ভারতে বাঙালী---বিদেশী তকমা মুক্তির পথ বাঙালীস্তান

লেখক
সাধন পুরকায়স্থ

অসমে বাঙালীকে বিদেশী বানিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে ভরে নরক যন্ত্রণা দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়াটা আজ দৈনন্দিনকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কয়েক দিন আগে চন্দ্রধর দাস নামে একজন ১০৪ বছরের বাঙালী বৃদ্ধ নাগরিকত্বের জন্য লড়াই করতে করতে মৃত্যুর মুখে পড়লেন৷ দু’বছর আগে তাঁকে বিদেশি বলে ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে মুক্তি দেওয়া হয়৷ কিন্তু নাগরিক হীনতার জ্বালা থেকে তিনি মুক্তি পান নি৷ শতার্ধ বৃদ্ধকেও মামলা লড়ে যেতে হয়েছে নাগরিকত্ব পাওয়ার আশায়৷ ডিটেনশন ক্যাম্পের বন্দিদশা থেকে সে জ্বালা কিছু কম নয়৷ শ্রীদাসের জীবদ্দশায় ইচ্ছে ছিল ভারতীয় হয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়াবে৷ তার দীর্ঘস্বাসের পরিণতি কী তাহা তিনি বাঙালী হয়ে প্রমাণ করলো৷ ভারত ভূমিকে স্বাধীন করার জন্য বাঙালীর আত্মত্যাগের কি নির্মম ও নিষ্ঠুর পরিনাম৷ ডিটেনশন ক্যাম্পের ভয়াবহতা থেকে বৃদ্ধ কেন এমনকী শিশুরাও রেহাই পায়নি৷ কারণ অসমের বাঙালী বিদ্বেষী আইন তৈরী যারা করেছে তারা সকলেই  মানবতার শত্রু৷ অসমে এখন চলছে  হিন্দু নামধারী আর.এস.এস ওরফে বিজেপি ও অগপ সরকার৷ এই আর.এস.এস বা বিজেপিরা সকল সময়  বলে থাকেন--- তাঁরা হিন্দুদের বাঁচাবার ধারক, বাহক, একমাত্র দণ্ডমুণ্ডের হর্তাকর্র্ত বিধাতা৷ তাহা হলে ডিটেনশন ক্যাম্প কার স্বার্থে তৈরী করা হয়েছে৷ বিধানসভা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ স্থানীয় সকল নেতারাই বাঙালীর ভোট পাওয়ার জন্য বলেছিলেন কংগ্রেসের পাপ ডিটেনশন ক্যাম্প ভেঙ্গে দেবেন ও সকল হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেবেন৷ আর বাঙালীর ভোটে জেতার পর আজ আমরা দেখছি বাঙালী হিন্দু  পরিবার গুলোর কি ভয়াবহ পরিণতি৷ হাজার হাজার দৃষ্টান্তের একটি উল্লেখ করছি৷ অসমের সরকার নামে বেনামে বলছে অসমে নাকি প্রায় ৫০ লাখ বিদেশী তকমাধারী বাঙালী বসবাস করছে! চিরাং-এর বাসিন্দা গোপেন দাসের স্ত্রী অবলা দাস তিন সন্তানের মা হওয়ার পরেও তাকে বিদেশী তকমা দিয়ে কোকরাঝাড় ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়৷ দিন মজুরী করা গোপেন দাস সাধ্য মতো কাগজ পত্র জমা দিলেও তার স্ত্রীকে ক্যাম্পের বাইরে আনতে না পারায় মানসিকভাবে অবসাদ ও নানা বিপর্যয়ের ফলে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে৷ তার তিনটি সন্তানকে অনাথ করে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়৷ এখন প্রশ্ণ হলো এই তিনটি সন্তানকে পিতৃহীন ও মায়ের স্নেহমমতা থেকে বঞ্চিত করার অধিকার কে দিলো? আগামীতে সেই সন্তানদের নিরাপত্তা ও ভরণপোষণ কে দেবে? এর কোন আইন ভারতের নেতৃত্বে ও আইন পরিষদের কাছে আছে কী? এই অমানবিক পরিস্থিতির জন্যে কী সাধারণ বাঙালী দায়ী না ভারতে আইন পরিষদ, জবাব কে দেবেন? ভাগ্যের কী পরিহাস দেখুন মৃত স্বামীর মরা মুখটাও দেখার অধিকারটুকু পেলনা সেই হতভাগার বিধবা স্ত্রী৷ হিন্দু মতে তাঁর বিধবা স্ত্রীকে শাখা ভাঙতে হয় ও সিন্দুর মুছে দিতে হয়৷ কিন্তু আইন এতটাই হিন্দু বিদ্বেষী ও নিষ্ঠুর বিধবা মহিলাকে এখনো বলা সম্ভব হয়নি তার স্বামী মৃত৷ সৎকারের কয়েক দিন পরেও খবরটি শুনিয়ে দেওয়ার নৈতিক মূল্যবোধটুকু হিন্দু নাগরিকদের ধারক বাহক বিজেপি সরকার মনেই করেননি৷ মৃত গোপেন দাসের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে পারলৌকিক কাজ করার জন্যে মানবাধিকারের আধিকারিক জামসের আলি একজন মুসলিম হয়েও অন্য এক সহকর্মী নন্দ ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে কোর্টের মাধ্যমে প্যারোলে কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে আসার অনেক কষ্টে অনুমতি পেয়েছেন৷ কি বিচিত্র এই ভারতের আইন ব্যবস্থা৷ একদিকে কেন্দ্রীয় সরকার বলছেন সারা ভারতে এক দেশ এক আইন তৈরী হবে ও থাকবে৷ অথচ বাঙালী জাতিকে ভারত থেকে উচ্ছেদ করতে ভিন্ন প্রকারের আইন তৈরী করা হয়েছে, কিন্তু কেন? অসম রাজ্যে বাঙালীর ভোটে বিজেপি সরকার তৈরী করার কী পরিণাম অবলা দাস তাহা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন বাঙালী হয়ে৷ স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী তার শেষ শ্রদ্ধাটুকু দিতে পারে না, এটা কেমন দেশ! হায়রে বাঙালী, কবে বুঝবে এই নরকের জ্বালা৷

এখন সময় এসেছে সংবিধানের তিন নং ধারায় বাঙালীর বাঙালীস্তান ছাড়া বাঁচবার কোন পথ নেই৷ বাঙালীকে জাগতে হবে, জাগাতে হবে তাঁর বিপ্লবের চেতনার অনল শিখাকে৷ বাঙালীকে কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি, তৃণমূল দলমতের উধের্ব উঠে আগামী প্রজন্মকে বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে নামতে হবে৷ সেই লড়াইয়ের একমাত্র ফসল ‘‘বাঙালীস্তান’’৷

সত্যিই সেলুকাস কী বিচিত্র এই ভারতের অসম রাজ্য ও ভারতের  আইন পরিষদ!