দলবাজি  আর মিথ্যাচারিতা বন্ধ হোক, যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা যেন দৃঢ় হয়

লেখক
মুসাফির

সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে জন্মভূমি ভাগ করে  চুক্তিভিত্তিক নিছক রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করাতে কোটি কোটি হতভাগ্য  সাধারণ মানুষের যে কতটা লাভ ও কতটা ক্ষতি হয়েছে তার বিচার ইতিহাস করছে ন্যায় ও যুক্তিরভিত্তিতে৷

লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে সাম্প্রদায়িকতার হিংস্র আক্রমণে৷ এর নজির হলো লক্ষ লক্ষ হিন্দু উদ্বাস্তুদের জন্মভূমি ত্যাগ করে প্রাণের দায়ে ভারতে আগমন৷ তাদের অনেকেই  আজও ইহুদি  জনগোষ্ঠীর মতোই পথের ভিখারী৷ ‘বাঙালী হিন্দুরা উত্তর-পূর্বভারতে, পশ্চিমবঙ্গে ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্য দিন কাটাচ্ছে৷ স্বাধীনতা আন্দোলনে যে বাঙালী প্রাণ দিয়েছে  সর্র্বধিক তারাই আজ রিক্ত নিঃস্ব !

 রাজসুখ ভোগ করছে তারাই যারা স্বাধীনতা লাভের পর দেশ নেতা ও নেত্রীর পদে থেকে বিভিন্ন  রাজনৈতিক দল গড়ে  গণতন্ত্রের নামাবলি গায়ে দিয়ে নির্র্বচনের প্রহসনের মাধ্যমে কেন্দ্র ও রাজ্যে শাসকদের ভূমিকায় এসে বংশপরম্পরা গদীতে আসীন হয়ে আছেন৷ তারাই এক নম্বরের নাগরিক৷ বাকিরা  দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক৷  রাজনীতি কাকে বলে গরিব ভারতের আপামর  জনসাধারণ কিছুই  জানতোনা৷ প্রথম দিকে  শিক্ষার আলোকই লোকে পায়নি৷ প্রথম দিকে স্বাধীনতা লাভের আনন্দে  প্রায় সকলে এক  আনাগত উজ্বল  ভবিষ্যতের আশায় মসগুল ছিল৷  কিন্তু ধীরে ধীরে  উপলব্ধি করছে সবটাই যেন কেমন কেমন৷ গরীবরা যেই তিমিরে সেই তিমিরে৷  ধণতান্ত্রিক  এই সমাজ ব্যবস্থায় ধনী আরো ধনী আর গরিব আরো গরিব হয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে৷ তাদের দিনান্তে পান্তাও জোটে না৷ দেখা গেল গত ৭০ বছরের মধ্যে সেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অঙ্গুলি হেলনে ব্রিটিশের তৈরী পাকিস্তানে চার গোঁড়া সাম্প্রদায়িক শক্তি তিন তিন বার ভারত আক্রমণ করল৷ আর প্রতিবেশী চীন ভারতের পঞ্চশীল নীতিকে  বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ভারত আক্রমণ করল ৷ এদেশের গোঁড়া কমিউনিষ্ট দলতো নির্লজ্জের মতো চীনকে সমর্থন জানিয়ে ভারতকেই দোষারোপ করে বসলো আক্রমণকারী হিসাবে৷ এই কয়েকদিন আগেও চীনের হুমকী শুণেও এই মাকর্সবাদীরা সেই নীতি নিয়েই পড়ে আছে৷ তারা বলছে সিকিমে যে চীনের সঙ্গে বিরোধ তারজন্য নাকি ভারতই দায়ী৷ এই তো এদেশের মীরজাফর দলনীতি৷ বিপদের দিনেও এরা এক হতে পারে না৷ দার্জিলিংয়ে নেপালীরা কমিউনিষ্ট শাসকদের নোংরা দলনীতির জন্য পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের সর্বনাশ সাধনে হুংকার ছাড়ছে৷ দার্জিলিংয়ে নেপালীরা নেপালের মাওবাদীদের ইন্ধনে চরম অরাজকতা করে চলেছে৷ ভারতকে সহ্য করতে হচ্ছে৷ ঘিসিং ও গুরুং দু’জনেই আন্দোলনের নামে সরকারী অনুদান আতত্মসাৎ করে জনগণকে বঞ্চিত করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে পাহাড়ে আগুনে সরকারী বেসরকারী সম্পত্তি ধবংস করেছে৷ নীরব দর্শক কেন্দ্র ও বিরোধীদলগুলি অনেকেই৷ এই কি দেশের গণতন্ত্র? চীন ওই নেপালীদের ইন্ধন দিচ্ছে পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে৷ রাজ্যের ও কেন্দ্রের  বিজেপি দল যেন নীরব দর্শক৷ একে তো দেশের শাসন বলে না৷ এটা আত্মঘাতী দলবাজী ছাড়া কিছুই নয়৷ এমন শাসন তো দেশবাসী চায় নি৷ এ কেমন স্বাধীন দেশের শাসন ব্যবস্থা ?

নেপালীরা এদেশের বুকে স্বাধীন গোর্র্খল্যান্ড দাবী করে কোন যুক্তিতে আর কোন সাহসে? ভারতীয় সংবিধানতো সে অধিকার দেয়নি৷ একথা কি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ভুলে গেছেন? দেখা যাচ্ছে অনেক লেখক পত্র পত্রিকায় নানাভাবে লিখছেন, এদের নাকি, স্বায়ত্তশাসন দেওয়া কিছুটা দরকার৷ কেন তাঁরা কি ভুলে গেছেন যে ভারতে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত শাসন ব্যবস্থা চালু আছে৷ যেখানে তো গ্রামস্তর পর্য্যন্ত নাগরিকগণের স্বায়ত্বশাসনের -অধিকার রয়েছে৷ তবু কেন স্বায়ত্ব শাসনের গোর্র্খল্যান্ডের অসাংবিধানিক দাবী৷ এই ধরণের দাবীকে তো  কেন্দ্র ও রাজ্যসরকারকে কঠোরভাবে রুখে দেওয়া দরকার৷ তাতো করা হচ্ছে না৷ এর যে মারাত্মক কুফল সেটা কি শুধু পশ্চিমবঙ্গ ভোগ করবে? এতে কি ভারতের সার্বভৌমিক আঘাত করবে না? কি ধরণের শাসন এদেশে চলছে৷ এটা ভাবাই যায় না৷কেন্দ্রের নোতুন বিজেপি সরকার তো যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থাকে একেবারে গোল্লায় পাঠাচ্ছেন নিছক নোংরা দলবাজি করে৷

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে  বাঙালী জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি আত্মদান করেছে৷ বাংলার ত্যাগের সীমা নেই কিন্তু প্রথম  থেকে হিন্দী সাম্রাজ্যবাদী কেন্দ্রের শাসকগণ অদ্যাবধি পশ্চিমবঙ্গর প্রতি সবদিক থেকে  যেভাবে বিমাতৃসুলভ আচরণ করে চলেছেন সেটা যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার দারুণ অমর্র্যদা ও অসম্মান বলেই মনে হয়৷ পরিশেষে বলি,কেন্দ্রের সরকার দার্জিলিংয়ের নেপালীদের অসাংবিধানিক  কর্মকাণ্ড কঠোর হাতে বন্ধ করুন  এটাই সারা পশ্চিমবাঙলার জনগণের দাবী ও একান্ত অনুরোধ৷

অনেকেই আশা করেছিল, যে নতুন সরকার দেশকে নতুন পথ দেখাবেন কিন্তু অদ্যাবধি যা ঘটে চলেছে সেটা  আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক দিক থেকে , মোদ্দা কথা সকল দিক থেকে চরম ব্যর্থতার এক নজিরহীন কলঙ্কিত ঘটনা৷ দার্জিলিংয়ের বুকে যে কয়েক শো কোটি টাকার সম্পদ এর ধবংস হলো তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে? লোকসভার অধিবেশন বসেছে সেখানে ঐক্যবদ্ধভাবে শাসক ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিগণ ঐক্যমতে আসুন৷ কী করে ভারতের বুকে এই সর্বনাশকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়৷  দেশের কল্যাণই যেন সকলের লক্ষ্য হয়৷বেকার সমস্যায় দেশ ধুঁকছে তাই সারা ভারতের বুকে  কৃষিক্ষেত্রে ও  কৃষি সহায়ক শিল্পে ব্লকস্তর থেকে সমবায়ের মাধ্যমে যেন ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে তৎপর হন৷ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ার দিকে সরকার নজর দেন৷ নাগরিকগণ কারোর দয়া দাক্ষ্যিণ্যের প্রত্যাশা করেন না৷  এটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র৷ মর্র্যদার সঙ্গে যেন প্রতিটি দেশবাসী বাঁচতে পারেন৷ শোষণ ও তোষণ বন্ধ হোক৷