অনেকের ধারণা, হালিশহরের আগের নাম ছিল হাবেলি শহর৷ ‘হাবেলিশহর’ নাম মুসলমান যুগের৷ ‘হাবেলিশহর’ নামের অপভ্রংশ হালিশহর৷ উর্দূভাষায় হাবেলী অর্থে দালান, অট্টালিকা বা প্রাসাদ বোঝায়৷ অট্টালিকা বহুল নগরী ছিল বলে ‘হালিশহর’ নাম৷
শ্রীচৈতন্য গয়াতে ঈশ্বরপুরীর কাছে মন্ত্র দীক্ষা নিয়ে ছিলেন৷ এই ঈশ্বরপুরীর জন্মস্থান হালিশহর৷ হালিশহরে ঈশ্বর পুরীর বাস্তুভিটাই ‘চৈতন্য ডোবা’ নামে খ্যাত৷ এই হালিশহরে শ্রীবাস পণ্ডিতও বসবাস করতেন৷ পদাবলী রচয়িতা বাসুদেব ঘোষ, কীর্ত্তনীয়া মাধব ও গোবিন্দনন্দও থাকতেন হালিশহরে৷ চৈতণ্যের সময় থেকেই হালিশহরে বৈষ্ণবধর্ম বিস্তার লাভ করে৷ ঈশ্বরপুরীর স্মৃতিমন্দির, ‘চৈতন্য ডোবা’, শ্রীবাসের আবাস, চৌধুরী পাড়ার শ্যাম রায়, ঠাকুর পাড়ার রাধাগোবিন্দ, মল্লিক বাড়ির মদনমোহন ইত্যাদি বৈষ্ণব দেবদেবী বৈষ্ণব ধর্ম চর্চার নিদর্শন৷ তার আগে এখানে জঙ্গলের মধ্যে ও শ্মশানে বামাচারী তন্ত্র সাধক কাপালিক ও নামপন্থী শৈব যোগীদের শক্তি সাধনার আস্থানা ছিল৷ পরবর্ত্তী অনেক শাক্তধর্মী, বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করেছিলেন৷
হালিশহরে যে এককালে শাক্তধর্ম প্রসার লাভ করেছিল জীর্ণ শিব মন্দিরগুলি আজো তার নির্দশনরূপে বিদ্যামান৷ অনেক মন্দিরে শিবলিঙ্গও প্রতিষ্ঠিত আছে৷ শিব ছাড়াও আরো অনেক শক্তি দেবীর পূজা হতো৷ যেমন, বালিঘাটার সিদ্ধেশ্বরী দেবী, অকিঞ্চন ব্রহ্মাচারী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত খাস বাটীর শ্যামা সুন্দরী, শ্মশান ঘাটের শ্মশানকালী ইত্যাদি৷ কার্ত্তিক গণেশের পূজাও এখানে হতো৷
এছাড়া লৌকিক দেবদেবীদের পূজার প্রচলনও ছিল৷ ঝাঁপান, চড়কপূজা, ব্রহ্মপূজা, শীতলাপূজা, পবন দেবের পূজা ইত্যাদি লৌকিক ধর্মানুষ্ঠান, মুসলমানযুগের আগে থেকেই শুরু হয়েছে৷ শাক্তধর্মের ঢেউ এসেছে তারপরে৷ তার ওপরে এসেছে বৈষ্ণবধর্মের বন্যা৷
১৯৫০ সালের আগে সাবর্ণ চৌধুরীদের আদিপুরুষ ‘পাঁচুশক্তি খান’ হাবেলি শহর পরগণার কর্তৃত্ব লাভ করেন৷ তিনি বিক্রমপুর থেকে বৈদ্যপরিবার, কোন্নগরের কায়স্থ পরিবার ইত্যাদি এনে ‘হালিশহর সমাজ’ প্রতিষ্ঠা করেন৷ তারপর থেকে অনেক পণ্ডিত বংশ এখানে বসবাস করতে শুরু করেন৷ আইন-ই আকবরীতে সরকার সাতগাঁ-র অন্তর্গত পরগণার মধ্যে ‘হাবেলীশহরের নাম পাওয়া যায়৷ যাইহোক, বহু প্রাচীন শহর এই হালিশহর৷ একাধারে শাক্তধর্মের পীঠস্থান ও বহু স্মৃতিবিজড়িত এই শহরে৷
- Log in to post comments