ভেজাল ও আমরা

লেখক
জ্যোতিবিকাশ সিন্হা

বর্তমান পৃথিবীতে ভেজালহীন কোন জিনিস পাওয়া সত্যিই খুব কঠিন৷ বেঁচে থাকার যে কোন মৌলিক উপাদান যার ওপর আমরা ভরসা রাখতে চাই, সেখানেই ভেজাল ও দূষণের বিপদ ওঁৎ পেতে থাকে৷ যত পরিচিত ও বিশ্বস্ত দোকান-বাজার থেকে প্রয়োজনীয় বস্তু সংগ্রহ করা হোক না কেন---নির্ভেজাল সামগ্রী পাওয়া প্রায় দুঃসাধ্য ব্যাপার৷ দৈনন্দিন প্রয়োজনের খাদ্যবস্তু, চাল, ডাল, তেল, ঘি কোনটিই ভেজাল মুক্ত নয়৷ বাজারে তাজা শাকসবজি, ফলমূল দর্শনে লোভনীয় হলেও বিভিন্ন রাসায়নিক প্রয়োগে বিষাক্ত ও শরীর-স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, কখনও কখনও এই বিষের পরিমাণ এতটাই বেশী হয় যে প্রাণঘাতী দূরারোগ্য ব্যধির আহ্বায়ক৷ জলের অপর নাম জীবন৷ সেই জীবনদায়ী জলেও ভেজাল ও দূষণের বিপদ৷ প্রথমতঃ নলকূপের মাধ্যমে বা কুয়ো থেকে তোলা জলে বিভিন্ন রকমের খনিজ ও আর্সেনিক জাতীয় বিষাক্ত উপাদান মিশ্রিত থাকার ফলে তা হয় পানের অযোগ্য নয় অত্যন্ত ক্ষতিকর৷ দ্বিতীয়তঃ যে সব অঞ্চলে পরিশ্রুত জল সরবরাহ করা হয়, সেই জলও একাধিক কারণে দূষিত হয়ে ডায়েরিয়া, আমাশয়, জণ্ডিস ইত্যাদি রোগের কারণ হয়ে ওঠে৷ এছাড়া বিশুদ্ধ জলের নামে যে বোতলবন্দী জল বিক্রয় হয় তা অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে যথাযথ মানের পর্যায়ভুক্ত না হওয়ার ফলে সাধারণ মানুষের অর্থ ও স্বাস্থ্যহানির কারণ হয়ে ওঠে৷ নদী-নালা-খাল-বিল ইত্যাদির জলে নাগরিক জীবনের বর্জ্য ও নদীতীরের শিল্পাঞ্চলের রাসায়নিক বর্জ্য মিশ্রিত জল মিশে গিয়ে মারাত্মক দূষণ যোগ করে৷ ওই দূষিত জলের প্রভাবে জলজ প্রাণী ও মাছ রোগগ্রস্ত হয় আর ওই মাছ খাওয়ার ফলে মানুষের শরীরেও সেই রোগ সংবাহিত হয়ে পড়ে৷ যে মাছ পুষ্টিকর খাদ্যরূপে গৃহীত হয় তাহ-ই মানুষের দেহে দুরারোগ্য রোগ ছড়ায়৷ বিভিন্ন বৈদ্যুতিন মাধ্যমে চটকদারি বিজ্ঞাপনের আকর্ষণে যে সব খাদ্য ও নরম পানীয় আট থেকে আশি বছরের মানুষেরা গ্রহণ করে, তাদের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে মানব শরীরের সহনশীলতার চেয়ে অনেক বেশী পরিমাণে ক্ষতিকর দ্রব্য থাকায় বহুবিধ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় আর এর শিকার হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা৷ অনেক সময় এই ক্ষতি তাদের সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়৷

বাস্তুবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে কাদামাটির দেওয়াল আর খড়-টালি-খাপড়ার আচ্ছাদনের স্তর পেরিয়ে বর্তমানে ইঁট-কাঠ-পাথর-ইস্পাত-সিমেণ্ট নির্মিত সুরক্ষিত দেওয়াল ও ছাদ যুক্ত বাসস্থানে মানুষ তার সুখী গৃহকোণের সন্ধান পেয়েছে৷ কিন্তু সেক্ষেত্রেও লাভের অঙ্ক বাড়াবার লক্ষ্যে ভেজালের অনুপ্রবেশ ঘটেছে৷ নির্মাণ ব্যবসায়ীরা বহুতল ও অন্যান্য বাসস্থান নির্মাণের সময় প্রয়োজনীয় উপকরণগুলির উপযুক্ত গুণমান ও প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার না করার কারণে সেইসব নির্মাণ কার্য তুলনায় কম মজবুত ও স্থায়ী হয় যার ফল ভুগতে হয় সাধারণ ফ্লাট বা বাড়ীর ক্রেতাদের৷ বহুক্ষেত্রে অসাধু প্রতারকদের পাল্লায় পড়ে বহুকষ্টে সংগৃহীত অর্থ হারিয়ে ক্রেতার সর্বস্বান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বা নিগ্রহের সম্মুখীন হতে হয়েছে, আবার প্রাণহানিও ঘটেছে৷

মানুষের অপর মৌলিক প্রয়োজন স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট বিভাগে বিভিন্ন অনৈতিক কাজকর্মের ফলে সাধারণ নাগরিককে সমস্যার মুখে পড়তে হয়৷ কখনও হাসপাতাল, নার্সিংহোমের কর্মীকুলের অমানবিক ব্যবহার ও কাজকর্মের ফলে রোগী ও রোগীর পরিবার পরিজন অসুবিধা ভোগ করেন, আবার কখনও ভুয়ো ডাক্তার ও সেবা কর্মীদের দ্বারা প্রতারিত হন৷ হাসপাতালগুলি পরিষেবার বিনিময়ে অত্যধিক অর্থ আদায় করা সত্ত্বেও যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করে না বা কোন কোন পরিষেবা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই অতিরিক্ত অর্থ দাবী করে৷ শুধু তাই নয়, সঙ্কটাপন্ন রোগী বা রোগীর মৃত্যুর ক্ষেত্রেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনরকম সমবেদনা সহানুভূতি ছাড়াই রোগীর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে অর্থ পিশাচের মত আচরণ করে৷ এরফলে মাঝেমাঝেই হাসপাতালগুলিতে বিক্ষোভ অশান্তি, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়৷ হাসপাতালগুলি হ’ল পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান৷ রোগীর সুচিকিৎসা ও সেবা প্রদানে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ৷ অবশ্য পরিষেবার বিনিময়ে যথোচিত অর্থ তারা অবশ্যই দাবী করবে---কিন্তু তা সর্বদাই সততা, নৈতিকতা ও মানবিকতার অনুসারী হওয়া প্রয়োজন৷ এছাড়াও রয়েছে ভেজাল ঔষধ, কার্যকরী সময় পার করা ঔষধ, নিম্নমানের ও দূষিত চিকিৎসা সহায়ক উপকরণ তথা যন্ত্রপাতি, রক্ত ও জীবনদায়ী ঔষধের কালোবাজারীর সমস্যা৷

শিক্ষা ও সংসৃকতির ক্ষেত্রেও চলছে প্রবল নৈরাজ্য ও অনৈতিক কাণ্ড কারখানা৷ বর্তমানে প্রকৃত দরদী শিক্ষক পাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার৷ সরকারী বিদ্যালয়ের বেশীরভাগই ছাত্র ধরার কারখানা ও বিশ্রামাগারে পরিণত৷ অধিকাংশ শিক্ষকই দিবারাত্র টিউশনের ভারে ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে বিদ্যালয়ে বসে ক্লান্তি অপনোদনের চেষ্টায় রত থাকেন৷ ছাত্র ও শিক্ষকমহলে তাদেরই রমরমা৷ অথচ সৎ নীতিবাদী শিক্ষকগণ প্রায়শঃই কোণঠাসা৷ বেসরকারী বিদ্যালয়গুলি সম্পূর্ণতঃ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পর্যবসিত৷ শিক্ষাঙ্গনে রাজনৈতিক দূষণের ফলে শিক্ষার মান ও নৈতিকতা বিশেষভাবে অবহেলিত৷ ছাত্র-ছাত্রা ও শিক্ষকগণের আচরণে আগেকার মধুর সম্পর্ক, শ্রদ্ধা-ভক্তি-সম্ভ্রম ও স্নেহ-ভালবাসার পরিবেশ পরিলক্ষিত হয় না৷ বরং বিভিন্ন কারণে এই পবিত্র সম্পর্কগুলি কলুষিত৷ শিক্ষক নিগ্রহ, ছাত্র-ছাত্রা নিপীড়ন, রাজনৈতিক দলাদলি, মারামারি, রক্তপাত ইত্যাদি অবাঞ্ছিত ঘটনাগুলি শিক্ষাঙ্গনের নিত্যসঙ্গী ও প্রায়ই সংবাদ শিরোনামে প্রকাশিত৷ বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় নীতিশিক্ষা ও চরিত্র নির্মাণের বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেওয়ায় ছাত্র-ছাত্রারা পুস্তকের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ডিগ্রি, ডিপ্লোমা অর্জন করলেও প্রকৃত মানবিক গুণগুলি অধিগত করতে সক্ষম হয় না৷ সাহিত্য-সংসৃকতির ক্ষেত্রেও মানবিক সংবেদনশীলতা ও সুপ্রবৃত্তিগুলির ওপর গুরুত্ব আরোপ না করে চটুল ও উত্তেজক বিষয়বস্তুকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে৷ এর পরিণামে উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরী, যুবক-যূবতীদের মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ, ঈর্ষা, যৌনতা, অসহনশীলতা ইত্যাদি কু-প্রবৃত্তিগুলির প্রাদুর্ভাব ঘটছে যার প্রভাবে সামাজিক পরিবেশ বিনষ্টির দিকে এগিয়ে চলেছে৷ সমাজে সার্বিকভাবে অবক্ষয় নেমে আসছে ও মানুষের মধ্যে সুকোমল বৃত্তি যেমন স্নেহ-মমতা-প্রেম-প্রীতি, উদারতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ পিতা-মাতা-পুত্র-কন্যা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন ইত্যাদি পবিত্র ও চিরায়ত সম্পর্কগুলি ক্রমশঃ ক্ষীয়মান অবস্থায় পৌঁছেছে৷ তাই মাঝেমধ্যেই পারিবারিক হিংসা, প্রিয়জন খুন-জখম, আত্মীয়-বন্ধুদের মধ্যে রেষারেষি, রক্তারক্তি ও সম্পর্কে অবনতির ঘটনা ঘটে৷

সামাজিক সম্পর্কে ভাঙন ধরার আর একটি কারণ রাজনৈতিক দূষণ৷ একটা সময়ে নীতিনিষ্ঠ মানুষেরা রাজনীতির জগতে বিচরণ করতেন৷ তাঁদের লক্ষ্যই ছিল মানুষের সেবা ও কল্যাণ সাধন আর এই উদ্দেশ্যে ওইসব রাজনীতিকগণ নিজেদের সর্বস্ব ত্যাগ করতেও পিছপা হতেন না৷ তখন রাজনীতি ছিল একটি নেশার মত৷ কিন্তু পরবর্তীকালে এই রাজনীতির নেশাটি পেশায় পরিবর্তিত হয়ে গেল ও অর্থোপার্জনের মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হ’ল৷ দেশ, রাজ্য, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েতের বিভিন্ন স্তরে রাজনৈতিক ক্ষমতা, সরকারী পদ ও কর্তৃত্বের সাহায্যে অর্থ, জমি-জমা করায়ত্ত করার পথ সুগম হয়ে উঠল৷ ঠিক এই কারণেই শুরু হ’ল সমাজের সর্বক্ষেত্রে রাজনীতির অনুপ্রবেশ৷ দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে অনৈতিক কাজকর্মের বাড়বাড়ন্ত শুরু হ’ল৷ দলগত পরিচিতি ছাড়া আর অন্য কোন পরিচয়ের গুরুত্ব গেল কমে৷ ফলে পরিবার ও সমাজে দলীয় মেরুকরণের দ্বারা অভিনব সম্পর্কের বিস্তার ঘটল৷ তবে মানুষের লোভ সর্বগ্রাসী আর এই লোভের বশবর্তী হয়েই দল থেকে উপদল ও শেষ পর্যন্ত ব্যষ্টিগত স্বার্থই মুখ্য উদ্দেশ্যরূপে প্রতিষ্ঠিত হ’ল৷ হীন স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে দলীয় কোন্দল, হানাহানি, সংঘাত চলতে থাকল৷ এর সঙ্গে সঙ্গে সমাজে ধর্ম-জাত-পাত গোষ্ঠীগত ভেদ-বিভেদ বিদ্বেষ অবিশ্বাস ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেতে লাগল৷ এইভাবে ক্রমাগত কায়েমী স্বার্থের বিষ-বাষ্পে সামাজিক পরিবেশ অত্যন্ত বিষাক্ত ও অসহিষ্ণুতাপূর্ণ হয়ে চলেছে৷ মানবিক সংবেদনশীলতা উদ্বায়ী পদার্থের মত হাওয়ায় মিশে গেছে৷

ধর্মের ক্ষেত্রেও মানুষ নানাবিধ কুসংস্কার, ভাবজড়তা ও ভাঁওতাবাজীর শিকার৷ প্রকৃত ধর্মকে ভুলে গিয়ে কিছু উপধর্ম, আচার-অনুষ্ঠান, মনগড়া ও পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা-অর্চনা নিয়েই এক শ্রেণীর স্বার্থবাদী মানুষ সমাজের বৃহদংশকে ব্যাপৃত রেখেছে৷ ধর্মের আড়ালে এক ধরণের শোষণ আজও রমরমিয়ে চলেছে৷ শুধু তাই নয়, ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে সমাজের মধ্যে বিভাজন ও মেরুকরণ সংঘটিত করে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার চক্রান্ত সমানে চলেছে৷ এর ফলে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মনে বিদ্বেষ, অবিশ্বাস ও অসহিষ্ণুতার বীজ বপন করা হচ্ছে৷ বিচার করে দেখলে আমরা বুঝতে পারি যে, প্রকৃত অর্থে সব মানুষের ধর্মই এক৷ আগুনের ধর্ম যেমন পুড়িয়ে দেওয়া, জলের ধর্ম ভিজিয়ে দেওয়া, ঠিক তেমনি মানুষের ধর্ম আধ্যাত্মিকতার পথে মনকে বিস্তৃত করে বৃহৎ ভূমা সত্ত্বায় মিশে যাওয়া৷ এটাই প্রকৃত মানবধর্ম আর এই ধর্ম মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নয়, মিলন ও মৈত্রীর পথ প্রশস্ত করে৷

সত্য অনুধাবন করলে বোঝা যায় যে, মানব-সমাজের এই পরিস্থিতির জন্যে দায়ী মুনাফা ভিত্তিক বৈশ্যতান্ত্রিক অর্থনীতি ও মানুষের সীমাহীন লোভ৷ এই লোভ বা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাই পৃথিবীর সমগ্র সম্পদকে নিজের কুক্ষিগত করতে চায়---যার পরিণামে মানুষ যেন-তেন প্রকারে অর্থ সংগ্রহ করে তার মুনাফার অংশ বাড়িয়ে নিতে চায়৷ মানুষের চাহিদা অনন্ত কিন্তু পৃথিবীর সম্পদ সীমিত৷ সকলেই এই সম্পদকে হস্তগত করতে চাওয়ার ফলে শুরু হয় স্বার্থ সংঘাত, হানাহানি, রেষারেষি, হিংসা, ঘৃণা, অসহিষ্ণুতা ও অনৈতিক পন্থাপদ্ধতি অবলম্বন৷ সুতরাং এই অবস্থার জন্যে মূলতঃ দায়ী মানুষের মন৷ ভৌতিক সম্পদের দিকে মন সর্বদাই ‘আরো চাই, আরো চাই’ ভাবনা নিয়ে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলে৷ এই মনকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে কখনই সন্তোষ আসবে না৷ আর সন্তোষ না এলে মনও শান্ত হবে না---পাওয়ার নেশায় সে পাগল হয়ে যাবে৷ তাই শেষ পর্যন্ত সদাচঞ্চল মনের গতিকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সীমিত ভৌতিক জগত থেকে নিবৃত্ত করে অসীম-অনন্ত আধ্যাত্মিক জগতের দিকে পরিচালিত করতে হবে৷ অধ্যাত্ম জগতের বিশাল ব্যাপ্তিতে অবগাহন করে মন শান্ত ও তৃপ্ত হলে মানুষের লোভ ও লালসা নিয়ন্ত্রিত হবে৷ যে অর্থের মোহে মানুষ পৃথিবীতে অনর্থের প্লাবন চালিয়েছে, সেই অর্থলোভ নিবৃত্ত হলে অনৈতিক কাজকর্মেরও প্রয়োজন থাকবে না, পৃথিবীও ক্রমশ দূষণ ও ভেজাল মুক্ত হয়ে উঠবে৷ তাই মানব সমাজকে বাঁচাতে হলে প্রত্যেকটি মানুষকে আধ্যাত্মিকতার পথে চলতেই হবে৷ আধ্যাত্মিক চেতনা জাগ্রত হলেই মানুষ নীতিবাদে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে ও সমস্ত রকম অনৈতিক কর্ম পরিহার করে সত্য ও সুন্দরের পথে অগ্রসর হয়ে সমগ্র সমাজের সেবায় ও সৃষ্ট জগতের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করবে৷ একমাত্র তখনই দূষণমুক্ত, শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে,যেখানে মানুষ, পশু, পক্ষী, উদ্ভিদ, জড় সকলেই নির্বিঘ্নে নিরাপদে বসবাস করবে ও সার্থক নব্যমানবতাবাদের প্রতিষ্ঠা হবে৷