থেমে আছে fixed/stationary) ৷ হাওয়া থেমে থাকে না৷ এইজন্যে হাওয়াকে ৰলে ‘অনিল’ (‘হবা’ শব্দটি তুর্কী ভাষা থেকে ৰাংলায় এসেছে৷ ৰাংলার সাৰেকি শব্দ হচ্ছে বাতাস৷ চীনী ফেনিয়ে তার ভেতরে বাতাস ভরে দিয়ে যে মিষ্টি বস্তু তৈরী হয় তাকে ৰলা হয় ‘বাতাসা’)৷ ‘যা’ ধাতুর অর্থ ‘যাওয়া’৷ হাওয়া সব সময়েই যায়৷ ‘যা’ ধাতু+ ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘য’ শব্দ পাচ্ছি তার একটি অর্থ ‘বাতাস’৷
(৪) বাতাস বয়ে যায় বটে কিন্তু সৰ সময় সমান গতিতে বয় না৷ সে যখন ধীরে ধীরে বয় তাকে ৰলা হয় বাতাস বা বাত আর যখন জোরে জোরে বয় তখন বলা হয় বাত্যা বা ঝড় বা ঝটিকা (‘ঝট্’ মানে তাড়াতাড়ি৷ সংস্কৃতে ‘শীঘ্র’-এর পর্যায়বাচক শব্দ হচ্ছে ‘ঝটিতি’)৷ এতদর্থে ‘য’ শব্দের আর একটি অর্থ হচ্ছে ‘ঝটিতি’৷ এতদর্থে ‘য’ শব্দের আর একটি অর্থ হচ্ছে ‘ঝড়’৷
(৫) ‘যম’ ধাতু+ ‘অচ্’ করে যে ‘যম’ শব্দ পাচ্ছি তার অনেকগুলি অর্থ হয়৷ একটি অর্থ হচ্ছে আধ্যাত্মিক তথা নৈতিক জীবনে অবশ্য পালনীয় পাঁচটি প্রাথমিক বিধি৷ এই পাঁচটি বিধি হচ্ছে অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য ও অপরিগ্রহ৷ এদের ৰলা হয় ‘পঞ্চ যম্’৷ ‘যম্’ ধাতু+ ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘য’ শব্দটি পাচ্ছি তার তাই একটি অর্থ হচ্ছে ‘পঞ্চ যম’৷
(৬) ‘যম’ ধাতুর অর্থ হ’ল নিয়ন্ত্রণ করা৷ তাই ‘য’ শব্দের একটি অর্থ হ’ল---
স্থূল জাগতিক গতিবিধিকে নিয়ন্ত্রণ করা৷ এতদর্থে ‘য’ শব্দের অর্থ হ’ল ‘যে স্থূল জাগতিক গতিবিধিকে নিয়ণ করে’৷
(৭) ‘যম্’ মানে মনকে নিয়ন্ত্রিত করা আর সেই নিয়ন্ত্রিত মনকে পরমাত্মার দিকে প্রধাবিত করা৷ তাই যা ঈশ্বরের দিকে মনকে নিয়ে যায় তার জন্যেও ‘য’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়৷
(৮) এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে সৰ কিছুকেই নিয়ম মাফিক চলতে হয়৷ সকল জিনিসের জন্যেই কাল নির্ধারিত হয়ে আছে৷ একজন মানুষ যতদিন বাঁচে একটা ফড়িং ততদিন ৰাঁচে না একটা কচ্ছপ যতদিন ৰাঁচে একজন মানুষ ততদিন বাঁচে না৷ একটা ৰটগাছ যতদিন ৰাঁচে একটা লাউ গাছ ততদিন বাঁচে না৷ সবাইকার জন্যে এক বিধিৰদ্ধ কালব্যবস্থা নির্ধারিত হয়ে আছে৷ এই বিধিবদ্ধ কালব্যবস্থা পরমপুরুষের যে অভিব্যক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে তাকে ‘যম্’ ৰলা হয়৷ সাধারণ ভাষায় তাই মৃত্যুদেবতা অর্থেও এই ‘যম্’ শব্দের ব্যবহার হয়ে থাকে৷ এই ‘মৃত্যুদেবতা’ মানে নিয়ে ‘যম্’ ধাতু+ ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘য’ শব্দ পাচ্ছি তাতেও ‘যমরাজ’কে pluto) ৰোঝায়৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)