কেন্দ্রীয় সরকার ১লা ফেব্রুয়ারী লোকসভায় ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরের জন্যে আয়-ব্যয়মাতৃকা (বাজেট) পেশ করেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি৷ অর্থমন্ত্রী ভারতের কৃষি, গ্রামীণ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোন্নয়নের লক্ষ্যে এই াজেট পেশ করেছেন৷ গ্রামীণ ভারতের আর্থিক অবস্থা যে শোচনীয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ এই আর্থিক প্রস্তাবে কৃষির উন্নয়নের তেমন কোনও দিক্দর্শন নেই৷ তাই কর্ষকরা এতে আশ্বস্ত হতে পারেন নি৷ তাছাড়া বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকারের কর নীতি নির্ধারণ ব্যাপারে শহরের মধ্যবিত্তেরাও হতাশ৷ সরকার দেশের ৮ শতাংশ আর্থিক উন্নয়নের দাবী করছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের মতে এবারের বাজটে কৃষিমুখী ঘাটতি বাজেট৷ কর্ষকরা কিন্তু এতে খুশী হতে পারেন নি৷ আর মধ্যবিত্ততরাও হতাশায় কাতর৷ তারা তো দৈনন্দিন জীবনে কোনও দিকেই আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না৷ চরম আর্থিক সংকটে ও দ্রব্যমূল বৃদ্ধিতে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয়৷ ব্যষ্টিগত আয়কর কাঠামোর কোনও পরিবর্তন হয়নি৷ আগের বছরের মতই আছে৷ এই বাজেটে দাম বেড়েছে গাড়ী, মোটরবাইক, বিদেশী মোবাইল ফোন, টিভির যন্ত্রাংশ, ফল ও শাকসবজির রস, স্মার্ট ওয়াচ, হীরে, ইমিটেশন জুয়েলারী, টয়লেটারিস পারফিউম, সোণা,রূপো, রান্নার তেল, শেভিং সরঞ্জাম, ফার্নিচার, খেলার সরঞ্জাম, ভেজিটেবল অয়েল, কটন সীড অয়েল,গ্রাউণ্ন্ডনাট অয়েল, রিফাইন্ড ভেজিটেবল অয়েল ইত্যাদি৷ দাম কমছে---ইট ও টাইলস্, মেডিকেল সরঞ্জাম, কাজুবাদাম, সোলার টেম্পার গ্লাস, সোলার সেল ইত্যাদির৷
একদিকে বাজারে দর সব জিনিসের দাম ঊধর্বমুখী৷ তার ওপর এ বছরের বাজেটে রান্নার তেলের দাম বাড়িয়ে আরও একটি নতুন সমস্যার সৃষ্টি করল সরকার৷ এর ফলে আম জনতার মাথায় হাত পড়েছে৷
মোদিজী এই বাজেটকে উন্নয়নের বাজেট হিসাবে ঘোষণা করেছেন৷ দেখা যাক আগামী আর্থিক বছরে এদেশের জনগণের কতটা আর্থিক উন্নতি ঘটতে পারে মোদীজির তৈরী এই বাজেটে৷
মোদিজীর সরকার যে গরীবের নয় সেটা বোঝা গেল তার বাাজটে রাষ্ট্রপতির মাসোহারা বাড়িয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা, উপরাষ্ট্রপতির চার লক্ষ ও রাজ্যপালের সাড়ে তিন লক্ষ টাকা করা হ’ল৷ গরীব দেশের অনেকেরই গড়ে দৈনিক আয় ২০ টাকারও কম৷ বাজেটে সাংসদদের বেতন বৃদ্ধি করা হবে মুদ্রাস্ফীতির হারে৷ এর জন্যে আইন করা হবে৷ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে দেশ শাসিত হয়৷ কেন্দ্রের ঘোষিত ডিএ অনুসারে অনেক রাজ্যই আয় কম বলে তাদের কর্মচারীদের ডি এ দিতে পারে না৷ কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে আর্থিক সাহায্যর পরিমাণ সেই অনুপাতে দেবার ব্যবস্থা তো করেন না৷ কিন্তু রাজ্যগুলি থেকে কেন্দ্র প্রচুর অর্থ ট্যাক্স হিসেবে আয় করে নিয়ে যায়৷ ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে জনগণ কেন্দ্রের ও রাজ্যের বাজেটের উল্লিখিত কর ভার বহন করে রক্তশূন্য হয়ে পড়ছে৷ ভারতের মত উন্নয়নশীল দেশে সরকারী কর্মচারী ও প্রশাসনের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত আছেন তাঁদের নিছক বেতন যোগাতেই গরীব দেশ রক্তশূন্য হয়ে পড়ছে৷ কেন্দ্র ও রাজ্যসরকারগুলিকে দেখা যায় সরকারের আয়ের উৎস বাড়াবার দিকে কোনও নজর নেই৷ শুধু ট্যাক্স আদায় করে হতভাগ্য জনগণকে শোষণ করে ছাড়ছে৷
তাই এই ধরণের মানসিকতাকে জনকল্যাণমূলক বলা যায় না৷ তাই বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের যে আর্থিক পরিস্থিতি তাতে ব্যয়সংকোচ করাটা কাম্য৷ ত্যাগ ও তিতিক্ষার মধ্যে দিয়ে এগোতে হবে দেশকে অগ্রগতির পথে নিয়ে যেতে৷ তাই এক্ষেত্রে শাসকগোষ্ঠীর লোকদের বেতন বৃদ্ধি করাটা অত্যন্ত বেমানান৷
পশ্চিমবাঙলার মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বাজেটকে ‘সুপারফ্লপ’, ‘হোপলেস’ বলে উল্লেখ করেছেন৷ এন ডি এ-র শরিক দল টিডিপি ও শিবসেনাকেও এই বাজেট হতাশ করেছে৷ শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউথস্ বলেন ‘জনগণের কল্যাণের পক্ষ্যেই বাজেট হওয়া উচিত৷ ভোটের জন্যে নয়৷’
রেলের জন্যে বাজেটে ১৩ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করা হয়েচে৷ চরম মুদ্রাস্ফীতিতে রেলের এতে কোনও উন্নয়ন হবে না৷ তাছাড়া রেল বাজেটে পশ্চিম বাঙলা পুরোপুরি বঞ্চিত৷ পশ্চিম বাঙলা সরকার কেন্দ্রের শাসক দলের বিরোধী বলেই যে এটা করা হয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই৷ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের এ হেন সংকীর্ণ মনোভাব মোটেই কাম্য নয়৷
- Log in to post comments