কর্তব্য পরায়ণ

লেখক
প্রণবকান্তি  দাশগুপ্ত

১৯৩০ সাল৷ ২৬শে জানুয়ারি৷ সমগ্র দেশে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের হিড়িক পড়ে গেলো৷ চারদিকে সাজসাজ রব৷ ভারতের সর্বপ্রথম সাধারণতন্ত্র দিবস পালনের বিপুল আয়োজনে মেতে উঠলো আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা নির্বিশেষে সমগ্র দেশবাসী৷

দেশবন্ধু পার্কের পতাকা উত্তোলনের উদ্যোক্তারা ঠিক করলেন, তাঁদের পতাকা উত্তোলনের জন্য কোলকাতা কর্র্পেরেশনের মেয়রকে নেমন্তন্ন করবেন৷ কিন্তু তাঁরা তখন জানতেন না যে, তিনি অসুস্থ---শয্যাশায়ী---রক্তের চাপে ভুগছেন বিশেষতঃ আগের দিনে ২৫শে জানুয়ারি পতাকা উত্তোলনে ব্যাপারে কর্র্পেরেশনে এক সভা আহুত হয়৷ সভায় মেয়র মশাই চিকিৎসক আত্মীয়স্বজন এবং শুভার্থীদের বাধা-নিষেধ সত্ত্বেও অসুস্থ অবস্থায় উপস্থিত হন৷ তাতে তাঁর শরীরের অবস্থা আরও খারাপ হয়৷

এমন অবস্থাতেই মেয়র মশাই আহুত হলেন দেশবন্ধু পার্কে৷ ২৬শে জানুয়ারী৷ ভোরবেলা মেয়র মশাই তাঁর স্ত্রীকে বললেন,  আমার যাবার ব্যবস্থা করো৷

নারী-সুলভ দুর্বলতার বশে স্ত্রী আঁৎকে উঠে বললেন তুমি কি পাগল হয়েছো? এ অবস্থাতে যাবে কি করে? ডাক্তারবাবু যে বিশষভাবে নিসেধ করে  গেছেন৷ মেয়র বললেন, ডাক্তারের নিষেধ মানার সময় এখন নয়৷ তুমি ব্যবস্থা করো৷

ব্যাপার শুনে ছুটে এলেন  হিতাকাঙ্ক্ষী বন্ধু-বান্ধব এবং চিকিৎসকরা৷

বন্ধুরা বললেন, এ অসুস্থ শরীরে তোমার কোনমতেই যাওয়া উচিৎ নয়৷

উত্তরে মেয়র মৃদু, হেসে বললেন, দেশ-সেবাটাকে কি তোমরা  শখের জিনিস মনে করো? খুশিমতো যখন হোক  করলেই হলো৷ দেশ যখনই ডাকবে দেশ সেবককে তখনই ছুটে যেতে হবে৷

চিকিৎসক বললেন, কিন্তু  এ অবস্থায় গেলে আপনার পরিণাম কি হতে পারে জানেন?

জানি৷ যথারীতি মৃদু হেসে  বললেন মেয়র, প্রাণবায়ু যে কোন মুহূর্তে শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে  পারে৷ তা যাক্‌৷ জাতীয় কর্তব্য সম্পন্ন করতে গিয়ে যদি আমাকে মরণ বরণ করতে হয়, তবে আমি তাতেও প্রস্তুত৷

এইভাবে মেয়র মশাই সকলের বাধা-নিষেধ উপেক্ষা করে মৃত্যুর ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ছুটে গেলেন দেশের ডাকে৷

যথাসময়ে দেশবন্ধু পার্কে উপস্থিত হতেই চারিদিক থেকে মুর্হূমুর্হূ সহস্র হস্তের করতালি মেয়রকে অভ্যর্থনা জানালো৷ তারপর তিনি তাঁর জাতীয় কর্তব্য যথারীতি সম্পন্ন করলেন৷

এই কর্তব্য পরায়ণ মেয়রটি কে জানো? যাঁরা নিজের সুখ  নিজের আরাম নিজের স্বার্থ ভুলে দেশের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ---এই মেয়র তাঁদেরই একজন৷ এর নাম যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত৷ যাকে তোমরা ‘দেশপ্রিয়’ বলে জানো৷ আগামী ২২শে ফেব্রুয়ারী এর শুভ জন্মদিন৷ সেদিন তোমরা এর দেশ সেবার আদর্শটি আপন জীবনে বরণ করো৷