ইষ্ট ও আদর্শের মধ্যে কী সম্পর্ক? ইষ্ট ব্যতিরেকে মানুষ নিজেকে আদর্শে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না৷ তেমনই আদর্শ ছাড়া ইষ্টে প্রতিষ্ঠিত হওয়া অসম্ভব৷ দৃষ্টান্ত দিয়ে ৰলতে গেলে নীচের উদাহরণটি উল্লেখ করা যেতে পারে৷ প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগে, কোন দুই দেশের মধ্যে লড়াই চলছিল যাদের ধর্মমত (ৰৌদ্ধ) একই ছিল৷ সৈনিকেরা যখন যুদ্ধে যেত তখন তাদের মায়েরা নিজ নিজ সন্তানদের জীবনের সুরক্ষার জন্যে ভগবান ৰুদ্ধের কাছে প্রার্থনা করত৷ ভগবান ৰুদ্ধ কী করৰেন? এদের ৰাঁচাৰেন না ওদের ৰাঁচাৰেন? দুই পক্ষের একই ইষ্ট, কিন্তু দুই পক্ষই তাদের আদর্শকে একদম ভুলে গিয়েছে৷ যদি তারা আদর্শে প্রতিষ্ঠিত থাকত তবে তারা যুদ্ধ করতই না৷ সুতরাং মানুষ তার আদর্শ ও ‘ইষ্ট’ দুই’কেই অনুসরণ করৰে৷ মানুষকে আদর্শবাদীও হতে হৰে, ‘ইষ্ট’কেও গ্রহণ করতে হৰে৷
‘ইষ্ট’ আমাদের আদর্শের বিষয়ে ৰলে৷ মানুষ তার আদর্শকে দেখে আর স্মরণ করে যে আদর্শ পেয়েছে ইষ্ট’র কাছ থেকে৷ মানুষ ‘ইষ্ট’কে স্মরণ করৰে আর তার আদর্শকে অনুসরণ করৰে৷ যদি কেউ ৰলে আমি আদর্শকে মানি কিন্তু আমার ‘ইষ্ট’ নেই, তবে সে সত্যবাদী নয়৷ আদর্শের পথে চলার জন্যে যে হিম্মত ও সাহস চাই তা না থাকলে সে আদর্শ নিষ্ঠ কী ভাবে হৰে? কেউ ৰলে আমি চুরি করি না, মিথ্যা ৰলি না, কারোর ক্ষতি করি না, এজন্যে আমি ঠিক আছি৷ কিন্তু আসলে ঠিক নেই৷ ‘আমি করি না’ এটা একটা নির্বৈয়ক্তিক ভাব৷ সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়, কেননা তার ইষ্ট নেই, এই জন্যে সে যা ৰলছে তা কিছু শব্দ মাত্র৷ ওর জীবনে সত্যতা নেই৷ সে কখনও পাক্কা মানুষ হতে পারে না৷
যাদের জীবনে কোন সত্য নেই তারা জীবনে কখনই প্রগতি করতে পারে না, প্রকৃত মানুষ হতে পারৰে না৷ ধর, কোন মানুষের জীবনে কোন আদর্শ নেই, আর মুহূর্তের জন্যে সে তার ‘ইষ্ট’কেও ভুলে গেল, তবে তার অধঃপতন হৰেই৷ তাই বিজ্ঞ মানুষেরা সব সময় তার আদর্শকে অনুসরণ করৰে, ও আরও গুরুত্বপূর্ণ সে তার ‘ইষ্ট’কে অনুসরণ করৰে৷ যারা তাদের ‘ইষ্ট’কে অনুসরণ করে, তারা জানে ঈশ্বরের প্রতি তাদের যে পরিমাণ ভালবাসা আছে, তাদের প্রতি ঈশ্বরের ভালবাসার পরিমাণ তার দ্বিগুণ৷ তাদের জন্যে ঈশ্বর অত্যন্ত মহান, ঈশ্বরের জন্যেও তারা ক্ষুদ্র নয়৷ একটা গানে ভক্ত গেয়েছেন, ‘‘হে ভগবান, আমি অতি নগণ্য, তুমি মহান’’৷ এটা ৰলা উচিত নয়৷ একজন পিতার যদি পঞ্চাশটা বিষয়ে এম এ ডিগ্রী থাকে, আর তার তিন চার বছর বয়সের সন্তান যদি এ, বি, সি না জানে, তাহলে কি সন্তানটিকে ছোট আর তার পিতাকে খুব ৰড় ৰলে ভাবা হৰে? না, এটা একটা পারিবারিক সম্পর্ক৷ ছোট ৰড়র কোন প্রশ্ণ নেই৷ আছে শুধু মাত্র পিতা-পুত্রের সম্পর্ক৷ যেখানে পিতা-পুত্রের সম্পর্ক সেখানে ছোট ৰড়র প্রশ্ণ কোথায়?
ঈশ্বর প্রিয়তম৷ ঈশ্বরকে ৰাৰা ৰলে ডাকা হয়৷ লৌকিক সংস্কৃত ‘‘বপ্র’’ শব্দ থেকে ৰাৰা শব্দ এসেছে৷ এর অর্থ, ভালবাসার জন, প্রিয়জন৷ ‘‘বপ্র’’ থেকে ‘‘বপ্পা’’, তারপর হয়েছে ৰাৰা৷ ‘‘বপ্র’’ থেকে ‘‘ৰাৰা’’ হতে তিন বা চার হাজার বছর লেগে গেছে৷ জীবের জন্যে, ঈশ্বর হলেন ভালবাসার জন৷ এজন্যে জীব ৰলৰে ‘ৰাৰানাম কেবলম’৷ তেমনই পরমপুরুষের কাছে জীব ততটাই প্রিয়, ৰোধ করি দ্বিগুণ প্রিয়৷ সেইরকম ঈশ্বরের জন্যেও জীব হল ৰাৰা৷ যখন মানুষ ৰাৰানাম কেবলম গাইৰে, তখন ঈশ্বরও মনে মনে ৰাৰানাম কেবলম গাইৰেন৷ ঈশ্বরের আছে হাজার হাজার ৰাৰা৷ এই হল ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক৷ (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তির ইষ্ট ও আদর্শ প্রবচনের অংশ)