ভারতীয় সমাজের নারীর অবদান

লেখক
অদিতি দত্ত বাগ

বৈদিক যুগে নারীরা বহুক্ষেত্রেই পুরুষের সমমর্যাদা পেতেন, তাঁর প্রমান পাওয়া যায় বৈদিক সুক্তগুলি থেকে৷ ঋকবেদে ২২ জন ঋষিকার  নাম পাওয়া যায় যাঁরা বৈদিকমন্ত্র বা সুক্ত রচনা করেছেন৷ তাঁরা হলেন যথাক্রমে---

(১) অদিতি দক্ষয়িনী ঃ অদিতি ছিলেন প্রজাপতি দক্ষের কন্যা, তিনি কাশ্যপমুনিকে বিবাহ করেন কথিত আছে কাশ্যপ মুনির দুই স্ত্রী দিতি ও অদিতি, দিতির গর্ভ থেকে রাক্ষস কূলের উৎপত্তি ও অদিতির গর্ভ থেকে দেবকূলের উৎপত্তি, তিনি বহু মন্ত্র রচনা করেছিলেন তার মধ্যে (৪.১৮.৪, ৪.১৮.৭ এবং ১০.৭২ মন্ত্র অন্যতম)

৪.১৮.৪ এবং ৭ এর মন্ত্রগুলিতে দেখতে পাই ইন্দ্রের জন্ম বৃত্তান্ত এবং ১০.৭২ মন্ত্রে দেখতে পাই সমস্ত দেবকূলের জন্ম বৃত্তান্ত৷

২.দক্ষিণা প্রজাপত্যা---ইনিও প্রজাপতি দক্ষের কন্যা, ঋকবেদের ১০.১০৭ নং সুক্তটি ইনি রচনা করেছেন দক্ষিণা দান দ্বারাই  স্বর্গলাভ হয় সেই কথাই এই  সূক্তে বলা আছে৷

৩. অপালা আত্রেয়ী ঃ- অপালা ছিলেন অতি ঋষির কন্যা, ইনি ৪.৯১ শ্লোক রচনা করেন৷ এই শ্লোকে ব্যাখ্যায় বোঝা যায়  ত্বকের রোগ  হয়েছিল ফলে পতিগৃহ থেকে বিতাড়িত হন এবং অতি ঋষির ক্ষেত অনুর্বর ছিল৷ ইন্দ্রের আরাধনা করার ফলে তিনি ত্বকের রোগ থেকে মুক্তিপান ও তাঁর পিতার জমি উবর্বর হয়৷

৪. গোধা ঃ গোধা ছিলেন ১০.১৩৪.৬ ও ৭ সুক্তের রচয়িতা৷ ইনি ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবতাদের আরাধনা করেছিলেন,

৫.ঘোষা ঃ ঘোষা ঋষিকা ছিলেন কক্ষীবান ঋষির কন্যা, ইনি কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, এজন্য বহুদিন এনার বিবাহ হয়নি৷

ইনি স্বর্গের চিকিৎসক অশ্বিনীদ্বয়ের আরাধনা করেন এবং সুস্থ হন পরে বিবাহ হয় ও সুখী জীবনযাপন করেন! ঋকবেদের  ১০.৩৯ সুক্তটি ইনি রচনা করেন৷

৬) শচী বা ইন্দ্রানী---ইনি ছিলেন ইন্দ্রের পত্নী ইনি ১০.১৫৯, ১০.১৪৫ ও ১০.৮৬ নং সুক্তগুলি রচনা করেন৷ ১০.১৫৯ সুক্তে স্বামীকে বশীভূত করে রাখার  কথা ব্যক্ত করেছেন ১০.১৪৫ সুক্তে শচী স্বপত্নী পীড়ন দেবতার আরাধনা করছেন এবং স্বপত্নীকে পরাভূত করার কথা  বলছেন৷ পত্নী ১০.৮৬ নং শ্লোকে বলছেন তিনি ইন্দ্রের পত্নী তাঁর মত রূপবতী কেউ হয়না এবং তাঁর স্বামীর মত বলশালী বিত্তবান কেউ নেই, তাঁদের সুখী  দাম্পত্য জীবনের কথা ব্যক্ত করেছেন৷

যুহু---ইনি বৃহস্পতির স্ত্রী৷ তিনি ১০.১০৯ সুক্ত রচনা করেছেন, তাঁর সতীত্ব সম্বন্ধে সন্দেহভঞ্জনই এই সূক্তোটির উদ্দেশ্য৷

সর্পরাজ্ঞী ঃ--- ইনি ১০.১৮৯ সুক্তটি রচনা করেন ও  সূর্যের বন্দনা করেছেন, তাঁর সূত্র ত্রিরশৎ ধাম অর্থাৎ একদিন মানে তিরিশ মুহূর্ত এই হিসাব পাওয়া যায়৷

রোমশা ঃ- ইনি ১.১২৬ নং সুক্তো রচনা করেছেন তাঁর সারা শরীরে লোমে ঢাকা ছিল এবং তিনি সুখী দাম্পত্য জীবনের কামনা করেছেন৷

যমী --- বিবস্ব্যৎ কন্যা যমী ১০.১৫৮ নং সুক্তো রচনা করেছেন, এই সুক্তে তিনি মৃত আত্মার সদ্‌গতি প্রার্থনা করেছেন৷

বাক ঋষিকা---১০.১২৫ শ্লোকটি ইনি রচনা করেন৷ শ্লোকটির মূল বক্তব্য হল তিনিই সকল সৃষ্টির কর্তা ও নিয়ন্ত্রা, ‘‘বাগ্‌ দেবীকে এ সুক্তের বক্তা অর্থাৎ ঋষি বলে নির্দেশ করা হয়েছে, কিন্তু  বাক্‌ সে যে এ সুক্তের বক্তা  সুক্তের ভিতর তার কোনও নির্দশন নেই, বক্তা  আপনাকে সর্বনিয়ন্তা ও সর্বনির্মাতা বলে পরিচয় দিচ্ছেন, ফলে একমাত্র ঈশ্বরের সঙ্গে তুলনীয় অর্থাৎ তিনি ঈশ্বর,

---ঋকবেদে সংহিতা, দ্বিতীয় অধ্যায় রমেশচন্দ্র দত্ত৷

১২) শ্রদ্ধা ঋষিকা---ইনি ১০.১৫১ সুক্তের রচয়িতা শ্রদ্ধার  দ্বারা সব কাজ করলে সাফল্যলাভ হয় এটাই এই সুক্তের মূল বক্তব্য

সরমাঃ--- সরমা ঋষিকার কথা আমরা ১০.১০. ৪নং  সুক্তে দেখতে পাই৷ এখানে স্বর্গের পণিগণ ও সরমার কথোপকথন বর্ণিত হয়েছে, ঊষা কর্তৃক প্রাতঃকালে আলোক উদ্ধারই উপমাচ্ছলে সরমা কর্তৃক গাভী উদ্ধাররূপে বর্ণিত হয়েছে৷

এই আখ্যানটি আবার গ্রিকদের মধ্যে ট্রয়ের যুদ্ধের গল্পরূপে বর্ণিত হয়েছে---

লোপামুদ্রা বা কৌশি তক---ছিলেন বিদর্ভের রাজকন্যা ভারপ্রদা নামেও তিনি  পরিচিত ছিলেন৷ মুনি অগস্ত্যের পত্নী ছিলেন লোপামুদ্রা৷ এই মুনি পত্নী ব্রহ্মবাদিনী ছিলেন, পরবর্ত্তীকালে হিন্দু শাস্ত্রের ‘ হরি পঞ্চছলী চিন্তা’ লোপামুদ্রার ভাবনা থেকেই এসেছে৷ ইনি ঋক্‌বেদের ১.১৭১ শ্লোকটি রচনা করেছেন যাতে তিনি অগস্ত্য মুনিকে সুখী দাম্পত্য জীবন যাপন করতে অনুরোধ জানাচ্ছেন পরবর্তীকালে যখন অগস্ত্য মুনি আর্য ও মেলবন্ধনের জন্য দাক্ষিনাত্যে ধর্মপ্রচার করতে গেলেন তখন ত্যাগব্রতী কৌষিত কী উত্তর ভারতে থেকে ধর্মপ্রচারের গুরু দায়িত্ব বহন করে চলেছিলেন৷ (ক্রমশঃ)