কান্ত কবি রজনীকান্ত

লেখক
প্রণবকান্তি  দাশগুপ্ত

১৯০৫ সাল৷ ভারতের বড় লাট তখন লর্ড কার্জন৷ তিনি বাঙলাকে দুইভাগে ভাগ করলেন৷ ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও আসামকে একটি নতুন প্রদেশে পরিণত করলেন৷ উক্ত প্রদেশের নাম হ’ল পূর্ববঙ্গ ও আসাম৷ তারজন্য আলাদা শাসনকর্তা নিযুক্ত হ’ল৷ সেই সময় বিহার ও উড়িষ্যা বাঙলার শাসনকর্তার দ্বারা শাসিত হতো৷ সেই অজুহাতে শাসন কার্যে নাকি নানারকম অসুবিধা হতো৷ তাতে শাসন কার্যের সুবিধার্থে বাঙলাকে ভাগ করা হ’ল৷ তখন বাঙলার জাতীয়তাবাদী নেতারা এই বিচ্ছেদের বিরুদ্ধে আপত্তি তোলেন৷ সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করলেন প্রবল আন্দোলন৷ বড়লাট যখন বললেন'Partition of Bengal is a settled fact'.’ উত্তরে সুরেন্দ্রনাথ বললেন, 'I will unsettled the settled fact.’ সারাদেশ জুড়ে দেখা দিল প্রবল উত্তেজনা৷ শুরু হ’ল অত্যাচার নির্যাতন আর নির্বিচার ধরপাকড়৷ তথাপি জাতীয় চেতনায় সমগ্র দেশ উত্তাল৷

প্রত্যেক দেশবাসী বিদেশী পণ্য বর্জন করতে লাগলো৷ কোলকাতার স্কুলের ছেলে মেয়েরা মিছিল বের করে গান গাই্‌তে গাইতে চললো৷

‘‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়

মাথায় তুলে নেরে ভাই

দীন-দুঃখিনী মা-যে তোদের

তার বেশি আর সাধ্য নাই৷

কচি কচি ছেলে মেয়েদের মিষ্টি গলার করুণ সুরে আকাশ বাতাস মুহ্যমান৷ মিছিলের পুরোভাগে চলেছেন এক খ্যাতনামা কবি৷ তাঁরই লেখা  এই গান ৷ সেদিন স্বরচিত স্বদেশী গান শুনে তিনি আবেগে কেঁদে ফেলেছিলেন৷

এই কবিই হলেন কান্তকবি রজনীকান্ত সেন৷ পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার ভাঙাবাড়ি নামক গ্রামে ১৮৬৫ খৃষ্টাব্দের ২৪ জুলাই সম্ভ্রান্ত বৈদ্যবংশে তাঁর জন্ম হয়৷ পিতার নাম গুরুপ্রসাদ সেন, মাতা মনোমোহিনী দেবী৷ ১৮৯১ সালে বি.এল পাশ করে রাজশাহী কোর্টে ওকালতি শুরু করেন৷ বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় তাঁর রচিত গান দেশবাসীর মনে প্রচুর উদ্দীপনা সঞ্চার করেছিল৷ তাঁর মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই’ অতুলনীয় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল৷ ‘বাণী’, ‘কল্যাণী’ ইত্যাদি তাঁর কাব্য ও সঙ্গীত গ্রন্থ৷ তিনি ‘কান্তকবি’ নামেই লোক সমাজে সমধিক প্রসিদ্ধ ছিলেন৷