রাজনৈতিক গণতন্ত্রের ধোঁকাবাজি নয় অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা চাই
গত ৫-৬ ও ৭ জুলাই কলিকাতা ভিআইপি বাজারে আনন্দমার্গের কেন্দ্রীয় আশ্রমে একটি তিন দিবসীয় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ এই আলোচনা সভায় কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষক ছিলেন আচার্য সুধাক্ষরানন্দ অবধূত৷ এছাড়াও ছিলেন অবধূতিকা আনন্দ অভিষা আচার্যা ও আচার্য কৃষ্ণপ্রসুনানন্দ অবধূত৷
আচার্য সুধাক্ষরানন্দ প্রাউটের অর্থনৈতিক গণতন্ত্র প্রসঙ্গে আলোচনায় বলেন বর্তমান ভারতবর্ষে গণতন্ত্রের নামে যেটা চলছে সেটাকে রাজনৈতিক গণতন্ত্র বলা যায়৷ এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা একটি চোখ ধাঁধানো শোষণ মূলক ব্যবস্থা৷ ভারতীয় সংবিধান তিন শোষক গোষ্ঠী দ্বারা রচিত---ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী দেশীয় সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিপতিদের প্রতিনিধি শাসক দল৷ তাই এই সংবিধানের নীতি নির্দেশনাতে সুবিধাভোগীদের স্বার্থ রক্ষায় করা হয়েছে৷ কোটি কোটি সাধারণ মানুষ, হতদরিদ্র, অশিক্ষিত ও কুসংস্কারগোস্ত অসহায় মানুষগুলো শোষিত ও বঞ্চিত হতেই থাকে৷ শাসন ক্ষমতার অপব্যবহার করে নির্বাচনের নামে যা হয় সেটা একপ্রকার প্রহসন৷
তিনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ত্রুটিগুলি উল্লেখ করে বলেন প্রাপ্তবয়স্ক হলেই ভোটদানের অধিকার পাওয়ায় রাজনৈতিক সামাজিক অর্থনৈতিক বিষয়ে অসচেতন মানুষও কিছু না বুঝে ভোট দিয়ে থাকে৷ অথচ এই বিষয়গুলিতে সচেতন হলেও বয়সের কারণে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয় মানুষ৷ তাই নির্দিষ্ট বয়সসীমা কখনোই ভোটাধিকারের মাপকাঠি হতে পারে না৷ আচার্য সুধাক্ষরা নন্দ বলেন গণতন্ত্রকে সফল করতে হলে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অশিক্ষিত কুসংস্কারগ্রস্থ মানুষকে শিক্ষায় নৈতিকতায় ও সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সচেতনতায় প্রতিষ্ঠিত হতেই হবে৷ তিনি এই অসার রাজনৈতিক গণতন্ত্রকে পুতুল নাচের সঙ্গে তুলনা করে বলেন এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেশকে ধবংসের কিনারে নিয়ে যাচ্ছে, জনসাধারণকে চরম দুঃখ দুর্দশার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে৷
আচার্য সুধাক্ষরানন্দের মতে প্রাউটের দাবি মেনে এই অসার রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা খারিজ করে অর্থনৈতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা উচিত৷ প্রাউটের মতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সফল হবার একমাত্র পথ হল জনগণের হাতে আর্থিক ক্ষমতা তুলে দেওয়া৷ অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের সার্বজনীন লক্ষ্য হচ্ছে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে নূ্যনতম প্রয়োজন পূর্তির গ্যারান্টি দেওয়া৷ তিনি দেশের অর্থনীতিবিদদের যারা সত্যি কারের সর্বশ্রেণীর মানুষের কল্যাণ চান তাদের প্রাউট ও অর্থনৈতিক গণতন্ত্র বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আহ্বান জানান৷
তিনদিনের এই আলোচনা সভায় বৃহতের আকর্ষণ ও সাধনা, প্রমা, আন্তরিক শক্তির উৎস বিষয়ে আলোচনা হয়৷ এছাড়া প্রভাত ফেরী, কীর্ত্তন পরিক্রমা ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়৷ আচার্য সর্বজ্ঞানানন্দ অবধূত ও কলিকাতা ভুক্তির আনন্দমার্গী ভাইবোনদের সক্রিয় সহযোগিতায় আলোচনা সভা সফল হয়৷
শিলং সার্কেলের শিলচর ডায়সিসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় পাঁচ ছয় সাতই জুলাই হাইলাকান্দি আনন্দমার্গ স্কুল হয়৷ এখানেও উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলি আলোচনা হয়৷ এখানে মুখ্য প্রশিক্ষক ছিলেন আচার্য তথাগতানন্দ অবদূত৷ তিনি আন্তরিক শক্তির উৎস ও প্রমা বিষয়ের উপর প্রজ্ঞা সমৃদ্ধ আলোচনা করেন৷ এছাড়া আচার্য মন্ত্র সিদ্ধানন্দ অবধূত বৃহতের আকর্ষণ ও সাধনা, অর্থনৈতিক গণতন্ত্র বিষয়ের উপর আলোচনা করেন৷ আনন্দমার্গের দার্শনিক বিষয়ে আলোচনা ছাড়াও তিন দিনের সেমিনারে প্রত্যহ সকাল সন্ধ্যা কীর্ত্তন মিলিত সাধনা প্রভাত ফেরী হয়৷ ৫ই জুলাই সকালে অনুষ্ঠানের শুরু হয় তিন ঘন্টা অখন্ড বাবা নাম কেবলম কীর্তনের মাধ্যমে৷ সেমিনার সংগঠিত করার দায়িত্বে ছিলেন আচার্য চিরঞ্জয়ানন্দ অবধূত ও স্থানীয় ভুক্তির আনন্দমার্গী ভাই-বোনেরা৷